আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় নতুন করে ৫ হাজার ৪১০টি সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়েছে। বেশির ভাগই গভীর ও অগভীর নলকূপ। চারপাশে সুবিশাল জলরাশি সত্ত্বেও সুপেয় পানির জন্য জেলাতে হাহাকার চলছে। খাওয়ার উপযোগী পানির অভাব পূরণে দূরদূরান্তে ছুটে বেড়ানোর পাশাপাশি অনেকে আবার পুকুরের কাদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানিও পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পানিবাহিত নানা রোগসহ আর্সনিকের কবলে পড়তে হচ্ছে জেলার সিংহ ভাগ মানুষের। সূত্র মতে জেলার ৬০ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানি ঝুকিতে রয়েছে।
ইউনিসেফের তথ্য মতে ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের অর্ধেক দেশই পড়বে, সুপেয় পানি সংকটে। ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে একজন মারা যাবে বিশুদ্ধ পানির অভাবে-এমন সতর্কতা ইউনিসেফের। আর ২০৫০ এ সুপেয় পানির জন্য হাহাকার উঠবে বিশ্বের ৭৫ ভাগ মানুষের। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বরটি সুপেয় পানি অন্যতম।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা জলাধারগুলো চাহিদা পূরণে সক্ষম না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান খাওয়ার উপযোগী পানির এ সমস্যা তাঁদের দৈনন্দিন ও প্রাত্যহিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে।
গত এক বছরে জেলাতে ৫হাজার ৪১০টি মিঠা পানির উৎস নষ্ট হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সূত্রে জানা যায় সরকারী হিসাব মতে জেলাতে মোট ৩৭ হাজার ৪৬৫টি হস্তচালিত নলকূপ রয়েছে। যার মধ্যে অকেজো রয়েছে ৫ হাজার ৪১০টি এবং সচল রয়েছে ৩২ হাজার ৫৫টি। তবে বাস্তবতা হলো অকেজোর সংখ্যা আরো বেশি।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে চালু রয়েছে ৬১০৩টি এবং অকেজো রয়েছে ৫০৪টি। কলারোয়াতে চালু রয়েছে ৫৩২৯টি এবং অকেজো রয়েছে ৪৪০টি। তালাতে চালু রয়েছে ৫২৬৯টি এবং অকেজো রয়েছে ২৭৪টি। আশাশুনিতে চালু রয়েছে ৩৫১৯টি এবং অকেজো রয়েছে ১৭২১টি। দেবহাটাতে চালু রয়েছে ৩১৩৫টি এবং অকেজো রয়েছে ১১২টি। কালিগঞ্জে চালু রয়েছে ৩৭২৭টি এবং অকেজো রয়েছে ১৯৭১টি। শ্যামনগরে চালু রয়েছে ৪৫২৫টি এবং অকেজো রয়েছে ৩৮৮টি। সাতক্ষীরা পৌরসভাতে চালুরয়েছে ৪৪৮টি।
সাতক্ষীরায় শতকরা কতভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদফতরে। মৌখিক ভাবে ৬০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে বলে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদপ্তর এর দাবী। তবে বেসরকারী সূত্রমতে জেলাতে ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি বঞ্চিত।
১৯৯০ সালের পর থেকেই জেলা তালা, আশাশুনি ও শ্যামনগরে খাবার পানির সংকট শুরু হয়। এর জন্য অপরিকল্পিতভাবে লোনা পানির চিংড়ি চাষ, নদী ভাঙনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যাগকে দায়ী করছে উপকুলীয়বাসী।
খলিষখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোজাফফর রহমান জানান, তার এলাকাতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দিনের পর দিন এ সংকট আরো প্রকট হচ্ছে। এখুনি কার্যকরি ব্যবস্থা না নিলে পানি সংকটে মৃত্যু মুখে পড়বে তার এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাতে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে কার্যকরী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ ভৌগলিক নানা কারণে নতুন নতুন পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে। তবে উপকুলীয় জেলা হওয়াতে দিন দিন লবণক্ষতা আর্সেনিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকট সমাধান কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …