আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরাসহ সারাদেশর ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো বিলুপ্তির পথে।বর্তমান সরকারের আমলে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি, দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও আলিয়া মাদরাসাগুলোর ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলো, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা অবহেলার শিকার হওয়ায় এ ধারায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ একটি জাতীয় দৈনিকে ৩০ জুন, ২০১৯ প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে আসে। সে রিপোর্টেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারাকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার্থী কমতে থাকার বড় একটি কারণ হলো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে হাই স্কুলে ভর্তি হয়। প্রতিটি হাই স্কুল এলাকায় রয়েছে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি হাই স্কুলের শিক্ষার্থী জোগান দিচ্ছে চার-পাঁচটি প্রাইমারি স্কুল। ফলে হাই স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর অভাব হয় না। কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি (প্রাথমিক স্তরের) মাদরাসাগুলোর শিক্ষকরা যুগের পর যুগ ধরে এমপিও পাওয়ার আশায় থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়ায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো অস্তিত্ববিহীন হয়ে যাচ্ছে বলে দাখিল (মাধ্যমিক) মাদরাসাগুলো ছাত্র সংকটে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। ছয় হাজার ৮৪৮টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় ৩৪ হাজার শিক্ষকের মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসার ছয় হাজার ৭৬ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত। তাও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত ৫০০ টাকা পেতেন এবং বর্তমান সরকারের বদান্যতায় দুই হাজার ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অনেক ইবতেদায়ি মাদরাসার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে এরই মধ্যে। হাজার হাজার শিক্ষক কোনো বেতন-ভাতা না পেয়েই অবসর গ্রহণ করেছেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে একই পরিপত্রে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছিল রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু একই সময় রেজিস্ট্রি করা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর শিক্ষকরা এখনো প্রাথমিকের স্কেল পর্যন্ত পাননি। যুগের পর যুগ ধরে বঞ্চিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তকরণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের মাদরাসা (আলিয়া) শিক্ষার সমস্যা সমাধানে ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল কাঠামো এবং বেতন-ভাতাদি বা অনুদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করে এই শিক্ষকদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমমর্যাদা প্রদান করেছে সরকার। কিন্তু সে নীতিমালা প্রণয়নের দুই বছর হতে চলেছে, এখনো তা কার্যকর হয়নি। সারাদেশের ন্যায় বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা মাসিক ৫শ টাকা হারে ভাতা পেয়ে আসছিল। অথচ ২০১৩ সালে রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হলেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তাই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের দাবীতে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি বঞ্চিত শিক্ষকদের নিয়ে তীব্র আন্দোলন করে আসছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে থাকছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন— |
Check Also
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …