আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি ও যোগাযোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি বিরোধীদলের

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তার কড়াকড়ি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে ভারত। জাতিসঙ্ঘ অফিসমুখী একটি বিক্ষোভের ঘোষণার পর তা ঠেকাতে অঞ্চলটি একরকম অচল করে দেয় ভারতীয় বাহিনীর সদস্যরা। কিছু জায়গায় রাস্তায় ব্যারিকেডও দিয়েছে তারা। কিছু এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির ও সেখানকার যোগাযোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানায় বিরোধীদলগুলো। গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক বিক্ষোভে অংশ নেয় বিরোধী দলগুলো। জম্মু-কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কাশ্মীর সংক্রান্ত কোর গ্রুপ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। এতে কাশ্মীরের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পাকিস্তানের আরও প্রচেষ্টার আলোচনা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে-ভারত-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সমাধনের আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্স সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ম্যাক্রোঁ এই মন্তব্য করেন। এই সময় তিনি কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখতে ও অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেন। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও দেশটির আসাম প্রদেশে গণহত্যা হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন জেনোসাইড ওয়াচ। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত দশটি লক্ষণ এখন স্পষ্ট। কাশ্মীরে যোগাযোগ অচলাবস্থা উঠিয়ে দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তারা জানিয়েছেন, এটি কাশ্মীরিদের সম্মিলিত সাজা দেয়ার শামিল। এতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।  ভূস্বর্গখ্যাত উপত্যকাটির সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর সেখানে আরোপ করা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।– আল জাজিরা, ডন, ইয়ন নিউজ এনডিটিভি , দ্য হিন্দু , রয়টার্স ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
শুক্রবার শ্রীনগরে জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক সংস্থার অফিসমুখী একটি বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়া হয় কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কাশ্মিরে আরোপিত কড়াকড়ি এ সপ্তাহে কিছুটা শিথিল করা হলেও বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়ার পর শুক্রবার সকাল থেকেই আবারও অচল করে দেয়া হয় জম্মু।
গত দুই সপ্তাহ ধরেই কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছিল ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে। এসময় পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও পেলেট গানের গুলিতে আহত হয়েছে দেড়শ’র বেশি কাশ্মিরী। সরকারের এই দমন নীপিড়নের ফলে কাশ্মিরের হাসপাতালগুলোতে ছিল আহতদের ভিড়।
শুক্রবার সকাল থেকেই জাতিসঙ্ঘের পর্যক্ষেক সংস্থার অফিসমুখী সড়কে দুই জায়গায় বেড়িকেড দেয় ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া নগরীর অন্যান্য স্থানেও সড়কে কাঁটাতারের বেড়িকেড সৃষ্টি করে পুলিশ। বেশিরভাগ দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়।
সড়কে পুলিশের গাড়ি ছাড়া অন্যান্য গাড়ি চলতে দেখা যায়নি। পুলিশের গাড়ি থেকে কারফিউয়ের ঘোষণা দিয়ে নাগরিকদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়। বিখ্যাত পর্যটন স্পট ডাল লেক ছিলো পর্যটকশূন্য। পুলিশকে লেকের পানিতে বোট নিয়ে পাহাড়া দিতে দেখা যায়।
গত ৫ আগস্ট ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করার আইন পাস করে। এরফলে মূলত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাশ্মিরীদের স্বায়ত্বশাসন বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই কাশ্মিরকে অচল করে রাখে ভারতীয় বাহিনী। ইন্টানেট, টেলিফোন, বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে জীবন যাত্রা দুর্বিষহ করে তোলা হয় নাগরিকদের। তবে এর মধ্যেও বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে। কিন্তু মিডিয়া ব্ল্যাকআউটের কারণে কাশ্মিরের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছি সংবাদমাধ্যমে।
কাশ্মীরে আটককৃতদের মুক্তির দাবি বিরোধী দলের : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির ও সেখানকার যোগাযোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানায় তারা। গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক বিক্ষোভে অংশ নেয় বিরোধী দলগুলো। এটি আয়োজন করে তামিলনাড়ুর স্থানীয় দল দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাঘাম।রাজনীতিবিদ ছাড়া সেখানে যোগ দেয় সমাজকর্মী ও অনেক কাশ্মীরি শিক্ষার্থীও।
গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এর আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধাসামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। উপত্যকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি টেলিফোন-ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এতসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও সেখানে বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীসহ অনেককে।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের গোলাম নবি আজাদ বলেন, ‘বিজেপি ও তার আদর্শিক সঙ্গী আরএসএস ৩৭০ ধারা বাতিল করে উদযাপন করছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানতো না আসলে সেটা কি।  তারা এই মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা বলছে সব যোগাযোগ স্বাভাবিক। অথচ শুধু কর্মকর্তাদেরই ফোন সংযোগ আছে। আর কারও নেই।
আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি ও যোগাযোগ সেবা খুলে দেওয়ার দাবিতে  স্লোাগান দিতে থাকে।  এছাড়া ঐক্যেরও ডাক দেয় তারা। কাশ্মীরের ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’কে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিরোধীদলৈগুলো। আটককৃত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিরও দাবি জানায় তারা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য ফারুক আব্দুল্লাহ, সাবেক মুখমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহ, সাবেক সচিব ও রাজনীতিবিদ শাহ ফয়সাল। এছাড়াও আরও হাজার হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের দিনেশ ত্রিবেদী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো কাশ্মীরের নেতারা এমন কি করেছে যে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। তারা অপরাধ করলে তার সাজা হবে কিন্তু তারা কি অপরাধ করেছে তা জানতে হবে আমাদের।
একই কথা বলেন সর্বভারতীয় ডেমোক্রেটিক উইমেন্স এসোসিয়েশনে সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী মাইমুনা মোল্লাহ। তিনি বলেন, নেতারা কেন কারাগারে। সরকারের যদি এই প্রশ্নের জবাব না থাকে তবে বুঝতে হবে এখানে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে।
সম্প্রতি কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন মাইমুনা মোল্লাহ। সুশিল সমাজের চারসদস্যের দলে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা সেখানে গিয়ে জনগণের কাছে যা শুনতে পাই তা হচ্ছে, অত্যাচারীম নিষ্ঠুরতা, বেইমানী।
সমাবেশে কমিউন্সি নেতা ডি রাজা বলেন, আরএসএসকে অনুসরণ করে মোদি দেশের  জাতীয় স্বার্থ নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, আমরা কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছি। তাদের নেতাকে কারাগারে রেখেছি। যদি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এমন বিপদে পড়ে তাহলে সাধারণ মানুষ না জানি কি অবস্থায় আছে।
বিজেটি মুখপাত্র হারিশ খুরানা আল-জাজিরাকে বলেন, এই নেতাদের ঘিরে গুজব ছিলো তাই তাদের আটক করতে হয়েছে।
দিল্লির এই আন্দোলনে যোগ দেয় অনেক কাশ্মীরি শিক্ষার্থীও। জুবায়ের নামে এক কাশ্মীরি বলেন, কাশ্মীরের ৮০ লাখ মানুষই এখন উন্মুক্ত এক কারাগারে বাস করছেন।
কাশ্মীর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ইস্যু করতে ইমরান খানের বৈঠক : জম্মু-কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কাশ্মীর সংক্রান্ত কোর গ্রুপ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। এতে কাশ্মীরের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পাকিস্তানের আরও প্রচেষ্টার আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরইশি, আইন ও বিচারমন্ত্রী ফারোগ নাসিম, কাশ্মীরের সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী তথ্য ও সম্প্রচার ড. ফিরদাউস আশিক আওয়ান এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অব পাকিস্তান উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বজুড়ে কাশ্মীরের পরিস্থিতি তুলে ধরতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, আইনি এবং মিডিয়া প্রচেষ্টাকে আরও যুক্ত করার পদক্ষেপে একমত হয়েছেন। এর আগে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সাল এক বিবৃতিতে বলেন, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি হওয়ায় এ অঞ্চলটি মানবিক সংকটের অপেক্ষায় রয়েছে, যা জনগণের বিশেষত প্রবীণ, মহিলা ও শিশুদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে।
ভারতীয় বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই উপত্যকায় নৃশংস উপায়ে বিদ্রোহ দমন করে আসছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল মোতায়েনকৃত সেনা হিসেবে অতিরিক্ত সেনা এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। এতে কারফিউ আরোপ করা হয়েছে। ৫ আগস্ট ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকেই যোগাযোগের অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে; শীর্ষস্থানীয় কাশ্মীরি নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
জিয়ো টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি), মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কাশ্মীরিদের ওপর দেয়া কারফিউ ও কাশ্মীরি জনগণের ভোগান্তি নিরসনের আহ্বান জানিয়েছিল। অধিকৃত কাশ্মীরের অবস্থা বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্যও আহ্বান করা হয়েছে। কাশ্মীর কোর গ্রুপও অধিকৃত কাশ্মীরে বসবাসকারী জনগণকে তাদের নিজস্ব অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং উপত্যকায় আটকেপড়া লোকদের পাকিস্তানের সহায়তার কথা উত্থাপন করা হয়।
মোদিকে কাশ্মীরের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে বললেন ম্যাক্রোঁ : কাশ্মীর ইস্যুতে-ভারত-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সমাধনের আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্স সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ম্যাক্রোঁ এই মন্তব্য করেন। এই সময় তিনি কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখতে ও অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে কাশ্মীর ইস্যুতে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী কাশ্মীর এবং কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আমাকে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন। আমি বলেছি, ভারত এবং পাকিস্তানকে আলোচনা করে সমাধানের সূত্র বের করতে হবে।’ কাশ্মীরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখা জরুরি। ফ্রান্স লাইন অব কন্ট্রোলের দুই কাশ্মীরেই নাগরিক অধিকার ও স্বার্থ বজায় রাখার নিশ্চয়তা চায়।’ ম্যাক্রো বলেন, ‘আমরা চাই, শান্তি এবং আলোচনা। আমি কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে জানাব, কাশ্মীর নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনায় বসুক।’
কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কূূটনৈতিক সমর্থন অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতিও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। দুই দেশই বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে পাশে পেতে চাইছে।
জি-৭ সম্মেলনে কাশ্মীর সংকট নিরসনে মোদীর পরিকল্পনা জানতে চাইবেন ট্রাম্প : চলতি সপ্তাহের শেষে জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার ঠিক আগে আবারও কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন ট্রাম্প উপত্যকার পরিস্থিতি গভীরভাবে দেখছেন এবং ভারত-পাকিস্তান চাইলে তিনি এতে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র খুব কাছ থেকে কাশ্মীর পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। আমরা এখনও শান্তি ও সংযমের ডাক দিচ্ছি। প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কাশ্মীরের উত্তেজনা কমাতে দু’পক্ষ যদি চায় তাহলে তিনি সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু আমরা জানি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মধ্যস্থতা চায়নি ভারত।’ ফ্রান্সে হওয়া জি-৭ বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তি আনতে ও উত্তেজনা কমাতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় মোদী কী পরিকল্পনা করেছেন, তা জানতে চাইতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’ এরআগেও জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। গত বুধবারও ট্রাম্প এই ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। তবে ভারত জানায়, এটি পুরোপুরিই দ্বিপক্ষীয় বিষয়।
কাশ্মীরে গণহত্যার ১০ লক্ষণ দেখছে জেনোসাইড ওয়াচ : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও দেশটির আসাম প্রদেশে গণহত্যা হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন জেনোসাইড ওয়াচ। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত দশটি লক্ষণ এখন স্পষ্ট।
জেনোসাইড ওয়াচ মূলত গণহত্যা রোধে কাজ করে থাকে। তারা সামগ্রিক অনুঘটন বিশ্লেষণ করে গণহত্যা হতে পারে কি না তার অনুমান ও তা রোধ, বন্ধসহ দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে তৎপরতা চালায়। গণহত্যা প্রতিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, কাশ্মীর ও আসামে গণহত্যা হতে পারে।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই সতর্কবার্তায় গণহত্যার লক্ষণ হিসেবে দশটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বলছে, কাশ্মীরের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে করে নিকট ভবিষ্যতে যেকোনো সময় ওই দুই অঞ্চলে গণহত্যা চলানো হবে।
কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত জেনোসাইড ওয়াচের দশ লক্ষণ : নিপীড়ন : কাশ্মীরের মুসলিমদের খাঁচাবন্দী তথা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে কোনো কারণ ছাড়াই মেরে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রেফতার, ধর্ষণ এবং নির্যাতন তো অহরহই ঘটছে সেখানে। বিধ্বংস : ১৯৯০ সাল থেকে সেখানে ২৫টি হত্যাকা- চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেসব হত্যাকা-ে ২৫ জনেরও বেশি মুসলিম যোদ্ধা নিহত হয়েছে। অস্বীকার : কাশ্মীরের ‘ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ‘ করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে দাবি করছে নরেন্দ্র মোদি ও তার কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তারা কোনো হত্যার কথা স্বীকার করে না। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ কেউই নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা হত্যার চেষ্টাও করেনি। শ্রেণীকরণ : প্রথম লক্ষণটি হলো অপরায়নের রাজনীতি। হিন্দু ও শিখ নিয়ে গঠিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘আমরা’ বনাম কাশ্মীরের সাধারণ মুসলিমকে ‘তারা’ বলে চিহ্নিত করা। এই দুই ভাগের কারণে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। ভিন্ন পরিচয় নির্মাণ : গণহত্যা হওয়ার জন্য দ্বিতীয় যে পর্যায়টি সেটি হলো ভিন্ন পরিচয় নির্মাণ। কাশ্মীরের মুসলিমদের নামগুলো মুসলিম (পরিচয়পত্রে), তাদের আলাদা ভাষা এবং পোশাক রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ধর্ম পালনের স্থান হলো মসজিদ। বৈষম্য : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরে অর্থনৈতিকভাবে আধিপত্য ছিল হিন্দু পন্ডিতদের। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি হিন্দুদেরকে সেই ক্ষমতা পুনুরুদ্ধার করে দিয়েছে। অমানবিকতা : কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেশটির সরকার থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের আরও কিছু পরিচয় হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী, অপরাধী এবং সবচেয়ে বড় নেতিবাচক যে পরিচয় তা হলো ‘জঙ্গি’। সংগঠন (সামরিক) : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ দেশটির প্রায় ৬ লাখ সেনাসদস্য সেখানে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে সশস্ত্র পুলিশ রয়েছে। মেরুকরণ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষী ঘৃণা তৈরির কাজটি সুকৌশলে করে যাচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রস্তুতি : গোটা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। যেকোনো মূল্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ হিসেবে দেখছে বিজেপি নেতারা।
সম্মিলিত শাস্তি বন্ধে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের আহ্বান : কাশ্মীরে যোগাযোগ অচলাবস্থা উঠিয়ে দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি দল। বৃহস্পতিবার তারা জানিয়েছেন, এটি কাশ্মীরিদের সম্মিলিত সাজা দেয়ার শামিল। এতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।  ভূস্বর্গখ্যাত উপত্যকাটির সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর সেখানে আরোপ করা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের অচলাবস্থা জারি করা প্রয়োজনীয় ও সমানুপাতিক অধিকারের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে বেমানান। এমনকি কোনো অপরাধের কারণ ছাড়াই জম্মু ও কাশ্মীরের লোকজনের ওপর এ অচলাবস্থা সম্মিলিত শাস্তি মতোই বলে তারা জানান। এতে এই বিধিনিষেধকে স্বাভাবিক বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে চলাচল ও জমায়েতে বিধিনিষেধসহ কাশ্মীরজুড়ে আরোপ করা কারফিউ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত তিন দশক ধরে কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ওই বিদ্রোহে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা ও সরকারি বাহিনীর তথ্যানুসারে, উপত্যকাটিতে অন্তত চার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বিক্ষোভকারীসহ অন্যদের গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
মানুষের বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর নৈশ অভিযানে তরুণদের আটক নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এসব আটকের ঘটনায় মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে। কাজেই এসব অভিযোগের ব্যাপারে একটি তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষের কাছে তারা আহ্বান জানান। কিছু কিছু আটক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এতে লোকজনের গুম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।