জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বোঝা বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চল

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা:   জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্থিক সঙ্কটের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করছে বাংলাদেশের গ্রামে বসবাসকারী দরিদ্ররা। সরকার বা দাতা সংস্থাগুলোর চেয়ে এ লড়াইয়ে তাদেরকেই বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যেটুকু অর্থ তাদের থাকে তাও এভাবে খরচ হয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক গবেষণায় এসব কথা বলা হয়েছে। এ গবেষণাটি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি)। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র দেশ। নিচু ভূমিতে অবস্থিত প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বাস এখানে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে উপকূলীয় গ্রামগুলো রয়েছে হুমকিতে।

প্রথমবারের মতো মানুষ বাড়িঘর নির্মাণে কি পরিমাণ অর্থ খরচ করে সে বিষয়ে নজর দেয়া হয়েছে ওই গবেষণায়। তাতে দেখা গেছে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারগুলো বছরে মোট প্রায় ২০০ কোটি ডলার খরচ করে। পক্ষান্তরে জলবায়ু পরিবর্তন খাতে গ্রামীণ এলাকায় ২০১৮-১৯ সালে ঢাকার বাজেট ছিল ১৪৬ কোটি ডলার। আইআইইডির রিপোর্ট অনুসারে এক্ষেত্রে বছরে আন্তর্জাতিক অর্থ সহযোগিতার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সামিট শুরু হবে কয়েকদিনের মধ্যে। এতে অংশ নেবে বিভিন্ন দেশের সরকার, বাণিজ্যিক নেতারা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। ওই সামিটের আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আইআইইডি। এর পরিচালক অ্যান্ড্রু নর্টন এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই গবেষণায় এক উদ্বেগজনক ভারসাম্যহীনতা ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে খরচের ভার শুধু দরিদ্র মানুষগুলোর কাঁধে পড়বে- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তনখাতে দেয়া অর্থ, তা যেন সেসব মানুষের হাতে যায়- এটা নিশ্চিত করতে আরো অনেক কিছু করতে হবে।

বাংলাদেশের গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো তাদের খাদ্য কেনার পরিবর্তে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনঃনির্মাণে অর্থ খরচ করছে। মারা যাওয়া পশু অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া শস্যের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করছে। বন্যার পানির হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা তাদের বাড়িগুলো উঁচু করতে অর্থ ব্যয় করছে। এক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক উৎস থেকে তারা উচ্চহার সুদে টাকা ধার নিচ্ছে। এর ফলে ওইসব মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।

রিপোর্টে একজন মোহাম্মদ নান্নুর কথা তুলে ধরা হয়েছে। পদ্মা নদীর ঘূর্ণায়মান গতি গত বছর তার বাড়িঘর গ্রাস করেছে। তিনি বলেছেন, বন্যার পর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি হার সুদে টাকা ধার নিয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য। ৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ নান্নু বলেছেন, বাড়িঘর ও সহায়সম্বল হারিয়ে আমি এখন শূন্যহাত। স্থানীয় মেয়র শহিদুল ইসলাম বলেছেন, হাতেগোনা কিছু মানুষকে নতুন বাড়িঘর নির্মাণে সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাকি শত শত পরিবার ভাড়া বাড়িতে অবস্থান করছেন অথবা শহরে চলে গেছেন।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেলে রয়েছেন বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ আতিক রহমান। তিনি এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতি বছর দেশের নাগরিকরা এবং সরকার যে পরিমাণ অর্থ এ খাতে ব্যয় করে ২০০ কোটি ডলার হলো তার ভগ্নাংশ মাত্র। এ হিসাব অনেক কম করে দেখানো হয়েছে। স্বাস্থ্য, জমির উর্বরতা ও পশু সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট এমন কিছু ক্ষতি আছে যা টাকার অংকে মাপা যায় না।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।