কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’ সন্দেহে গণপিটুনি মাদক সেবন ও ব্যবসাসহ চলছে নানা অপরাধ

#    ক্যাম্পাসে থাকেন না প্রভোস্টরা
#    ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দু’টি বাহিনী সক্রিয়
#    খুলনার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ছাত্রাবাস (হল) ছাত্রলীগের দখলে
ক্রাইমর্বাতা রিপোট: খুলনা অফিস : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিভিন্ন হলেও দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হলের প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। থাকেন না ছাত্র কল্যাণ পরিচালকও। এর সুবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির সন্দেহে গণপিটুনি, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে করেই যাচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলের প্রভোস্টের কাজ ২৪ ঘণ্টা হলের দেখভাল করা। আর আবাসিক শিক্ষকদের কাজ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে হলে অবস্থানের সার্বিক তদারকি। আর ছাত্র কল্যাণের পরিচালকের কাজ হচ্ছে ছাত্রদের যাবতীয় বিষয়ে দেখভাল করা। কিন্তু তারা কেউ-ই রাতযাপন করেন না ক্যাম্পাসে। আর এই সুযোগে-ই হলে হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কুয়েট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের অধীনে ২০ টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট পাঁচ সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী থাকেন হলে।
কুয়েটে ছেলেদের জন্য ৬টি এবং মেয়েদের জন্য একটি মিলিয়ে মোট ৭টি আবাসিক হল রয়েছে। কিন্তু নিয়ম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করারও কেউ থাকে না। আর এ সুযোগে বেড়েই চলেছে এ হীন কাজ।
কুয়েটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, অমর একুশে হলের প্রভোস্ট ড. মো. আব্দুল মতিন, ড. এম এ রশীদ হলের প্রভোস্ট ড. সজল কুমার অধিকারী, লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আখতার, খান জাহান আলী হলের প্রভোস্ট ড. মো. জহির উদ্দীন, ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ড. মো. হাবিবুর রহমান ও রোকেয়া হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে রয়েছেন ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তবে তারা কেউ-ই ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না বলে জানিয়েছে হলের একাধিক সূত্র।
অভিযোগ রয়েছে, কুয়েট ছাত্রলীগের একাধিক নেতার পরোক্ষ মদদে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা চলছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ তাদের চিহ্নিত করতে পারছে না। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ফলে মাদকমুক্ত হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, রাতে কুয়েটে মাদক বিকিকিনির ঘটনা ওপেন সিক্রেটের মতো। কুয়েটে পুলিশ টহল দিতে পারে না- আর এ সুযোগকে কাজে লাগায় এক শ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ রশিদ হল, খান জাহান আলী, ফজলুল হক, অমর একুশে হল ও বঙ্গবন্ধু হলে মাদক সেবন চলে প্রকাশ্যে। সন্ধ্যার পর এ হলগুলোতে গেলে গাঁজার গন্ধ ভাসতে থাকে।
তারা বলেন, হলের প্রভোস্টরা ক্যাম্পাসে থাকেন না। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগায় মাদকসেবীরা। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশেই ফুলবাড়ীগেট এলাকায় কুয়েটের অবস্থান হওয়ায় পুলিশের নজরদারিও কম। যার কারণে মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে ছাত্রলীগ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন আন্দোলন হচ্ছে তখন কুয়েটে ছাত্রলীগের ভয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদও করতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা যদি কেউ তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে কিছু লিখছে সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিচ্ছে। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করছে না। আর মাদকসেবীদের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় বলে জানান তারা।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও ক্যাম্পাসে প্রভোস্টসহ ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের জন্য থাকার ব্যবস্থা নেই। এমনকি কেয়ারটেকারেরও থাকার জায়গা নেই। তাই সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদ আহম্মাদ স্বাক্ষরিত ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে খুলনার দু’টি পাবলিক এবং দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ মাদক ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই তালিকা অনুযায়ী, কুয়েটে মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছে গিলেতলার দক্ষিণপাড়ার আবু হানিফের স্ত্রী শাবানা বেগম, একই এলাকার আজমত আলীর ছেলে নূরে আলম খান, গিলেতলা মীরপাড়ার রজব আলীর খাঁর ছেলে মো. জামাত খাঁ, ফুলবাড়ীগেটের বাদশা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস, রংমিল গেটের ইউসুফ হায়দারের স্ত্রী রেখা, গাবতলার সৈয়দ মোশারেফের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল, একই এলাকার বাবুল মীরের ছেলে টুকু মীর, মীরেরডাঙ্গার শেখ আবদুল জলিলের ছেলে শেখ মোহাম্মদ এমদাদুল হক, ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী পূর্বপাড়া গ্রামের মো. ইসলাম শেখের ছেলে মো. রাজিব শেখ এবং একই গ্রামের নূরু শেখের ছেলে রাজু শেখ।
এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই থানায় আসার পর ছাত্রলীগ শিবির সন্দেহে ৪-৫জনকে পুলিশে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
‘তবে গত ৬ মাসে এ ধরনের কোনো ঘটনা কুয়েট ক্যাম্পাসে নেই। আর মাদকের বিষয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে কুয়েট ভিসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি, আলোচনা করেছি-কীভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ভিসিকে কুয়েটের পকেট গেট বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছি।’
শুধু মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা-ই নয়, অভিযোগ রয়েছে- ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট সন্দেহে কুয়েট ছাত্রলীগ একাধিকবার সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়েছে। শিবির সন্দেহে মারধোরও করেছে, দিয়েছে পুলিশে।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়াত হোসেন নয়নের সময় থেকে এসব অপকর্মের শুরু হয়। যা বর্তমান সভাপতি আবুল হাসান শোভন ও সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানও অব্যাহত রেখেছেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, দিনকে দিন কুয়েট প্রশাসনের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ কুয়েটে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত একাধিক ছাত্রকে শিবির সন্দেহে হলে ডেকে নিয়ে রাতভর নির্যাতন চালিয়েছে। হকিস্টিক, স্ট্যাম্প, রড দিয়ে উপুর্যপুরি আঘাত করা হয় রাতভর।
তারা বলেন, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সামান্য সন্দেহের উপর ভিত্তি করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় হলের নির্দিষ্ট কক্ষে। সাধারণ ছাত্রদেরও কারণে অকারণে ‘শিবির’ বলে নানা হয়রানি করা হয়। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ভর্তির পর বিভিন্ন সময়ে র‌্যাগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগের ছাত্র নামের গুন্ডা-পান্ডারাই এগিয়ে। যদিও নির্যাতনের শিকার কেউ ছাত্রলীগের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাহীন, রেজাউল ও মেহেদী নামের তিন ছাত্রকে ফেয়ারওয়েলের অনুষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতারা। পরে ফজলুল হকের একটি কক্ষে আটকে রাতভর তাদের মারধর করা হয়। ২৫ মার্চ সকালে ‘শিবির নেতা’ পরিচয় দিয়ে তাদের খান জাহান আলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওই রাতে নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ শাহীন ও রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা বা আমাদের পরিবারের কেউ কোনোদিন রাজনীতি করেনি। মারধরের পর আমাদের মোবাইল, ল্যাপটপ কিছুই ফেরত পাইনি। সবচেয়ে বড় কষ্ট সেই মামলায় এখনও হাজিরা দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এরপরের মাসেও চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। তবে ওই শিক্ষার্থী এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় তার নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪ জনকে বেদম মারপিট করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থীর চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি দুইজনকে একইভাবে নির্যাতন করে পুলিশে ধরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সন্দেহবশত মারধরের পর নিজেদের ‘জায়েজ’ করতে ছাত্রদের ওপর ‘জামাত-শিবির’ ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে সহজেই পুলিশ তাদের পুরাতন নাশকতা মামলায় আটক দেখিয়ে দেয়।
জানা যায়, কুয়েটে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে মারধর করা হয় ২০১৭ সালের ১ মে। ওই রাতে বিভিন্ন হলের ২১ জন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধু হলের গেস্ট রুমে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে ১৪ জনকে ‘শিবির’ বলে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়।
কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবুল হাসান শোভন বলেন, মানুষ কেউই ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। কেউ কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত আছে। পরীক্ষা খারাপ বা মানসিক দুশ্চিন্তায় মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। আমার নেতৃত্বে দুইবার মাত্র ৪জনকে শিবির সন্দেহে ধরা হয়েছে। আবার ছাড়াও হয়েছে ১৮ জনকে।
হলের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীদের ধরতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন নিজেই হলগুলোতে অভিযান চালান। এরপর তাদের শাস্তি দেন। আর সাধারণ সম্পাদক সেজান শেরে বাংলা হল ও একুশে হলে বাহিনী তৈরি করে তাদের দিয়ে কেউ ফেসবুকে সমসাময়িক কোনো বিষয়ে স্ট্যাটাস দিলে সেখানে হুমকি দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কেউ কোনো অপরাধ করলে কিংবা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রশাসন কিংবা পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা কে?
এসব বিষয়ে ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার বলেন, আড়ালে হয় কি না আমার জানা নেই। তবে আমি মাদকের বিরুদ্ধে কুয়েটের বর্তমান প্রশাসন জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে। কোনো ছাত্রকে সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে না তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসনকে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ বলেন, এখন ছুটির সময়। তাই প্রভোস্টরা সবাই বাড়ি গেছেন। অনেক শিক্ষার্থী ছুটি নিয়েও বাড়িতে চলে গেছে। সর্বোচ্চ মনে হয় ১০০ বা ১৫০ শিক্ষার্থী হলে আছে। পূজা শেষে আমাদের অফিস খুলবে রোববার। শনিবার রাত থেকে হয়তো রেগুলার হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সময়ের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এবিষয়ে জানি না। আপনি এ বিষয়ে ছাত্র কল্যাণের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
মাদকের ব্যাপারে উপাচার্য ড. সাজ্জাদ বলেন, আমি প্রভোস্টদের ইনফর্ম করবো, যাতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, কুয়েট থেকে বিভিন্ন সময় নাশকতা অভিযোগ এনে থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলারগুলো তদন্তকালে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ ও শিবির কর্মী হওয়ার প্রমাণ মেলে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তদন্তকালেও ভুক্তভোগীরা কেউই নির্যাতনের অভিযোগ করেননি। আর পুলিশও তদন্তে তাদের ওপর নির্যাতন করার কোনও প্রমাণ পায়নি।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খুলনায় স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ছাত্রাবাস (হল) ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হলে হলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের মারধর করে তারা হল থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের ভয়ে অনেকে হলে আসেন না। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস ও হলে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও মারধর করে। এছাড়া ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্যাম্পাস ও হলে হলে মাদক সেবনের ঘটনা ঘটে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্য ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে দেয়া হয় না।
খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হল, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় হল ও শহীদ মুর্তজা হল ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। তবে হলগুলোয় ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এ বিষয়ে খুমেক ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. আসানুর ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগ ও ইচিপের (ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ) নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকা- চালাচ্ছে। হলগুলোয় আমাদের আদর্শের শিক্ষার্থীরা থাকছেন।

সরকারি বিএল কলেজের সুবোধ চন্দ্র হল, কবি নজরুল হল, ড. জোহা হল, মহসিন হল ও শহীদ তিতুমীর হলের মধ্যে মহসিন হল ছাড়া অন্য সব হলে গত বছরও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছিলেন। কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল্যাহ দিপু বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করে হলগুলো থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠন স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকা- চালাতে পারে না। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা বসে। কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিশাত ফেরদৌস অনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। এখনও তারা হলে ফেরেননি। তবে ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের হলে সিট রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয়রা জোর করে হলে প্রবেশ করে মাদক সেবন করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে যারা নিয়মিত মিটিং-মিছিলে অংশ নেয় তাদেরকেই একমাত্র হলে আসন দেওয়া হয়। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের তিনটি আবাসিক ছাত্রী হলেও র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। সরকারি মুহসিন কলেজ চত্বরে ২০১৮ সালের ১ নবেম্বর দুপুরে অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আলমগীর হোসেনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা রওশন আনিজি অন্তু ও সাজ্জাদের দাবি, ওই আলমগীর শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।