সংবাদ সম্মেলন: শহরের ৫০ টি ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের পূর্বে উচ্ছেদ না করার দাবী

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: : ‘আগে জীবন জীবিকা বসত পুনর্বাসন, তারপর সৌন্দর্য বর্ধন’। তা না করে বাড়িঘর ভেঙ্গেচুরে উচ্ছেদ করে আমাদের পথে বসিয়ে সাতক্ষীরার প্রাণ সায়ের খালের দুই ধারের সৌন্দর্য বর্ধণ করা যাবে না। সাধারণ মানুষের বসত ও জীবন জীবিকার পথরুদ্ধ করে তাদের খেদিয়ে দিয়ে খালধারের জমি কেড়ে নেওয়া আমরা মেনে নেবো না।
বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন সাতক্ষীরা শহরতলির সুলতানপুরে প্রাণ সায়ের খাল ধারের প্রায় ৫০ টি পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন আমরা দরিদ্র মানুষ। মাঠেঘাটে কাজ করে, ভ্যান চালিয়ে, দিন মজুরি খেটে ও মাছবাজারে শ্রমদিয়ে সংসার নির্বাহ করে আসছি। গত ৪০ বছর ধরে আমরা খালধারে নিজেদের মতো করে ছোট ছোট খুপরি ঘর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অথচ আমাদের এই চলমান জীবনযাত্রায় আঘাত করেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা। পৌরসভার এসব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের ভোট নিয়েছেন। এখন তারা আর আমাদের কথা শুনতে চাননা। আমাদের দেখতেও আসেননা। উল্টো আমাদের উচ্ছেদ কর্মকান্ডকে তারা দুর থেকে বেশ উপভোগ করছেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে দরিদ্র গ্রামবাসী বলেন গত ঈদের কয়েকদিন আগে আগস্টের প্রথমেই আমাদের বাড়িঘর তারা ভেঙ্গে দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে আমরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। আমাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্রও রক্ষা করতে পারিনি। এ অবস্থায় আমাদের ঈদ কেমন হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। সরকার বলেনি দরিদ্র মানুষকে তাদের বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করে খাল ধারে সৌন্দর্য বাড়াতে। অথচ সেই কাজটিই করেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও প্রশাসন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের যদি সরাতেই হয় তাহলে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের উচ্ছেদ করার আগে কোনো প্রকার সতর্কবার্তা বা নোটীশও দেওয়া হয়নি। এমন সময় ভাংচুর করা হয়েছে যখন আমরা দুপুরের খাবারও খেতে পারিনি।
নিজেদের অহায়ত্ব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আমরা গরিব। আমাদের মাথা গোঁজার এতোটুক ঠাঁই নেই। আমরা তবু কুঁড়েঘরে থেকে জীবন জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু উচ্ছেদ করে দেওয়ার পর আমাদের ঠাঁই হয়েছে অন্যের বারান্দায়, খোলা আকাশের নিচে তাঁবুর তলে। কেউবা কারও গোয়ালে রান্নাঘরে আশ্রয় নিয়েছি। এমন অমানবিক অবস্থায় আমাদের দিনের দু’ মুঠো খাবারও জুটছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের সহায়তা করবেন বলে আশ^স্থ করলেও বাস্তবে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন আমাদের বসত জমি পৌরসভা নিজেদের মতো করে ঘিরে নিতে চাইছে। এই বর্ষা বাদলায় আমরা পরিবারের ছেলে মেয়ে ও নারীদের নিয়ে দাঁড়াবো কোথায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ভূমিহীন পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাকের হোসেন ও সম্পাদক শিহাবউদ্দিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুলতানপুর খালধারের মো. সিরাজউদ্দিন, বসির আহমেদ, সালাম গাজি, বাবু সোনা, সফিকুল ইসলাম, মুকুল, তরিকুল ইসলাম, শামসুর রহমান, হালিমা খাতুন, জাহানারা বেগম, ফজিলা খাতুন, আনোয়ারা বেগম, সুফিয়া খাতুন, বেবী, সফুরা খাতুন, মর্জিনা বেগম, রোজিনা খাতুন, হাফিজা খাতুন, রেহানা খাতুন প্রমূখ।
পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতানপুর এলাকার পৌর কাউন্সিলর ফিরোজ হোসেন বলেন ‘আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছি। দরিদ্র ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব আমরা জেলা প্রশাসককে দিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ^স্থ করেছেন। তাদেরকে খাস জমিতে বসতি গড়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে’।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।