মো. জাহিদুর রহমান:
বঙ্গোপসাগেরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি-সুন্দরবন, যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর মধ্যে অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি কাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত পরিবেশের সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড বনভূমি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক ফুলের রেণু গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে বর্তমান সুন্দরবন নামক বনভূমি সৃষ্টির বয়স প্রায় ১৪ হাজার বছর। জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিদ্যমান থাকায় সুন্দরবন আশ্রিত এলাকায় গড়ে ওঠে মানুষের বসতি। প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ের দান-প্রতিদানের যুক্তধারা মিলিত হয়ে এখানে বিকশিত হয় মানব সংস্কৃতি ও সভ্যতা। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে-ঝড়ে-জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের আকৃতি যেমন পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনি মানুষের বসতির প্রয়োজনে সুন্দরবন ও এর অংশবিশেষ পরিণত হয়েছে সমতল ভূমি, লোকালয় ও নগর। বর্তমান সুন্দরবন সংলগ্ন এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় কখন প্রথম মানব বসতি গড়ে উঠেছিলো সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়না।
সুন্দরবন সংলগ্ন ২৪ পরগণা জেলার মনি ও অজয় নদীর অববাহিকা থেকে প্রাপ্ত প্রতœ নিদর্শন অনুযায়ী অনুমিত হয় যে, এখানে যে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো তার বয়স প্রায় ২ হাজার বছর। ২৪ পরগণার জয়নগর থানার ‘তিলপি’ গ্রামে খননকার্যে ধাতু গলানোর ৮টি চুলোর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যেগুলো খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকের বা ২২০০ বছরের পুরনো। পাশ্ববর্তী ‘ঢোসা’ গ্রামের বৌদ্ধস্তুপ থেকে ব্রহ্মী লিপিযুক্ত গোলাকার সিল, লিপিযুক্ত ইট, পোড়ামাটির ফলক, তা¤্রমুদ্রা ও প্রাক-গুপ্তযুগের ছাদের টালির অংশ পাওয়া গেছে। ২৪ পরগণার গোবর্ধনপুর প্রতœস্থলে ২৫ ফুট মাটির গভীরে প্রাপ্ত লাল বর্ণের ইট ও মৃন্ময়পাত্র যেগুলো মৌর্যযুগের (২০০-৩৫০ খ্রিস্টপূর্ব) বলে সনাক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে বসতি স্থপনকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো কোল, শবর, পুলিন্দ, চন্ডাল, কৈবর্ত, বাগদি ও পোদ ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্মাচরণে এঁরা ছিলেন প্রকৃতিপূজারী।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ‘মহাকর্মবিভঙ্গ’তে প্রাচীন বাংলার জনপদ ও বন্দর নগরী হিসেবে ‘তা¤্রলিপ্তি’র নাম পাওয়া যায়। এটি বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম চর্চাকেন্দ্র ও পীঠস্থান ছিলো। এর চতুঃসীমা হলো-উত্তরে বর্ধমান ও কালনা, পূর্বে গঙ্গা, পশ্চিমে কলিঙ্গ রাজ্য ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ।
আবার ২য় ও ৩য় শতকে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার লাভ করে। বাংলার দক্ষিণে সমুদ্র উপকূলে সুন্দরবন সন্নিহিত অঞ্চলে ‘তা¤্রলিপ্তি’ নামক উল্লেখযোগ্য একটি নগর বিদ্যমান ছিলো। ৫ম শতকে ফা হিয়েন নামক এক পরিব্রাজক তা¤্রলিপ্তে ২২টি সংঘারাম ও অসংখ্য ভিক্ষুর কথা উল্লেখ করেছেন। ৭ম শতাব্দীর ১ম ভাগে হিউয়েন সাং এবং এ শতকের শেষভাগে ইত সিং নামক চীনা পরিব্রাজক তাম্রলিপ্তের পরিভ্রমণ করেন। ইত সিং এখানকার বৌদ্ধবিহারের অধিবাসীদের উন্নত নৈতিক চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।
খৃষ্টপূর্ব ৪র্থ ও ৫ম শতকে বাংলায় জৈন ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। জৈনদের ধর্মগ্রন্থে নেমীনাথ কর্তৃক বঙ্গদেশে ধর্মপ্রচারের কথা উল্লেখ আছে। জৈন ধর্মগুরু মহাবীর বর্ধমানের নাম অনুসারে রাঢ় অঞ্চলে বর্ধমান জেলার নামকরণ হয়েছে । জৈন ধর্মগুরু পার্শ্বনাথের নামানুসারে ঝাড়খন্ডে একটি পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে ‘পরেশনাথ’। খৃস্টপূর্ব ২য় শতকে দক্ষিণ বাংলায় জৈনধর্ম প্রচারিত হয়। রাজা চন্দ্রগুপ্ত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন।
বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর থানার ‘ভরতভয়না’ স্তুপ খননে একটি বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। পাশ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার ‘দমদম ঢিবি’ খননে খ্রিস্টপূর্ব ২য়-৩য় শতকের জৈন ও বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জৈন তীর্থ মল্লিনাথের বেলেপাথরের মূর্তি, ব্রোঞ্জের যক্ষিমূর্তি, পোড়ামাটির ফলকে উড়ন্ত বিদ্যাধরের মূর্তি, চূড়ির টুকরা, ছাইরঙা মৃন§য়পাত্র, তৈল প্রদীপ এবং প্রদীপ দানি ইত্যাদি।
২৪ পরগণা জেলার বেড়াচাপা থানার অন্তর্গত চন্দ্রকেতুগড়ে ‘খনা মিহিরের ঢিবি’র উৎখনন কাজে ২য় থেকে ৫ম শতকের মধ্যবর্তী সময়ের পোড়ামাটির ফলক, ঝুলন্ত মাছ হাতে দন্ডায়মান নারী মূর্তি, বেলেপাথরের বুদ্ধমূর্তি এবং মাথাবিহীন ভগ্নপদ জৈনমূর্তি পাওয়া গেছে। ধর্মপাল দেবের মালদহ জেলার খালিমপুর তা¤্রশাসন ও লক্ষণ সেনের নদীয়া জেলার আনুলিয়া তা¤্রশাসন (ভূমিদানপত্র) থেকে ৮ম ও ৯ম শতকের ‘ব্যঘ্রতটী’ মন্ডল নামীয় জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। ড. নীহার রঞ্জন রায়ের মতে-৫ম-৬ষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে ১২-১৩ শতক পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চল ছিলো ঘনবসতিপূর্ণ সমৃদ্ধ জনপদ।
দশম শতক থেকে শুরু করে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চল পরিচিত ছিলো ‘ব্যঘ্রতটী’ মন্ডল নামে। বল্লাল সেনের আমলে প্রাচীন বাংলাকে ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এগুলি ছিলো রাঢ়, বরেন্দ্র, বাগড়ি ও বঙ্গ। সুন্দরবন ও পাশ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিলো বাগড়ি। যশোর জেলার শার্শা থানার অন্তর্গত ‘বাগুড়ি’ নামে একটি জনপদ রয়েছে। এটা বাগড়ি নামের অপভ্রংশ হতে পারে।
বাগড়ি (মতান্তরে বাঘড়ি) ছিলো কীর্তিনাশা পদ্মার দক্ষিণে ও ভাগীরথীর পশ্চিমে অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য ভূভাগ। ড. দীনেশচন্দ্র সেন বলেন, ‘বর্তমান পদ্মা ও ভাগীরথীর সঙ্গম স্থলে পদ্মার দক্ষিণে ও ভাগীরথীর পশ্চিমে অবস্থিত ক্ষুদ্র জনপদের নাম বাঘড়ি।’ পন্ডিত শ্রী রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের ভাষ্যে Ñ‘যে ভূভাগ পদ্মা এবং ভাগীরথীর মধ্যস্থিত, তাহার নাম বাগড়ি।…বাগড়ি লইয়া প্রেসিডেন্সি বিভাগ।’ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন- বাগড়ি ভূমিতে মানব বসতির শুরু ৫ হাজার বছরের বেশি নয়।
আক্ষরিক অর্থে বাঘ যে তটে বা সৈকতে বাস করে বা চরে বেড়ায় তাকে ব্যঘ্রতটী বলা হয়। ব্যঘ্রতটী বলতে স্বভাবতই সুন্দরবনকে নির্দেশ করা হয়েছে। পাল ও সেন আমলের প্রশাসনিক স্তরবিন্যাসে নি¤œ থেকে উচ্চে যথাক্রমে-গ্রাম-বিথি-মন্ডল-বিষয়-ভূক্তি ছিলো। সেক্ষেত্রে ব্যঘ্রতটী মন্ডল বলতে একটি প্রশাসনিক এলাকাকেই নির্দেশ করছে। কোনো কোনো লেখক ও ঐতিহাসিক মনে করেন যে, বাগড়ি বা বাঘড়ি নামটি এসছে মূলত ব্যঘ্রতটী শব্দবন্ধ থেকে। প্রাকৃত ভাষায় এর উচ্চারণ ‘বগ্ঘঅড়ী’, তা থেকে আধুনিক বাঘড়ি-বাগড়ি। তাই প্রাচীন বাগড়ি দেশ ও জনপদের অন্তর্ভূক্ত ছিলো আজকের সুন্দরবন ও তৎসন্নিহিত অঞ্চল। ‘বাগড়ি’ অঞ্চলে যেসব জাতি বাস করত তারা ‘বাগদি’ নামে পরিচিত ছিলো।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মানিকহার প্রতœস্থলে পাওয়া ইটের আকৃতি, মাপ যা ধ্রুপদি যুগের (পাহাড়পুর, নওগাঁ জেলা) সোমপুর বৌদ্ধবিহারের ইটের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার অন্তর্গত মানিঘরে ‘তিওর’ বংশীয় এক রাজা সুন্দরবন এলাকায় রাজত্ব করতেন বলে জানা যায়।
১১৯৬ নালে প্রাপ্ত একটি তা¤্রশাসন থেকে জানা যায় লক্ষণ সেনের সময় ডুম্মন পাল নামক একজন ব্যক্তি সুন্দরবন অঞ্চলে ‘খাড়ি’ পরগণার শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি ‘মহারাজা’ উপাধি ধারণ করেছিলেন। বর্তমান ২৪ পরগণার ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় ‘খাড়ি’ গ্রাম রয়েছে।
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে গৌতম বুদ্ধের অবির্ভাব ঘটেছিলো। বুদ্ধ দিব্যজ্ঞান লাভ ও সত্য সাধনার মধ্য দিয়ে নির্বাণ বা মুক্তি লাভের কথা বলেছেন। তপস্যা, যাগযজ্ঞ ও পশুবলিকে অর্থহীন গণ্য করেছেন। প্রতিমা পূজাকে সত্যের পথে এক বিরাট বাধা হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রাচীন বৌদ্ধমতকে ‘হীনযান’ বলা হয়। পরবর্তীকালে ‘মহাযান’ মতবাদে দেবদেবীর আবির্ভাব ঘটে। নাগার্জ্জুন নামক একজন আচার্য এই মতবাদের প্রবক্তা। স¤্রাট অশোকের পর দশম শতকে বুদ্ধর্মে পূজাচারের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পাল শাসনামলে বৌদ্ধদেরকে হিন্দু ধর্মের দিকে আকর্ষণ করতে ব্রাহ্মণরা বুদ্ধকে তাঁদের অবতার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবংতাঁর মূর্তি নির্মাণ করে উপাসনা শুরু করে। বাংলার রাজা শশাঙ্ক বৌদ্ধ মত নিস্প্রভ করিয়া ‘শৈব’ মত চালু করেন।
বল্লাল সেনের আমলে হিন্দু ধর্মেও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় এবং বৌদ্ধ ধর্মের শেষ চিহ্ন লুপ্তপ্রায় হয়ে পড়ে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, যে সকল জাতি বাংলায় বাস করিত- কিরাত, পৌন্ড্র, কৈবর্ত, বঙ্গ,বগ্ধ (বাগদি) সকলেই বৌদ্ধ হইয়াছিল। হিন্দু সমাজের অত্যাচার থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ইসলামের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসে।
মুসলিম আমলের পূর্বে বৌদ্ধ ও আদিম অধিবাসীরাই এখানের প্রধান বাসিন্দা ছিলো। প্রাচীন আমলের বুদ্ধমূর্তি ও প্রতœ নিদর্শণে তার প্রমাণ মেলে। বাংলায় ব্রাহ্মণ-কায়স্থদের (হিন্দু) বসতি ছিলোনা। ব্রাহ্মণরা বাংলায় আসতে চাইত না। তীর্থযাত্রা ব্যতীত ব্রাহ্মণদের বাংলায় (ম্লেচ্ছ দেশ) আগমন নিষিদ্ধ ছিলো। বঙ্গ দেশে আসলে যজ্ঞ অনুষ্ঠান দ্বারা পরিশুদ্ধি লাভ করতে হতো। সেন শাসনামলে বাংলায় হিন্দুদের আগমন ঘটে।
বিজয় সেনের শাসনামলে বাংলার দক্ষিণে সুন্দরবন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম অধ্যুষিত রাজ্য ছিলো দ্বাদশ শতকে মৎসেন্দ্রনাথ নাথপন্থীদের গুরু ছিলেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- ইনি পর্যাপদের কবি মীননাথ। এদরকে ‘সহজিয়া, বলা হয়। নদী, চক্র, শক্তি এদের মূলমন্ত্র। হিন্দু রাজশক্তির অত্যাচারে এবং শাস্ত্রর কঠোর ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ অধ্যুষিত বাংলা জোরপূর্বক হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করে তাঁদের অস্পৃশ্য করে রাখা হতো। সহজপন্থী নাথগণ হিন্দু সমাজের অন্তভূক্ত হয়েছিলেন। তারা মূর্তিহীন গৌতম বুদ্ধ কে ‘ধর্মঠাকুর’ অভিহিত করেতার উপাসনা করতেন। সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা সীমান্তবর্তী পাড়–ইপাড়া গ্রামে পহেলা পৌষে আজো ধর্মঠাকুুরের মেলা ও পূজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
২৪ পরগণার গোবরডাঙায় যমুনাগর্ভে প্রাপ্ত ধ্যানী বুদ্ধমূর্তি যা বনগাঁর একটি মন্দিরে সংরক্ষিত আছে। বাগেরহাটের ঠাকুর দীঘিতে ‘বুদ্ধমূর্তি’ পাওয়া যায়। বাগেরহাটের যাত্রাপুরে ‘কোদলা বৌদ্ধমঠ’ আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ‘সোনাবাড়িয়া মঠ’ অন্যতম বৌদ্ধ নিদর্শন। বাগেরহাটের সন্নিকটে ‘যোগীদহ পুকুর’ ও ‘যোগীখালি’ গ্রাম রয়েছে। খুলনার পাইকগাছায় রয়েছে ‘মঠবাড়ি’। সাতক্ষীরার কলারোয়াতে ‘যুগিবাড়ি’, ‘যুগিখালী’, ‘যুগিপুকুর’ ইত্যাদি নামের গ্রাম আজও বিদ্যমান। ২৪ পরগণা, যশোর ও খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে, নাথ, দেবনাথ, কাপালি, যোগী ইত্যাদি পদবীধারী জনগোষ্ঠী আজও বসবাস করছে, যাদের মাধ্যমে এতদাঞ্চলে প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতির ও সভ্যতার ক্ষীণধারা, চিহ্ন বা নিদর্শন আজও প্রবহমান।
সভ্যতা কেনো একক জাতিগোষ্ঠীর অবদান নয়। প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ের দান-প্রতিদানের যুক্তধারা মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সভ্যতার। অতীতে সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একাধিক জনপদ হড়ে ওঠে এবং তার পশ্চাতে বনাশ্রিত এ জনপদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনির্মাণে বহু জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অবদান ছিলো। প্রাচীন ইতিহাসের এ ¯্রােতধারা কখনও প্রবাহিত হয়েছে বিবর্ণরূপে, কখনও পূর্ণ উচ্ছ্বাসে।