আকরামুল ইসলাম: নব্বই দিনের অনুমোদিত সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি চলছে পাঁচ বছর। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। অনুমোদিত কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। তবে অজ্ঞাতকারণে সম্মেলন হয়নি গেল পাঁচ বছর। কমিটি অনুমোদনের পর ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি একটি মাত্র বর্ধিত সভার আয়োজন করে এ আহবায়ক কমিটি। সেই থেকে অদ্যবদি জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির কোন সাংগঠণিক সভাও আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর আর্শিবাদপুষ্ট হওয়ায় জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়নি আজও। জেলা থেকে দেওয়া উপজেলা কমিটিগুলোতে নেওযা হয় মোটা আংকের টাকা। এসব কারণে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। এমন অভিযোগ জেলা যুবলীগের একমাত্র যুগ্ম আহবায়কের।২০১৪ সালের অনুমোদিত কমিটিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটি ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ইং তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা শাখার উপরোল্লিখিত আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে। এই কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা শাখার সম্মেলন সমাপ্ত পূর্বক জেলা শাখার সম্মেলন সম্পন্ন করবে।
তবে নির্দেশনা শুধু কাগজ কলমে থাকলে বাস্তবতায় নেই। গত পাঁচ বছর যুবলীগের কোন সম্মেলন না হওয়ায় রাজনৈতিক মাঠ থেকে এক প্রকার দূরে সরে রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা। সুযোগের অপেক্ষায় থাকলেও সুযোগ মিলছে না তাদের। বৃহৎ এ দলটির একক নেতা আব্দুল মান্নানের আধিপত্যের কারণে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের চরম অসন্তোষ আর হতাশা।
সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের নব্বই দিনের অনুমোদিত কমিটির একমাত্র যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম নান্টা জানান, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর জেলার আহবায়ক কমিটির অনুমোদনের পর ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি একটি মাত্র বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আজ পর্যন্ত কোন সভায় হয়নি। বর্ধিত সভাটির পর আহবায়ক আব্দুল মান্নান কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘরে বসে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কমিটি দিতে শুরু করে। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয় অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে। বিষয়টি কেন্দ্রে একাধিকবার জানিয়েও কোন ফল হয়নি। এমনকি লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হয়নি।
যুবলীগের এ নেতা আরও জানান, আহবায়ক আব্দুল মান্নান সর্বত্র আস্ফালন করে বলে বেড়ান, চৌধুরী সাহেব (যুবলীগ চেয়ারম্যান) যতদিন পদে থাকবে ততদিন আমি থাকবো। কারো কিছু করার থাকলে কেউ করুক। জেলা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় বা মতামত না নিয়ে আহবায়ক আব্দুল মান্নান একক সিদ্ধান্তে বানিজ্যের মাধ্যমে উপজেলা কমিটিগুলো করেছেন। অনেক জায়গায় এক কমিটি ২/৩ বার করে করা হয়েছে টাকার বিনিময়ে। এমনকি তার টাকার আগ্রাসী মনোভাব থেকে রেহায় পায় না ইউনিয়ন কমিটিও। এসব দেখবে কে ? আওয়ামী লীগ নেতাসহ জেলার সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আব্দুল মান্নানের চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বহু অপকর্মের স্বাক্ষী। তবে তারাও নীরবতা পালন করছে গেল পাঁচটি বছর।
জেলা যুবলীগের সাধারণ
জেলা যুবলীগের অন্যমত সদস্য মীর মহিতুল আলম জানান, দীর্ঘদিন জেলা যুবলীগের কোন সম্মেলন হয় না এটা একটা ওপেন সিক্রেট ঘটনা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ রয়েছে। আমি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের অপকর্ম আমি পছন্দ করি না।
যুবলীগের এ নেতা আরও বলেন, যুবলীগ আহবায়ক আব্দুল মান্নানে বহু অপকর্মের প্রমাণসহ কেন্দ্রে দিয়েছি কিন্তু কেন্দ্র কোন কর্ণপাত করেনি। বার বার সম্মেলন করার জন্য বলেছি কিন্তু দেয়নি। এসব ঘটনা নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে থাকলে কেন্দ্র কোন সুরহা করেনি। আমি চাই সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের একটি সুন্দর কমিটি হোক। নেতৃত্ব বিকশতি হোক। অজ্ঞাত আর অদৃশ্য কারণে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। যার কারণে সাংগঠণিকভাবে বিকশিত হচ্ছে না সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগ।চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষের কথা জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ জুয়েল হাসান বলেন, সাতক্ষীরায় যুবলীগের এক নেতা। আহবায়ক আব্দুল মান্নান ছাড়া আর কোন নেতা নেই। গত পাঁচ বছরে আহবায়ক থেকে সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে সভাপতি পরিচিত লাভ করেছে আব্দুল মান্নান। আহবায়ক হয়ে সম্মেলন বা কোন কমিটি ছাড়াই সভাপতি হয়েছেন আব্দুল মান্নান। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় তবে কমিটির সাধারণ সম্পাদক কে ? আর বাকি পদগুলোতে কারা। এক কথায় অগঠনতান্ত্রিকভাবে চলছে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগ। সম্মেলন না হওয়ার কারণে সুযোগ পাচ্ছে না সাবেক ছাত্র নেতারাও। সাবেক সকল ছাত্রনেতারা চায় সাতক্ষীরায় যুবলীগের সম্মেলন হয়ে নতুন নেতৃত্ব আসুক।
এসব বিষয়ে জানতে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।http://dailysatnadee.net