একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার আব্দুস সামাদ ওরফে ফিরোজ খাঁ ওরফে মুসার প্রাণদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন। আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দিলেন আদালত। এটি ট্রাইব্যুনালের ৩৯তম রায়। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার আগে গত ৮ জুলাই রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলাকালীন নাশকতার অন্য এক মামলায় গ্রেফতার হন আসামি আব্দুস সামাদ।
২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পশ্চিমভাগ এবং গোটিয়া গ্রামে আদিবাসী ও বাঙালিদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ আবদুস সামাদ ওরফে মুসার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, আবদুস সামাদের নেতৃত্বে সেখানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুঠিয়ায় মানুষ হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করলে মুসা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন।
১৯ এপ্রিল ৩০-৪০ জনের একদল পাকহানাদার বাহিনী নিয়ে বাঁশবাড়িয়া গ্রামে যান মুসা। সেখানে ২১ জনকে আটক করে গোটিয়া গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে দিনভর নির্যাতন চালিয়ে ১৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও চারজনকে পুঠিয়ার দুর্গাপুরে মুসার নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পরে মুসার নির্দেশে পশ্চিমভাগ মাদ্রাসার সামনে আক্কেল আলীর ছেলে আবদুস সাত্তারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া পশ্চিমভাগ সাঁওতালপাড়ার আদিবাসী লাডে হেমব্রমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করারও অভিযোগ ছিল মুসার বিরুদ্ধে।