ক্রাইমর্বাতা রিপোট: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার অব্যাহত। রোগীতে ঠাসা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোর খালি স্থানে অতিরিক্ত বেডের (শয্যা) ব্যবস্থা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না রোগীর ঢল। বেড না পেয়ে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি এখন প্রতিদিনের চিত্র।
আর এ মুহূর্তে ডেঙ্গুজ্বরের বিস্তার শুধু আক্রান্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকে। দীর্ঘ হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর মিছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে আরও ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে তিন শিশুসহ প্রবাসী এক নারী রয়েছেন।
এ নিয়ে ছয় দিনে ২৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত এসব মৃত্যুর অধিকাংশই সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
তবে এ তালিকায় জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৩ জন। পাশাপাশি এ সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯৯২ জনে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৮ জন।
তবে বেসরকারি হিসাবে এই মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে শক সিনড্রম বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আরও ৫০টি শয্যা সংযুক্ত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুর সেরোটাইপ-৩ একটু বিপজ্জনক।
এর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এ ছাড়া অনেক রোগী অবহেলা করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়ায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।
পাশাপাশি সব হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও উন্নত নয়। তাছাড়া এবার আক্রান্তের সংখ্যা যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুসহ অন্তত ১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
এদের মধ্যে রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, দিনাজপুর, রংপুর, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং চাঁদপুরে একজন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তারা হলেন- মনোয়ারা বেগম (৭৫), আমজাদ মণ্ডল (৫২) ও হাবিবুর রহমান (২১)।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাছির উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে ঢামেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭ জনে।
মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে ঢামেকের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনোয়ারা বেগম। তার স্বামীর নাম আবদুল হাই।
তারা ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। মনোয়ারার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হাজীগঞ্জের আহমদপুরে। মনোয়ারার ছেলে মোশাররফ হোসেন জানান, তার মা এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।
৩ আগস্ট তাকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের ৬০১নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমজাদ মণ্ডল। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয়ের কেটুয়াধারা গ্রামে।
তার ছোট ভাই রাশেদ মণ্ডল জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে শুক্রবার তার ভাইকে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সোমবার রাতে ঢামেকে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়। একইদিন দুপুর পোনে ৩টায় ঢামেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমান (২১) নামে এক যুবক মারা যান। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায়।
তিনি ৩১ জুলাই থেকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
এছাড়া স্বামী-সন্তান নিয়ে দেশে বেড়াতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাতে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে মারা যান ইতালি প্রবাসী হাফসা লিপি (৩৪)। হাসপাতালের পরিচালক জসিমউদ্দিন খান জানান, ওই নারী চার দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আইসিইউতে থাকাবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। হাফসার স্বামী সরদার আবদুল সাত্তার তরুণ (৩৬) নিজেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
দুই সন্তান অলি (১২) ও আয়ানকে (৬) নিয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে দেশে এসে কলাবাগানে ওঠেন তারা। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন (৭) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আল মামুনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার দিন আগে জ্বর নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয় আল মামুন।
পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আল মামুন পরিবারের সঙ্গে সবুজবাগ মাদারটেক এলাকায় বসবাস করত।
এদিকে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। রবিউল ইসলাম (১৭) ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ গ্রামের নয়ন ইসলামের ছেলে।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজু খান (৪০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার বাড়ি হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে।
গত ৩ আগস্ট রাজু খান জ্বর ও সার্জিক্যাল সমস্যা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সোমবার ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহাবুবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজুর স্ত্রী লাইলী বেগম অভিযোগ করেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজুর অবস্থার অবনতি ঘটলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় কোনো সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর না করে হাসপাতালেই রাখে।
পরে সোমবার ভোররাতে তার মৃত্যু হয়।
রংপুর ব্যুরো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই দিনে মারা গেছে দুই শিশু। মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নাকাইহাট গ্রামের আশরাফুল ইসলামের মেয়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের মুখপাত্র ডা. সাইদুজ্জামান।
তিন দিন চিকিৎসাধীন থেকে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু ঘটে। এটিই রমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম কোনো রোগী। এছাড়া সোমবার বিকালে রংপুরের মিঠাপুকুরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিশামণি (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে।
সে উপজেলার কৃষ্ণপুর তেঁতুলবাড়ি গ্রামের তাহারুল ইসলামের মেয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করে গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল পাইকাড় দীলিপ জানান, ২ আগস্ট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় তিশা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেলে রোববার বিকালে তার মৃত্যু হয়।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে শারমিন আকতার (২১) নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন।
নিহত ওই গৃহবধূ ফতেপুর ইউনিয়নের ভাবানিপুর সৈয়দ কোম্পানির বাড়ির মো. লিটনের স্ত্রী। তিনি ২ পুত্র সন্তানের জননী। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে নেয়ার পথে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি : স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২,৩৪৮ জন ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে রাজধানীতে ১,২৭৮ জন এবং আটটি বিভাগে ১,০৬৪ জন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৯১২ জন।
এই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ হাজার ৯২১ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭,৯৬৮ জন। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। সরকারি এই তথ্য ঢাকার ১১টি সরকারি এবং ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা।
তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
ঢামেকে ৫০ আইসিইউ বেড সংযোজন : ডেঙ্গু আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা নিশ্চিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ৫০টি বেড বাড়ানো হচ্ছে।
দেশে সবচেয়ে বেশি রোগীর চাপ থাকা এ হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউতে ৬২টি বেড রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি নবজাতকদের জন্য সংরক্ষিত।
এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হঠাৎ করে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ঢামেক হাসপাতালে আইসিইউতে বেড বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আইসিইউ’র বেড বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সব বেড প্রস্তুত হয়ে যাবে।
অধিদফতরের সিদ্ধান্ত : এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, পরিচালক (এমআইএস) ডা. সমীর কান্তি সরকার, লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট) ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী প্রমুখ।
সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ৫০টি আইসিইউ বেড সংযোজনসহ ৫টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এগুলো হল ঈদের ছুটিতে যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন তাদের করণীয় বিষয়ক একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা বিটিআরসির সহযোগিতায় মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে জনগণের কাছে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
ঈদের ছুটিতে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের হেল্প ডেস্ক খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সভায়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ডেঙ্গু রোগীকে স্থানীয়ভাবে ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং ঈদের ছুটিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সার্বক্ষণিক সেবা চালু রাখতে প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করা।
চলতি মাসে ২৭ মৃত্যু : যুগান্তরের বিভিন্ন ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মাসেই (৬ দিন) রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে চলতি মাসে প্রথম ৬ দিনে ২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় উল্লিখিত ১০ জন ছাড়া বাকি ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন- সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নকুল দাশ (৪৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্কুলছাত্রী অথৈ সাহার (১১) মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে পাবনার পাঁচ মাস বয়সী শিশু নাইসা।
এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হকের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার।
বাগেরহাটের শরণখোলায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের সৌদি প্রবাসী ধলু মোল্লার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪২)-এর মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রিপন হাওলাদার (৩০)-এর মৃত্যু হয়।
৪ আগস্ট রোববার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) শাহাবুদ্দিন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (৫৪)।
একইদিন সকালে খুলনায় মো. মঞ্জুর শেখ (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র ও শনিবার মধ্যরাতে মর্জিনা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মাগুরার এক রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুরের মতলবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য লাভলী আক্তার (৪০) শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
৩ আগস্ট শনিবার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই সঙ্গে মা ও মেয়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়।
মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও মা নাদিরা বেগম (৪০) শুক্রবার রাতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেড় বছর বয়সী তাওহিদের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া কালকিনিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নাদিরা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ২ আগস্ট শুক্রবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মালিহা মাহফুজ (২৭) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ১ আগস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়। নওগাঁর আত্রাইয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আবদুল ওয়াহেদ (৭৫) নামে সাবেক এক প্রধান শিক্ষক, ভৈরবে হামজা (১২) নামে এক শিশু এবং টেকনাফে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবদুল মালেক (৩৩) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
বিএসএমএমইউ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন এবং পূর্বের ভর্তি রোগী ১০২ জন।
সবমিলিয়ে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৪৫ জন। গত ২৭ জুলাই থেকে ডেঙ্গু চিকিৎসা সেলে আক্রান্ত হয়ে ৪০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৫৫ জন। বর্তমানে মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড, ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল, কেবিন, আইসিইউ ও এসডিইউতে এসব রোগী ভর্তি আছেন।
বর্তমানে আইসিইউতে ১ জন এবং এইচডিইউতে ৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেড সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ উন্নীত করা হয়েছে। ডেঙ্গু সেলের মাধ্যমে ভর্তিকৃত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ, স্টেশনারিসহ চিকিৎসাসেবা, বেড ভাড়া এমনকি আইসিইউ এবং এইচডিইউ সেবাও বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও ডেঙ্গু সেলে আসা রোগীদের প্রাথমিকভাবে সিবিসি, এনএস১, আইজিএম, আইজিএম ও আইজিজি বিনামূল্যে করা হচ্ছে।
ঢাকার বাইরের চিত্র : ফরিদপুরের মধুখালী প্রতিনিধি জানান, সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই।
মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এলে তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো কিট হাসপাতালে না থাকায় পরীক্ষা করানো সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি, ঈদের আগেই পাব বলে আশা করছি। একই তথ্য এসেছে দ্বীপজেলা ভোলা থেকে। ভোলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও ভোলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের পরীক্ষা করানোর আইজিজি এবং আইজিএম কিট নেই। এছাড়া এনএস১ এর ১২০টি কিট পাওয়া গেলেও সেগুলো দু’একদিনেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।
এ ছাড়া দেশের প্রায় সব জেলা ও উপজেলা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।