ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলবে বলে নেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সম্মেলনে আসা নতুন নেতৃত্বে যাতে কোন অনুপ্রবেশকারী আসতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন। এতে তিনি চলমান অভিযান ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে নেতাদের নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিলের নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিযান চলবে। দলের তৃণমূল পর্যায়ের যে কমিটিগুলো হবে, আমাদের দলের মধ্যে যেন কোনো অনুপ্রবেশকারী না ঢুকতে পারে এবং নতুন যে কমিটি হবে সেগুলোতে যেন স্থান করে নিতে না পারে সে বিষয়ে তিনি সতর্ক থাকতে বলেছেন।
-0–
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আলোচনায় উঠবে তিস্তা এনআরসি রোহিঙ্গা ইস্যু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ভারত যাচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নোরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এ সফর। এ সময় বহুল আলোচিত তিস্তার পানি চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু, আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা নিয়ে আলোচনা হবে। এ সফরে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিক্ষা ও ভূমিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা থাকবেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ৩-৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ক‚টনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম সফর। সফরে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি হবে।
তিনি বলেন, নয়াদিলিতে ৩ ও ৪ অক্টোবর ২ দিনের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। প্রথম দিনে বিশ্বের ১০০টি বাণিজ্যিক ফোরামের সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও তিনি সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
৫ অক্টোবর সকালে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে থাকবে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানো এবং চোরাচালান বন্ধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাতায়াত আরও সহজ করা, সন্ত্রাসবাদ রোধ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতা বাড়ানো এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিংসহ নানা প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় মাননিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং উভয় দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির উদ্যোগ থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নৌপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা আছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘বিবিআইএন এমভিএ’ (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও রেল, বিমান ও সড়ক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
মন্ত্রী বলেন, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে কাঠামোগত চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতেও সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনের উদ্যোগ থাকবে। এছাড়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নৌপরিবহন, অর্থনীতি, সমুদ্র গবেষণা, পণ্যের মান নির্ধারণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ১০ থেকে ১২টি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ৫ অক্টোবর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং ৬ অক্টোবর কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ভারতের এনআরসির বিষয়টি অত্যন্ত আলোচিত। কিন্তু এটি চূড়ান্ত করতে ৩৪ বছর লেগেছে। আর বাস্তবায়ন করতে কতদিন লাগবে তা কেউ বলতে পারে না। তবে এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ সালে সীমান্তে ৫ থেকে ৬শ’ মানুষ নিহত হন। এখন সেটি ৩-৪ জনে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ ওপারে জমি দখল ও চুরি করতে গিয়ে নিহত হন। স্থানীয় লোকজনই পিটিয়ে মেরে ফেলছে। তবে আমরা চাই একজন মানুষও যাতে আর মারা না যান। ভারতীয় রাজনীতিকদের উসকানিমূলক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা নানা কথা বলেন। আমরা দেশটির সরকারের বক্তব্যের ওপরে আস্থা রাখতে চাই।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে চীনের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। মিয়ানমার, চীন ও বাংলাদেশ নিয়ে যৌথ গ্রু হয়েছে। চীনের আগ্রহেই রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। আমরা চীন ও ভারতকে বুঝিয়েছি যে, দীর্ঘদিন রোহিঙ্গারা এখানে থাকলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। এছাড়াও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের উত্থান হলে তাদের বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাখাইনে সমস্যার কারণে চীনের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ থেমে আছে।