চামড়ার দাম না থাকায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের শঙ্কাঃ ৩১ বছরের মধ্যে দাম সর্বনিন্ম

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃসাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণে কুরবাণির চামড়া ভারতে পাচারের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চামড়ার দামের চেয়ে  যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় ঢাকার ট্যানারিতে না যেয়ে বেশির ভাগ চামড়া স্থানীয় ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। যে কোন সময় এসব চামড়া ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হবে। অনেক ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে চামড়া ক্রয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে চামড়ার দাম কয়েক গুণ বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।বিজিবি ও পুলিশ বলছে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার ঠেকাতে তারা সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এদিকে পানির দরে চামড়া ক্রয় করেও বিপাকে পড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবী লবণসহ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণ উপকরণ সমূহের দাম তুলনা মূলক বেশি থাকায় তাদের ক্ষতি হতে পারে।

শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ঈদগা তালার খলিষখালী মঙ্গলানন্দকাটী কাটি ঈদগা। তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এখানে নামাজ অাদায় করে। ঈদগা  কমিটির অন্যতম সদস্য ও ঈদগা মাঠের ইমাম মাওলা মাসুম বিল্লাহ জানান গত ৩০বছরের মধ্যে এবার কুরবাণি পশুর চামড়ার দাম সবচেয়ে কম। ১৮টি গরু ও  অর্ধশাধীক  ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫হাজার টাকায়। যা হতিপূর্বে ২৫ থেকে ৩০হাজার টাকায় বিক্রী হত। এমন অবস্থ সাতক্ষীরা জেলার সবখানে।

গতকাল  জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে, মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজন বিনা পয়সায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। শহরের বাইরে সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচা চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২/৩শ’ টাকায়। আর মাঝারি মানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০/২০০ টাকার মধ্যে। যা গত বছরও ৭শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টদের উদ্বৃতি দিয়ে একটি জাতীয় অনলাইন নিউজ পোটাল জানায়, গত ৩১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কমদামে বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার দাম দিচ্ছেন ২শ টাকারও কম। এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা।

প্রসঙ্গত, বিগত বছরগুলোতে নামাজের পরপরই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর ভিড় দেখা গেলেও এবার তাদের দেখা মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। আক্ষেপের সাথে ফারহান নামক এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন “গবাদিপশুর চামড়া ঐ মুনাফাখোরদের কাছে বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে ফেললে কেমন হয়? একটা বছর এরকম প্রতিবাদ করলেই ওদের টনক নড়বে”। কাজী শাহাজাদার ঐ পোস্টে রাহাদুল হুসাইন লিখেছেন “এই বছর একজন ক্রেতা এখনো আসে নাই।” আরাফাত হোসেন লিখেছেন “আমাদের গরুর চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রয় হয়েছে”। মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন “৫৫ হাজার টাকার গরুর চামড়া ২০০ টাকায় কিক্রি করলাম।” সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন জানান তার কেনা ছাগলের মাংস হয়েছে ১৭ কেজি। কিন্তু চামড়া কেনার কোন লোক নেই। তাই তিনি চামড়াটি গাছে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

সাংবাদিক অাবু সাইদ বিশ্বাস জানান, তাদের ৫০হাজার টাকা মূল্যর কুরবাণির পশুর চামড়ার দাম উঠে ১৫০টাকা। পরে সেই চামড়া ব্যবসায়ি অার না অাসায় চামড়াটি ইয়াতিম খানায় দান করা হয়।

এদিকে ঢাকার বাইরে চামড়া নেওয়ার লোকজন না থাকার কারণে অনেকে বাধ্য হয়েই স্থানীয় মাদ্রাসায় দান করে দিচ্ছেন। তবে এরমধ্যেও যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন, তারা খুবই অল্প দামে চামড়া কিনছেন। তবে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়েও অনেক কম।’ অবশ্য ২০১৮ সালের কোরবানির মতো এবারও চামড়া কিনে যাতে বিপদে না পড়েন, সেজন্য মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আগেভাগেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চামড়া খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ মৌসুমি বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেন চিন্তাভাবনা করে এবার চামড়া কেনেন। কারণ, আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করছি না। তবে যারা লবণ দেবেন, তাদের কাছ থেকে আমরা চামড়া নেবো।’

এ প্রসঙ্গে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের হাতে এই মুহুর্তে সব চামড়া কেনার মতো টাকা নেই। ফলে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এবার সব চামড়া হয়ত আমরা কিনতেই পারবো না।’ তিনি মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেন, ‘যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়া কিনবেন, তারা যেন ঈদের দিন চামড়া বিক্রি করার কথা মাথায় না রাখেন। তারা যেন চামড়ায় ভালোভাবে লবণ দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে চামড়া কেনেন।’

প্রসঙ্গত, এবার গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুট চামড়া লবণ দেওয়ার পরে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু, এবার ফড়িয়া বা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। কোথাও কোথাও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে চামড়া বেচা-কেনা হচ্ছে আরও কম দামে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার চামড়ার দামে মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে।

পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়ার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের উদ্বৃতি দিয়ে একটি অনলাইন নিউজপোটাল জানায়, ‘৩১ বছর আগে ১৯৮৯ সালে কোরবানিদাতারা ৭০০ টাকায় যে চামড়া বিক্রি করেছেন। এবার সেই মানের চামড়া কেনা সম্ভব হয়েছে ৩০০ টাকারও কম দামে।’

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।