ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনোয় অভিযান যুবলীগ নেতা খালেদ ভূঁইয়াসহ গ্রেফতার ১৪২
রাজধানীর ফকিরাপুলেল অবৈধ ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযান, ১৪২ জন আটক। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া (ইনটেসেট) -সংগ্রাম
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে তারা গ্রেপ্তার করেন।
এদিন দুপুরের পর গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র্যাব সদস্যরা। সন্ধ্যায় ওই ক্লাব থেকে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবে পাওয়া যায় মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। সেখান ২০ লক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার করা হয় বলে সারোয়ার বিন কাশেম জানান। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযান নামে র্যাব। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাদাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা ‘শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ’ বলে মন্তব্য করেন। “প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে।”
যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, এ ধরনের কোনো খবর তাদের কাছে নেই।
র্যাবের অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের সময় খালেদ মাহমুদের কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এর একটির লাইসেন্স নেই। অপরটির লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালান র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম ও র্যাব-৩ এর একটি দল। র্যাবের অভিযানে ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সেখানে অবৈধ জুয়া ও মদ পানের আসর জমিয়েছিলেন।
সারওয়ার আলম বলেন, র্যাবের কাছে অভিযোগ আছে এই ক্লাবে গত আট মাস ধরে অবৈধ আসর বসত। অভিযানের সময় তাঁরা দেখতে পান, ক্লাবের নিচ তলায় যন্ত্রের মাধ্যমে জুয়া খেলা (ক্যাসিনো) চলছে। এ ছাড়া জুয়া খেলার ফাঁকে ফাঁকে মদ পান হচ্ছে।
সারওয়ার আলম জানান, যারা এই ক্লাবে এসেছে তারা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের মদ পানের লাইসেন্স নেই। তিনি জানান, ইয়ংমেনস ক্লাবেরও মদ বিক্রির লাইসেন্স নেই।
সারওয়ার আলম সন্ধ্যার পর আরও বলেন, এখন পর্যন্ত জুয়া খেলায় ব্যবহার হওয়া ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁদের জেল-জরিমানা করা হবে। অভিযান আরও চলবে।
র্যাব সূত্র জানায়, দোতলা বিশিষ্ট ওই ক্লাবের নিচ তলায় ছিল ক্যাসিনো। আর পাশের একটি কক্ষে ছিল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জুয়া খেলার ব্যবস্থা। এই দুই জায়গা থেকেই ওই ১৪২ জনকে আটক করা হয়।
ক্যাসিনো থেকে আটক শতাধিকের দন্ড
ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে আটক ১৪২ জনকে কারাদন্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানে এদের আটকের পাশাপাশি সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, মদের বোতল ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে বলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছয়জন কর্মচারীসহ ৩১ জনকে এক বছর এবং বাকিদের ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর ম্যানেজার একজন নেপালি। অভিযানের খবর পেয়ে তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।