নিজস্ব প্রতিনিধি: শহরের সংগ্রাম টাওয়ারে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার ৮ জন ছাড়াও সদ্য দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুবলীগ নেতা তুহিনুর রহমান তুহিনকেও আসামী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরষ্পর যোগসাজসে সংগ্রাম টাওয়ারে অবস্থিত ঘটনাস্থলকে পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার করে জনসাধারণকে পতিতাবৃত্তির জন্য আহবান করা। ঘটনাস্থল থেকে ৩০পিস কনডম উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার বাদী সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. ফরিদ হোসেন।
এদিকে পালাতক যুবলীগ নেতা তুহিন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের একাধিক নেতা। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারেনি। শহরের প্রাণসায়র খালধারে সরকারি খাস জমিতে তাদের বসবাস। তার পিতা মৃত আতিয়ার রহমান ছিলেন ড্রাইভার এবং মা খোদেজা পারভীন যাত্রা শিল্পী। কয়েক বছর আগেও অভাব-অনটনের সংসার ছিল তাদের। হালে করে কয়েক বছর যুবলীগে যুক্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। মাদক চোরাচালান, জুয়া এবং দেহ ব্যবসার মাধ্যমে সে টাকা পয়সার মালিক হয়েছে। বিশেষ করে তার হোটেলে খদ্দের ঢুকিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের গোপন ভিডিও করে মানূষকে ব্লাকমেলিং করা তার প্রধান পেশা। একাজে জেলা যুবলীগের নেতারাও তাকে সহায়তা করেন। তাদের অনেকে সন্ধ্যার পর সংগ্রাম টাওয়ারে নিয়মিত যাতায়াত ও মদ মহিলা নিয়ে ফুর্তিতে লিপ্ত হতেন। সে মটর সাইকেল চুরি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। সেই মামলা বর্তমানে জজকোর্টে চলমান। যুবলীগ নেতারা আরো জানান, সরকারি খাস জমিতে থেকে যে কিছুদিন আগেও ট্রাকের হেলপারি করতো সে এই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কিভাবে মায়ের নামে ৩০ লাখ টাকার এফডিআরসহ বহু টাকা ও সম্পদের মালিক হলো।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি সংগ্রাম টাওয়ারের নীচ তলায় অবস্থিত অভ্যর্থনা কক্ষ এবং ৫০১ ও ৫০২, ৪০৫ ও ৪০৬ নং রুমে কতিপয় ব্যক্তি পরস্পর যোগসাজসে পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অশালিন ভাবভঙ্গি দেখিয়ে স্থানীয় জনসাধারণকে আহবান করছে। এসংবাদ পেয়ে উক্ত হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে ৮জনকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় আরও ৪/৫ জন পালিয়ে যায়। এসময় হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষের টেরিলের ড্রয়ার থেকে ১৮পিছ কনডম, ৫০৪ নং রুম থেকে ৪পিছ কনডম, ৪০৬ নং রুম থেকে ৩পিছ কনডম, ৫০১ নং রুম থেকে ৩পিছ ও ৫০২ নং রুম থেকে ২পিছ কনডম উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো যশোরের মনিকতলা এলাকার রাসেল উদ্দিনের স্ত্রী সৃষ্টি আক্তার লতা (২৩), কলারোয়ায়ার কাজিরহাটের আবু বকর ছিদ্দিকের ছেলে আব্দুর রহমান (২৬), খুলনার জিরো পয়েন্টের আব্দুল মজিদের ছেলে ইউনুছ আলী (৩৩), ইটাগাছার আতিয়ারের ছেলে শাহিনুর (৩৪), একই এলাকার রেজাউলের ছেলে মাসুম বিল্লাহ (৩০), খড়িবিলার রফিকুলের ছেলে রনি (২৩), ইটাগাছার আহম্মদ আলীর ছেলে মিলন গাজী (৩০), গড়েরকান্দার রফিকের ছেলে ইব্রাহিম ওরফে রাজা। এছাড়া তুহিনুর রহমান তুহিনকে পালাতক দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, উক্ত তুহিনুর রহমান তুহিন সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের মাহি গ্রুপের সভাপতি। হোটেলে অভিযানের খবর প্রকাশের পর সোমবার তাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তবে তার ফেসবুক স্টাটাসে জেলা যুবলীগের সদস্য হিসেবেও সে নিজেকে দাবি করেছে।