* গুমের তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি মান্নার
* গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত দিন – ডা: জাফরুল্লাহ
* প্রতিটি গুমের সাথে সরকার জড়িত -আসিফ নজরুল
* বাবা জীবিত নাকি মৃত জানে না আরওয়া
স্টাফ রিপোর্টার : গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তাই এই সরকার জনগণের কথা শুনে না। জনগণের কথা এই সরকারের কানে ঢুকবে না। যদি শুনতো তবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতো অথবা গুমের সাথে জড়িতদের বিচার করতো। একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে সকল গুমের তদন্ত করারও দাবি জানান। এদেশে যেদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিনই সকল গুম আর খুনের বিচার করা সম্ভব হবে বলেন বক্তারা। এই সরকার হৃদয়হীন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্নায় এই সরকারের হৃদয় নড়েও না, গলেও না। এই সরকার একটি পাষণ্ড সরকার।
এদিকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মায়েদের কান্নায় ভারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের হল রুম। অনুষ্ঠানে আগতদের প্রত্যেকের একটাই আকুতি- মা ফিরে পেতে চায় তার সন্তানকে, স্ত্রী চায় স্বামীর সন্ধান, আর সন্তান চায় বাবার মুখ দেখতে। অনুষ্ঠানে আগত ছোট ছোট শিশুরা তাদের বাবার ছবি হাতে নিয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানায় বাবাকে ফিরিয়ে দাও।
বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুরু হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান। মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভানেত্রী ও ২০১৩ সালে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আকমল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, নাসির উদ্দিন এলান, জোনায়েদ সাকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল গুম হওয়া রনি হোসেনের মা আঞ্জুমান আরা বেগম, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট গুম হওয়া সাজ্জাদ হোসেনের মা সাজেদা বেগম, ২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হওয়া ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াছ আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াছ, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি, সুমনের মেয়ে মাইশা। গত ৬ বছরে গুম হওয়াদের মধ্যে অন্তত ৪০ পরিবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আলোচনা সভায় উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে মায়েদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে যায় প্রেস ক্লাবের হল রুম। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতির পরিবর্তে মায়েদের কান্নার রোল পড়ে যায় অনুষ্ঠানস্থলে।
আরো বক্তব্য রাখেন ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল গুম হওয়া রনি হোসেনের মা আঞ্জুমান আরা বেগম, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট গুম হওয়া সাজ্জাদ হোসেনের মা সাজেদা বেগম, ২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হওয়া তপুর মা সালেহা বেগম, সবুজের মা সাহেদা বেগম, পিন্টুর বোন মুন্নী, পারভেজ হোসেনের শিশুকন্যা হৃদী, নিখোঁজ ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়াসহ আরো অনেকে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যে সরকার দেশের ১০ কোটি ভোটারের ভোট রাতের অন্ধকারে লুট করতে পারে সেই সরকারের কাছে কাকুতি মিনতি করেও কোনো লাভ হবে না।
সরকারের উদ্দেশ্য করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখানে উপস্থিত এতগুলো মানুষ দাবি করছে তাদের কেউ না কেউ গুম হয়েছে। এই দাবির কথা চিন্তা করে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে দেখান। যারা এখানে ছবি হাতে বসে আছে, তারা কি মিথ্যা কথা বলছে? অন্তত একটা তদন্ত করেন! তদন্ত করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন।
সরকারকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে বলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেই সাথে তিনি অতীতের ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন। দেশে প্রকৃত অর্থে কোনো আইনের শাসন নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গুমে গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) ও ইসরায়েলের ‘মোসাদ’ জড়িত দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এখানে (বাংলাদেশে) একটা গুমও আল্লাহ করেননি।
তিনি বলেন, আল্লাহ কাউকে গুম করলে তার জানাজা পড়ার সুযোগ হয়। কিন্তু আপনার গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতীয় র এবং ইসরায়েলের মোসাদ যখন সম্মিলিতভাবে কাউকে গুম করে, তার সংবাদ আপনিও (প্রধানমন্ত্রী) পুরোপুরি জানেন কিনা তা আমার জানা নেই।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, এখনো সময় আছে অতীতের ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান। গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের যদি তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে পারেন তাহলে এখনো সময় আছে ওই পরিবারগুলো আপনাদের ক্ষমা করবে, আল্লাহ আপনাদের ক্ষমা করবেন। অন্যথায় কোরো কাছেই কোনো ক্ষমা আপনারা পাবেন না। তিনি আরো বলেন, দেশে প্রকৃত অর্থে কোনো আইনের শাসন নেই।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছেন। সবচেয়ে ভালো উপহার হবে জাতির প্রতি, যারা গুম হয়েছে তাদের সবাইকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত দেয়া। তাহলে পরিবারগুলো আপনার জন্য দোয়া করবে। তিনি বলেন, আমার সংশয় রয়েছে, আপনার গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতীয় র এবং ইসরায়েলি মোসাদ যখন সম্মিলিতভাবে কাউকে যখন গুম করে তার সংবাদ আপনিও পুরোপুরি জানেন কিনা।
দেশের প্রতিটি গুমের সাথে সরকার জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, সরকার কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।
ড. আসিফ নজরুল সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার যদি গুমের সাথে জড়িত না-ই থাকতো তাহলে কেন এতগুলো পরিবারে কান্নান শব্দ তারা শুনছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, পরিবারগুলোর বর্ণনা দেয়া মতে প্রতিটি গুমের সময়ে সরকারি গাড়ি কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীর পোশাকে বা তাদের গাড়ি ব্যবহার হলো কিভাবে? এছাড়া প্রতিটি ঘটনার পরে থানায়ই বা সাধারণ ডায়রি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে কেন? তিনি বলেন, সরকার যদি গুমের সাথে জড়িত না-ই থাকেন তাহলে স্বাধীন কমিশন গঠন করে এতগুলো গুমের ঘটনা তদন্ত করছে না কেন?
আসিফ নজরুল বলেন, গুম একটি অপরাধ যা হত্যা বা খুনের চেয়েও নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ। কেননা গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবার সারা জীবনই অবর্ণনীয় কষ্ট নিয়ে চলেন। পরিবার গুম হওয়া স্বামী কিংবা সন্তানের কোনো খোঁজ পায় না। অনেক পরিবার আছে যারা কারো কাছে কোনো অভিযোগ করবে না, শুধু লাশটি ফেরত চায় অথবা নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান শুধু চায় পরিবার।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে এমন একটা রাষ্ট্র চেয়েছিলাম। কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার পরে বেঁচে থাকার যে অধিকার রাষ্ট্র সেটাও কেড়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসী হয়ে যায়, তখন মানুষের জন্য এ রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন থাকে না। জাতিসংঘের গুমের ব্যাপারে যে সনদ আছে, সেই সনদের বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। গুমের ক্ষেত্রে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ যেসব সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বাবা জীবিত নাকি মৃত জানে না আরওয়া : সাজেদুল ইসলাম সুমন যখন নিখোঁজ হন তখন মেয়ে আরওয়ার বয়স মাত্র দুই বছর। বর্তমানে আরওয়ার বয়স ৮। ছয় বছরেও বাবার দেখা পায়নি। গুমের সময় মনে দাগ না কাটলেও এখন প্রতিনিয়ত বাবাকেই খুঁজে ফেরে মেয়ে। ২০১৩ সালে ঢাকার নাখালপাড়া থেকে নিখোঁজ হন সুমন। তার বৃদ্ধা মায়ের অপেক্ষা যেন ফুরাই না। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মা এখন শয্যাশায়ী। শুধু সুমনের পরিবার নয় আরও অসংখ্য পরিবারের আর্তনাদ, আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তন।
কারও শিশু সন্তান, কারও বৃদ্ধ বাবা-মা উপস্থিত হন। এসেছেন বোন-ভাইসহ অন্য স্বজনরাও। সবার হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি। দাবি একটাই, গুম হওয়াদের ফিরিয়ে দেয়া পাশাপাশি গুমের মতো চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন বন্ধ করা। স্বামী বেঁচে আছে নাকি মরে গেছেন, তা তারা জানেন না। বিধবা নাকি সধবাও তা নিশ্চিত নয়। বাবা জীবিত নাকি মৃত অনেক শিশু সন্তানই তা জানে না। একদিন ফিরবে এমন সান্ত¡নাও ফিকে হয়ে আসছে দিন দিন।
গুম হওয়া সুমনের বড় বোন আফরোজা ইসলাম ও মারুফা ইসলাম বলেন, আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে, প্রায় ৫ বছর আট মাস পেরিয়ে গেলেও ভাইকে ফিরে পেলাম না। ওর (সুমনের) সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। নিষ্পাপ মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিআইড্,ি মানবাধিকার কমিশন, পুলিশ, র্যাবসহ এমন কোনো জায়গা নেই যে, আমরা দারস্থ হইনি। কিন্তু কেউ আমাদের সুমনের সন্ধান দিতে পারেনি।
বিএনপি নেতা সুমনের মতোই কুষ্টিয়ার স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সবুজ ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার গাজীপুর থেকে নিখোঁজ হন। সবুজের মেয়ে সুমাইয়া ফেরদৌসও (১০) বুঝেছে বাবার মতো অভিভাবক শূন্যতার যন্ত্রণা।
গুম হওয়া সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি, আমার শাশুড়ি, মুক্তিযোদ্ধা বাবা, দুই সন্তানসহ সবাই অপেক্ষায় আছি, সবুজ একদিন ফিরে আসবে। প্রতিটা মুহূর্ত আমরা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। এ যন্ত্রণা সহিবার নয়। স্বজন হারানোর ব্যথা মাত্র তারাই বুঝে যারা হারিয়েছে।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর পল্লবী থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তৎকালীন সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুকে (৩১) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি।
ছোট ভাই হাসনাইন বলেন, ভাইকে ফিরে পেতে কতো জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু ভাইকে পাইনি। এখন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নাই। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, ভাইকে ফিরিয়ে দিন।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ৫৩২ জন গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫৮ জনের সন্ধান এখনও মেলেনি। গুম হওয়ার পর অনেককে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার দেখালেও কারও কারও লাশ উদ্ধার হয়েছে। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গুমের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। এরপরের বছর থেকে ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
আলোচনা সভায় গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিবছর এই আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে আমরা মায়ের ডাকের আহ্বানে উপস্থিত হই। প্রতিবছরই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই্। যারা গুম হয়েছেন তারা যেন তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসে। এখনো আমরা আমাদের হারিয়ে গুম হওয়াদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি মানবতার মা। আমাদের সন্তানেরা গুম হওয়ায়, ফিরে না আসায় আপনার হৃদয়ে কি রক্তক্ষরণ হয় না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছেই অনুরোধ, আপনার একটি সিদ্ধান্তেই একটি অসহায় মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। শিশুরা ফিরে পাবে তার বাবাকে।
গত ৬ বছরে গুম হওয়া অনেকেই এখনো ফিরে না আসায় শোকে পরিবারের অনেকে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। গুম হওয়া মুন্নার বাবা প্রতি বছরই এ দিবসে উপস্থিত হলেও আজ তিনি আসেননি। কারণ তিনি মারা গেছেন। বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম এখন প্রায় অন্ধ। পারভেজ হোসেনের বাবাও সন্তানকে ফিরে না পাওয়ার শোকে মারা গেছেন। ছোট্ট হৃদি এখনো বাবার জন্য অপেক্ষায়। গুম হওয়া ছেলে সাইফুর রহমান সজিবের মা রেনু রহমানও না ফেরার দেশে। বাবা শফিকুর রহমান নির্বাক চোখ অদূরে শুধু তাকিয়ে থাকেন। নিখোঁজ ঝন্টু, হুমায়ুন কবির, শাওন কিংবা তপুদের বাবাও না ফেরার দেশে। তাদের মা’রাও অসুস্থ, কেউ চোখে ঝাপসা দেখেন। অথচ তারা জানেন না সন্তানদের অপরাধ কী। কে বা কারা গুম করেছেন আদরের সন্তানকে। গুম হওয়াদের মধ্যে অনেকে ফিরে আসলেও অধিকাংশের খোঁজ মেলেনি।
Check Also
তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ
মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …