ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু এখন কাশ্মীর। এ ঘটনা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এমন যুদ্ধ হলে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করবে পাকিস্তান। তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, এ নিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তাতে পুরো বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল জাজিরা, জি নিউজ, কলকাতা টাইমস
আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সীমিত পন্থা খোলা আছে পাকিস্তানের জন্য।
তিনি আরো বলেন, আমরা এ ঘটনায় তেমন কিছুই করতে পারি না, শুধু সব আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে যাওয়া ছাড়া। এসব সংগঠন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে প্রধান সংগঠন হলো জাতিসংঘ।
তিনি আরও যোগ করেন কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয়ান দেশগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। ভারত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়ে এ ইস্যুতে হালকা যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ইমরান খান।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, সবকিছু বড় বাজার সংক্রান্ত, কিছু দেশ বড় বাজার দেখছে, তারা ভারতকে ১০০ কোটি মানুষের একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছে। তারা এটা অনুধাবন করছে না যে, তারা যদি এখনই হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে এতে যে করুণ পরিণতি বয়ে আনবে তাতে শুধু এই উপমহাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। পুরো বিশ্বের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গভীর উদ্বেগ মালালার
ভারত শাসিত কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই। অবরুদ্ধ ওই উপত্যকার শিশুদের সহায়তায় পদেক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন মালালা।
৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। সেখানকার বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্য পুলিশসহ সেখানে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যা উপত্যকাকে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত করেছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরে আধাসামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধা-সামরিক বাহিনীর আরও বিপুল পরিমাণ সদস্য। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর সেগুলো খুলে দেয়া হলেও ভয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।
এসব শিশুদের নিরাপদে তাদের স্কুলে ফিরে যেতে সহায়তা করতে এক টুইটার বার্তায় মালালা জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চলতি মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কে। তাতে ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও বিশ্বনেতারা উপস্থিত থাকবেন।
অপর এক টুইট বার্তায় মালালা বলেন, ‘শিশুসহ প্রায় চার হাজার মানুষ জোরপূর্বক আটক ও দ- দেয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীরা গত ৪০ দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না, মেয়ে ঘরছাড়া হওয়ার ভয়ে ভীত। এমন খবর শুনে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ করে মালালা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী ছাড়াও অন্য নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা কাশ্মীরিদের দাবি শুনুন, সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করুন। শিশুরা যেন নিরাপদে স্কুলে ফিরতে পারে সেই সহায়তা করুন।’
গত সপ্তাহে মালালাকে কাশ্মীরের তিনজন মেয়ে বলেছে, ‘কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনার সবচেয়ে মোক্ষম শব্দ হলো ‘‘নীরবতা’’। আমাদের সঙ্গে কী হচ্ছে এটাও জানার কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই। আমরা সবাই শুধু জানালার বাইরে সৈন্যদের বুটের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। পুরোটাই ভীতিকর।’
রাজনাথ সিংয়ের হুঁশিয়ারি
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ দমন করা উচিত, অন্যথায় কেউ এটিকে টুকরো টুকরো করে দিলে কেউ আটকাতে পারবে না।’ রাজনাথ সিং আরও বলেছেন, ভারতের সংখ্যালঘুরা নিরাপদ ছিল, নিরাপদে আছে, নিরাপদে থাকবে। ভারত বর্ণ বা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করে না। রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তান কাশ্মীর থেকে ৩৭০ বাতিলের সিদ্ধান্ত হজম করতে পারছে না। পাকিস্তান জাতিসংঘে গিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল।
সীমান্ত রক্ষায় ১২২ শহিদ স্মরণে কর্মসূচিতে বক্তব্যে রাখতে গিয়ে গত শনিবার রাজনাথ সিংহ বলেছেন, “পাকিস্তানের দিকে থেকে যদি কোনও অনুপ্রবেশ ঘটে তবে, আমাদের সেনাবাহিনীও এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।” কোনও অনুপ্রবেশকারী ভারত থেকে জীবিত ফিরে যাবে না।
তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর লোকদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা যেন নিয়ন্ত্রণের সীমানা অতিক্রম না করে। কারণ আমাদের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। যদি তারা সীমান্ত অতিক্রম করে এখানে চলে আসে তবে, তারা আর ফিরে যেতে পারবে না। ইমরান খান শুক্রবার মুজাফফরাবাদে বক্তব্য রেখে বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তানের জনগণকে অনুরোধ করেন, যাতে তারা এলওসি-র দিকে অগ্রসর না হন।
রাজনাথ সিং আরও বলেছেন, পাকিস্তান কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অপসারণের ভারতের সিদ্ধান্ত হজম করতে পারছে না এবং তিনি এই বিষয়টিকে জাতিসংঘের কাছে বিভ্রান্ত করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে স্বাধীনতার পর থেকে সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানে শিখ, বৌদ্ধ ও অন্যদের বিরুদ্ধে অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি এদিন বলেন যে, পাকিস্তানকে বিভক্ত করার দরকার নেই, তারা নিজেই ভেঙে যাবে। পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বন্ধ করা, অন্যথায় কেউ এটিকে ভেঙে ফেলা থেকে বিরত থাকতে পারে না।
Check Also
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …