ক্রাইমবার্ত রিপোট: সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপের মধ্যেই আগামীকাল ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন অনেকে। ডেঙ্গু এ পর্যন্ত কেড়ে নিয়ে শতাধিক প্রাণ। ছুটি বাতিল করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের। ছুটি বাতিল করা হয়েছে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার কর্মীদের। এমন অবস্থায় ডেঙ্গুর কারণে ঈদের খুশি নেই অনেক পরিবারে। সরকারি হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ডেঙ্গু রোগীর ঈদ কাটবে হাসপাতালে। চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়ে দুই হাজারের বেশি ভর্তি হচ্ছেন।
মৃতের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্কও রয়েছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে মানুষের ঈদের আনন্দ কম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বহু লোক ঈদ কাটাবে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনের সঙ্গে। ডেঙ্গুতে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের পরিবারে এবার কোনো ঈদের আনন্দ নেই। সবমিলে এবার লাখ লাখ লোক ভয়ংকর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তাদের ঈদের আনন্দ অনেকটা মাটি হয়ে গেছে! সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৯ জন বললেও বেসরকারি হিসাবে শতাধিক। প্রতিদিনই আক্রান্তের সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
রাজধানীতে এর প্রকোপ শুরু হলেও এখন ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়ে গেছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আক্রান্তের যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে এ চিত্রই পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের ১০ দিনেই ২০ হাজার ৩৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১৬ হাজার ২৫৩ জন। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগের এই সংখ্যা ছিল দিন ২ হাজার ২ জন। রাজধানী ঢাকাতেই এক হাজার ৬৫ জন রোগী এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ১১১ জন ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছেন ৯০ জনের উপরে। তিন দিন কমে আবার বাড়ল ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন। জুন মাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৮৮৪ জন। মে মাসে ১৯৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯ হাজার ৩৯৫ জন।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯ হাজার ৪২০ জন। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুতে মৃত্যুও বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকালও ঢাকার বাইরে বরিশালে এক শিশু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকেও মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় বলে সরকারি তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এপ্রিলে দুইজন, জুনে তিনজন, জুলাই মাসে ১৭ জন এবং আগস্টে ৭ জন মারা গেছে। সরকারি হিসাবে মৃতদের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চারজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং অবশিষ্ট ২৪ জন কোন কোন হাসপাতালে মারা গেছে তা উল্লেখ করা হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে তারা মারা গেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এবারের ঈদে ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত রয়েছেন। মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, ডেঙ্গু ঈদ আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।