সাতক্ষীরা সীমান্তের ইছামতি নদীতে স্ব স্ব জলসীমায় দুই বাংলার মিলন মেলা

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সীমান্ত নদী ইছামতির বুকে স্ব স্ব জলসীমানার মধ্যে থেকে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই বাংলার মিলন মেলা। মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ সীমানায় বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে হাজারো ভক্তরা। অপরদিকে ভারতীয় সীমানায় প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে সেদেশের ভক্তরা। ইছামতি নদীর বুকে সুতা আর পতাকা টাঙিয়ে নির্ধারণ করা হয় সীমানা। কিন্তু উৎসবের আনন্দ সুতোয় আটকাতে পারেনি। সীমান্ত রেখা পার না হলেও দু’দেশের মানুষ হাত নেড়ে উপহার বিনিময় করে প্রকাশ করেছে পাস্পারিক সম্প্রীতি। ইছামতির ¯্রােতের টানে এপারের পানি ওপারে, ওপারের পানি এপারে আসলেও সুতোর টানে হয়নি নৌকা পারাপার।
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয় দু’দেশের মানুষ। এ উপলক্ষে সকাল থেকে ইছামতি নদীর দু’পারে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও স্ব স্ব জলসীমার মধ্যে নৌকা ভাসানোর কারণে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। সুতোর সীমানা পেরুতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যান দু’বাংলার মানুষ। তবে মিলন মেলার তরী ছিলো ভালোবাসায় পূর্ণ।
এবারের এ প্রতিমা বিসর্জনের মিলন মেলায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎ মিশ, দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গনি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন প্রমুখ।
এরআগে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ সমাবেশ করে দুই দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক কৌশল গ্রহণ করে। এর সাথে যুক্ত হয় দেবহাটা উপজেলা পরিষদ ও ভারতের টাকি পৌরসভা ।

মিলন মেলায় অংশ নিয়ে দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গনি বলেন, বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি হিসাবে দুই বাংলার এই মিলন মেলা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় একাকার হয়ে যায় সব ধর্ম বর্ণের মানুষ। তারা পরস্পরকে শারদীয়া শুভেচ্ছা জানান।
ভারতের একজন বলেন, প্রতি বছর আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি। এদিন দুই বাংলার মানুষ তাদের ভৌগলিক সীমানাকে পেছনে ফেলে একাকার হয়ে যায়। তিনি বলেন আজ উমাদেবী মর্ত্যধাম থেকে স্বামীগৃহে চলে যাচ্ছেন। আমরা মায়ের কাছে পুত্রং দেহি, ধনাং দেহি, মঙ্গল দেহি, শান্তি দেহি, ফল দেহি মন্ত্র পাঠ করে তাকে বিদায় দিতে এসেছি। তিনি চলে গেলেন কৈলাশধামে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।
ঘোটকে কৈলাশধাম থেকে চিরশান্তির বরাভয় নিয়ে মর্ত্যভূমিতে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। জাগতিক অসুর শক্তি, অপশক্তি, দুর্গতি ও অমঙ্গলকে পরাভূত করে দেবী ছড়িয়ে দিলেন মঙ্গল সুখ ও শান্তির ললিত বাণী। তিনি ধরাধামে দিয়ে গেলেন অঢেল সম্পদ, ফসল। পূরণ করে গেলেন ভক্তদের মনোবাসনা। মিলনমেলার মধ্য দিয়ে ‘মা তুমি আবার এসো’ এই আহবান রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদায় দিলেন জগজ্জননী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে।
কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নিজ নিজ সীমানায় বিসর্জন দেওয়া হয় বিভিন্ন মন্দিরের দেবী দুর্গাকে। দিনটির শুরু থেকে টাউনশ্রীপুর ও ভারতের টাকি সীমান্তে উভয় পাড়ে জনতার ভীড়ে ছিল মুখরিত। নদীর পাড়ে তিল পরিমান ঠাঁই ছিল না দুই বাংলার আনন্দ প্রিয় মানুষের। তাছাড়া নদীর বুকে দুই বাংলার শত শত নৌকা ও ট্রলারে চড়ে আনন্দ উপভোগ করে দর্শাণার্থীরা। দেবহাটার ইছামতি নদীর দুই পারে স্ব-স্ব দেশের জাতীয় পতাকা সম্মিলিত একটি সীমারেখায় অবস্থান করে দুই বাংলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। যেখানে বাংলাদেশ সীমারেখার দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)সহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপর দিকে ভারত সীমারেখার দায়িত্ব পালন করে বিএসএফ সহ ভারতীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সন্ধ্যা হতে না হতেই ওপার বাংলার টাকী পৌর সভার পাশ থেকে বিভিন্ন ধরনের আতশ বাজির ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে ইছামতি নদীর বুক।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।