ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জাবাল-ই-নূর ক্যাডেট মাদরাসা -আখতার হামিদ খান
শনিবার ১৭ এপ্রিল ২০১০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শিক্ষা জীবনব্যাপী এক প্রক্রিয়ার নাম। শিক্ষার সর্বজননী কোনও সংজ্ঞা না থাকলেও পৃথিবীর শিক্ষাবিজ্ঞানীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সংজ্ঞাগুলোকে পর্যালোচনা করে বলা যায়- ‘মানুষকে মানুষ করার সার্বিক আয়োজনই শিক্ষা’। শিক্ষা মানবজীবন কুসুমিত-কোমল করে; পরিশীলিত, পরিমার্জিত ও সুরভিত করে। মানুষকে পশুত্বমুক্ত করে মানবীয় মূল্যবোধের বিকাশ ও সুকুমার বৃত্তির পরিচর্যা করে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ও শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ আমাদের সমাজজীবনের জন্য কতটা কল্যাণকর, কতটা ফলদায়ক তার বিশ্লেষণ বিদগ্ধজনেরা করবেন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাই, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রকৃত অর্থে আমাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনতে পারছে না; পারছে না মানুষকে মানুষের মর্যাদায় উন্নীত করতে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বড় ত্রুটি হলো যেসব প্রতিষ্ঠানে উন্নত শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে সেখানে জাতিসত্তার আদর্শের কোনও চর্চা নেই; আর যেখানে জাতিসত্তার আদর্শ আছে সেখানে শিক্ষা পদ্ধতি নেই। অথচ Without ideology education can’t prosper in the world. আদর্শের চর্চা ছাড়া শিক্ষা কখনও সফল হতে পারে না। যে জাতির শিক্ষাপদ্ধতিতে ঐ জাতির অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে না সে জাতি আত্মপরিচয় নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আর কারণে-অকারণে আমাদের অবস্থা এমনই রয়েছে। আজ তাই প্রয়োজন এমন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যেখানে একদিক যেমন কুরআন-হাদীসের জীবনমুখী চর্চা হবে; অপরদিকে বর্তমান বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যোগ্যতাও অর্জিত হবে। এ মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে পথচলা শুরু করে জাবাল-ই-নূর ক্যাডেট মাদরাসা। আমাদের দেশে মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে একটি অভিযোগ রয়েছে যে, আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য নাগরিক তৈরির বস্তুগত শিক্ষা দেয়া হয় না। বিশেষত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের কারিকুলাম স্কুল সমমানের হলেও বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও শিক্ষকের খুবই অভাব। প্রচলিত মাদরাসার ক্ষেত্রে এই সমস্যার কথা আমরা স্বীকার করি। প্রচলিত মাদরাসা শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষার মৌলিক ত্রুটিসমূহ বিশ্লেষণ করে উভয় শিক্ষাব্যবস্থার ভালো দিকগুলোর সমন্বয়ে ক্যাডেট মাদরাসার উদ্ভব হয়েছে। ক্যাডেট মাদরাসা এই ধারণা থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাবাল-ই-নূর ক্যাডেট মাদরাসা। এখানে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দেয়া হচ্ছে সমান গুরুত্ব। কাজেই একথা বলা যায়, একটি ভালো স্কুলে আপনার সন্তান যে বস্তুগত শিক্ষালাভ করবে ক্যাডেট মাদরাসায়ও তাই লাভ করবে। অধিকন্তু কুরআন ভিত্তিক শিক্ষা লাভের কারণে আপনার সন্তান হবে অধিকতর যোগ্য এবং দায়িত্বশীল। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে: আধুনিক বিশ্বের সকল প্রকার চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনের জন্য একদল যোগ্য, মননশীল ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক গড়ে তোলার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মাদরাসার বৈশিষ্ট্য: – সহীহ তেলাওয়াতে কুরআনের ব্যবস্থা। – শিশুদেরকে সহজ-সরল উপায়ে হাসি-আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান। – দ্বীনি শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয়। – উন্নত আমল-আখলাকের যথাযথ অনুশীলন। সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের (সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া) মাধ্যমে সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ। – বিভিন্ন ক্যাডেট মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় সাধন। – যোগ্য পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকমন্ডলী কর্তৃক পরিচালিত। – পৃথক হিফজুল কুরআন বিভাগ। – ব্যস্ত ও প্রবাসী অভিভাবকদের সন্তানদের দায়িত্ব গ্রহণ। – ইংরেজি ও আরবিতে কথোপকথনের যোগ্যতা অর্জন। – বোর্ড পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের জন্য বিশেষ তত্ত্বাবধান। – সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম। – গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ। – মেধাবীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ব্যবস্থা। – দ্বিতীয় শ্রেণী হতে কম্পিউটার শিক্ষা। – আমল-আখলাককে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে যথারীতি নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা এবং পরীক্ষার ফলাফলের সাথে শামিল করা হয়েছে প্রোগ্রামসমূহ – আবাসিক – অনাবাসিক – ডে কেয়ার – নূরানী মক্তব ও হিফজুল কুরআন বিভাগ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি: প্লে থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৩টি সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষাগুলোর মাঝখানে ২টি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া হয়। এছাড়াও সাপ্তাহিক পরীক্ষা নেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষা: ১ম শ্রেণী থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতিটি পরীক্ষা ৫০ নম্বরের। এ পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আরবি, সাধারণ জ্ঞান বিষয়গুলো থাকবে। ভর্তির নিয়মাবলী: ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। তবে আলোচনা সাপেক্ষে বছরের অন্যান্য সময়েও ভর্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। – ভর্তির আবেদনপত্র ও প্রসপেক্টাস ফি ২০০ টাকা। – তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। – ভর্তি ফরমের সাথে যা জমা দিতে হবে- ১. ২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজ এবং ২ (দুই) কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি। ২. প্রশংসাপত্র বা ছাড়পত্র। ৩. শিক্ষার্থী তথ্য ফরম। ৪. স্বাস্থ্য তথ্য। বেতন পরিশোধের নিয়মাবলী: প্রতিমাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করলে আবাসিকদের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা ও অনাবাসিকদের ক্ষেত্রে ২০ টাকা বিলম্ব ফিসহ পরবর্তী মাসের উক্ত তারিখে বেতন পরিশোধ করতে হবে। সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম – ইসলামী সঙ্গীত ও আবৃত্তি বিভাগ। – লেখক ফোরাম। – বিতর্ক সংসদ। – চারু ও কারুকলা বিভাগ। এছাড়াও আছে শিক্ষা সফর, বাংলা ডাবিংকৃত ইসলামী ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা – স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে দাখিল পর্যন্ত। – দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে সর্বোচ্চ শিক্ষা – স্থায়ী ক্যাম্পাসে মাদরাসা স্থানান্তরের পরিকল্পনা। – বালক-বালিকা সম্পূর্ণ পৃথক ক্যাম্পাস। – বালিকাদের জন্য হিফজুল কুরআন বিভাগ। – আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। – ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ এবং বৃত্তি প্রদান। বিশেষত কুরআন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। – জাবাল-ই-নূর এর পরিচিতিমূলক ওয়েবসাইট খোলা। – জাবাল-ই-নূর শিল্পী গোষ্ঠীকে জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম প্রধান শিল্পীগোষ্ঠীর মানে গড়ে তোলা এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অডিও, ভিডিও এবং সিডি বের করা। একাডেমিক কাউন্সিল ১. অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সাইফুল ইসলাম রফিক চেয়ারম্যান বিএ (সম্মান ১ম শ্রেণীতে ১ম), এমএ, ১ম শ্রেণী (স্ট্যান্ড) কামির (১ম শ্রেণী), বিএড (১ম শ্রেণী) ২. অধ্যক্ষ মোঃ তৌহিদ হোসাইন সদস্য সাভার মডেল কলেজ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক। ৩. মোঃ জিয়াউল হক সদস্য একাডেমিক প্রধান, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, সাভার ৪. সৈয়দ আবদুল আওয়াল সদস্য প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, সাভার মডেল কলেজ ৫. মোঃ হোসাইন উদ্দিন সদস্য সচিব অধ্যক্ষ, জাবাল-ই-নূর ক্যাডেট মাদরাসা ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা জাবাল-ই-নূর ক্যাডেট মাদরাসা একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সুবহে সাদিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত এ মাদরাসার শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। আজকের চরম নৈরাজ্যের দিনে অন্তত কিছু ভালো মানুষ তৈরি করাই হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটির মূল্য লক্ষ্য এবং তারা তা করে যাচ্ছে।