ক্রাইমবার্তা রিপোটঃবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ।
এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
নিজ দেশপ্রেমের কথা বলার পরেও একজন মানুষকে হত্যা করার বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষ যেমন বিস্মিত হয়েছে, তেমনি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মানুষও বিস্মিত।
ভারতের জয়দেবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনুশ্রী রায় এ হত্যার প্রতিবাদ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দুই বাংলায় সেই স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু দেয়া হলো-
যদিও আমি ভারতীয় তারপরও বাংলাদেশের প্রতি আমার আলাদা একটা টান রয়েছে।
কারণ আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশেরই মানুষ ছিলেন ৪৭’র দেশভাগের পর ভারতে চলে আসেন।
বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক এটা আমি সবসময় চাই। শুনলাম ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।
স্ট্যাটাসটা আমি পড়লাম, নিজের দেশের স্বার্থ নিয়ে লিখার জন্য কিভাবে নিজের দেশেরই লোক একটা ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে।
সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে মানুষ খুন করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিভাবে এমন একটা দেশে মানুষ বাস করে!
বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের সেই স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল
যুগান্তির রিপোর্ট ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:১২ | অনলাইন সংস্করণ
ভারতকে পানি, গ্যাস ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, সেটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার আলোচিত স্ট্যাটাসটি ৫৩ হাজার শেয়ার হয়েছে।
এতে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতি মিনিটেই বাড়ছে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের সংখ্যা।
ফাহাদের সেই স্ট্যাটাস-
‘‘১. ৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউসেক মিটার পানি দেব।’
৩. ভারতকে গ্যাস দেয়ার সমালোচনা করে বুয়েটের এই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রফতানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’’
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।