আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে অবৈতনিক পড়ালেখা এ খাতে ৩০ হাজার ৩৫৮ প্রতিষ্ঠানে লাগবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা * পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা * মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বাড়ছে ২০ শতাংশ

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে লেখাপড়া করবে। ওই শ্রেণি পর্যন্ত কাউকে স্কুল-মাদ্রাসায় টিউশন ফি দিতে হবে না। সরকারই এ খরচ বহন করবে। প্রাথমিকভাবে আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

পরের বছর সিদ্ধান্তটি সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর একটি শ্রেণি অবৈতনিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হবে। পাশাপাশি শিক্ষার অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যকর অব্যাহত রাখা হবে।

তবে উপবৃত্তির আওতাও বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হবে। বর্তমানে একটি শ্রেণির ৪০ শতাংশ উপবৃত্তি পাচ্ছে।

বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক লেখাপড়া করছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তিও পাচ্ছে। বিপরীত দিকে মাধ্যমিক স্তরে টিউশন ফি দিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ ছাত্র, বাকিরা ছাত্রী।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ছাত্র এবং ৪৫ শতাংশ ছাত্রী উপবৃত্তি পাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক স্তরের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অবৈতনিক করতে চান। শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন, ভিশন-২০৩০ এবং ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে ঝরেপড়া রোধ এবং মান অর্জনই অবৈতনিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। এজন্যই পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করতে চান তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। এ লক্ষ্যেই প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির লেখাপড়া অবৈতনিক করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

সরকারের উল্লিখিত প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ৬ অক্টোবর বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সিনিয়র সচিব। ওই বৈঠকে সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে টিউশন ফি সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিশেষ করে কোন পদ্ধতিতে এবং কীভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির টিউশন ফি পরিশোধ করা যায়, তা আলোচনা করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসইডিপি) আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবৈতনিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। প্রাথমিকভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার চিন্তা ছিল। সেটা অনুযায়ী চলতি বছরই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি পাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্বের কারণে এখন আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেই হিসাবে ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু হবে।

সমন্বিত উপবৃত্তি এবং অবৈতনিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা চালুর লক্ষ্যে সরকার ‘সমন্বিত উপবৃত্তি কার্যক্রম ও এসডিজি-৪ (শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা)’ শীর্ষক একটি কৌশলপত্র ইতিমধ্যে তৈরি করেছে।

এতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষক দল বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরেছে। পাশাপাশি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনের ব্যয় আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়।

এরপর সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিভিত্তিক মোট কত টাকা সরকারকে ব্যয় করতে হবে সেটি বের করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্কুলের টিউশন ফি ও অন্যান্য ব্যয় হিসাবে আনা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অবৈতনিক শিক্ষার জন্য সরকারের দেয়া ফি প্রত্যেক স্কুল-মাদ্রাসা একই হারে টিউশন ফি নেবে। সেই ফির অর্থ সরকার শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাবে। শিক্ষার্থী তা স্কুলে জমা দেবে। অথবা, ধার্য টিউশন ফি সরকার সরাসরি প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে।

সরকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১শ’, সপ্তমে ১৫০ টাকা; অষ্টম শ্রেণি ২শ’ টাকা; নবম ও দশম শ্রেণিতে যথাক্রমে ৩শ’ ও ৫শ’ টাকা করে টিউশন ফি দেয়ার চিন্তা করছে। এছাড়া একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫শ’ টাকা প্রস্তাবিত টিউশন ফি। সেই হিসাবে আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে গেলে সারা দেশে লাগবে ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

সরকার ইতিমধ্যে সম্ভাব্য শিক্ষার্থী সংখ্যাও নিরূপণ করেছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে (তিন শ্রেণিতে) ২০২১ সালে ৮০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৩ জন এবং ২০২৫ সালে ৯০ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫০ জন লেখাপড়া করবে। অপরদিকে নবম-দশম শ্রেণিতে ২০২১ সালে শিক্ষার্থী হবে ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৯ জন।

২০২১ সালে সারা দেশে নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সরকারের এ খাতে ব্যয় হতে পারে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (নবম-দশম শ্রেণি) পেছনে ব্যয় হতে পরে ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থী হবে। তাদের জন্য ব্যয় হবে ৮ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

এসইডিপির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ করার খাতে ইতিমধ্যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকার চায় আগামী বছরই অবৈতনিক শিক্ষা কার্যকর হবে এবং কোনো শিক্ষার্থীকেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে টিউশন ফি (বেতন) দিতে না হয়। এজন্যই আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অংশীজনদের নিয়ে বসছি।

লেখাপড়ার পেছনে একজন শিক্ষার্থীর দুই ধরনের ব্যয় আছে। একটি হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক অন্যটি পারিবারিক। পারিবারিক ব্যয়ের মধ্যে খাতা, কলম, জামা-কাপড় ইত্যাদি আছে। অবৈতনিক শিক্ষার ধারণায় সরকার শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বহন করবে।

অপরদিকে সরকার বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমপিও বাবদ অর্থ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে উপবৃত্তি বাবদ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ টিউশনসহ অন্যান্য ফি বাবদ আদায় করে। কিন্তু সেই অর্থের প্রায় সবই প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ব্যয় করে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।