ক্রাইমবার্তা রিপোটঃসাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামী সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক আনোয়ার হোসেনকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান ওই নির্দেশ দেন। আসামী আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টের নির্দেশে স্বেচ্ছায় মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। এছাড়া এ মামলার অপর পলাতক আসামী স্টোর কিপার ফজলুল হককে সম্প্রতি হাইকোর্ট এক আদেশে দেশ ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তবে প্রধান আসামী সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান হাইকোর্টের এক আদেশে ৬ সপ্তাহের জন্য অন্ত:বর্তীকালীন আগাম জামিনে আছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আসামী আনোয়ার হোসেন গত ১৬ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে এন্টিসিপেটরি জামিন এর প্রার্থনা করেন। শুনানী শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আসামীকে ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ ৪২ দিনের মধ্যে নি¤œ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা দাখিল করার নির্দেশ দেন। আসামী আনোয়ার হোসেন উক্ত আদেশ অমান্য করে গতকাল ৪৩ দিনের মাথায় আইনজীবী আব্দুল মজিদের মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। আদালতে শুনানীর সময় দুদক’র পিপি এড. মোস্তফা আসাদুজ্জামান দিলু জামিনের বিরোধীতা করে বলেন, আনোয়ার হোসেন এজাহার নামীয় ৩ নম্বর আসামী, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, সে একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, হাইকোর্ট তাকে এন্টিসেপিটরী জামিনও দেন নাই। এছাড়া আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে আদালতে হাজির না হয়ে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অমান্য করেছেন। শুনানী শেষে বিচারক তার আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
অপরদিকে এ মামলার প্রধান আসামী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান গত ২৯ জুলাই হাইকোর্টে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তাঁকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন এবং ওই সময়ের মধ্যে নিন্ম আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী তৌহিদুর রহমান গত ২৫ আগস্ট সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিননামা সম্পাদনের আবেদন করলে আদালত তাঁর জামিন বহাল রেখে জামিনামা সম্পাদনের নির্দেশ দেন।
এছাড়া চাঞ্চল্যকর এ মামলার অন্যতম পলাতক আসামী সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার মো. ফজলুল হককের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস নং ৩৪১১৭/১৮ তারিখ ১১.০৭.১৯ এর আদেশে পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা এবং ওসি শ্যামনগর থানাকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ফজলুল হককে ২১.০৭.১৯ তারিখের মধ্যে আটক করে নি¤œ আদালতে সোপর্দ করতে এবং সে যেন আদালতের আদেশ ব্যাতিরেকে দেশ ত্যাগ না করে। কিšুÍ ওই আদেশ পাওয়ার পর শ্যামনগর থানা পুলিশ ’তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং অন্য এলাকায় বসবাস করে’ মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বিভাগ গত ২১.০৭.১৯ তারিখের অপর একটি আদেশে আইজিপি, ডিজিএফআই এবং র্যাবের মহা পরিচালক ও পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা এবং ওসি শ্যামনগর থানাকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, মো. ফজলুল হক যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য বিভাগের কলঙ্ক দূর্নীতিবাজ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৭ কোটি ৯৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৪৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা আরও একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে শ্যামনগর উপজেলার ইছাপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের পুত্র।
প্রকাশ থাকে যে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকার উপ-সহকারি পরিচালক জালাল উদ্দীন বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামী করে স্পেশাল ২৫/১৯ নম্বর ওই মামলাটি দায়ের করেন।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …