বন্দুক ঠেকিয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বিদেশি পরিচয়পত্র’ নিতে বাধ্য করছে মিয়ানমার

ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোট, রয়টার্স : মিয়ানমারের রাখাইনে বন্দুক ঠেকিয়ে রোহিঙ্গাদের সরকার প্রদত্ত পরিচয়পত্র নিতে বাধ্য করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তবে সেই পরিচয়পত্রে তাদের ‘বিদেশি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এটি গ্রহণ করলে দেশটির নাগরিকত্বের আর কোনও সুযোগ থাকবে না তাদের। মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস-এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।

বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তবে এখনও এ জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ রাখাইনে রয়ে গেছেন। এখন তাদেরও ‘বিদেশি’ হিসেবে উল্লেখ করা পরিচয়পত্র গ্রহণে বাধ্য করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

ফর্টিফাই রাইটস জানায়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড নিতে বাধ্য করছে, যা কার্যকরভাবে তাদের বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করবে। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, মিয়ানমার সরকার প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে। এতে করে তারা মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হবে।

সরকারের মুখপাত্র জাও তায় এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুন তুন নি জোর করে পরিচয়পত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যি নয়। আমার কিছু বলার নেই।’

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে বসবাস করলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না।

উগ্র বৌদ্ধত্ববাদকে হাতিয়ার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রসিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রঙ-বেরঙের পরিচয়পত্রে ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের জাতিগত পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন মানুষে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। তাদের সঙ্গে রয়েছে ১৯৮২ সাল থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরও প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিতে এই বিষয়টি গুরুত্ব বহন করতে পারে বলে জানিয়েছে ফর্টিফাই রাইস। কারণ নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হলে মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।