সোনালি আঁশের রূপালী কাঠি সাতক্ষীরার কৃষকের আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে :৩৮ লক্ষ্য টাকার পাট কাটি বিক্রি

আবু সাইদ বিশ্বাস, ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা:‘সোনালি আঁশের রূপালী কাঠি সাতক্ষীরার কৃষকের আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে। পাটের দাম ভাল না পেলেও পাট কাঠির দাম পেয়ে বেজায় খুশি চাষীরা। তাই পাট কাঠি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। প্রতি দিন হাজার হাজার পাট কাঠির আটি বেচা কেনা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকায়। বর্তমানে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ জেলায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। এর পরও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি থাকায় এ জেলার পাট কাঠি পাশ্ববর্তি জেলা সমূহে সরবরাহ করা হচ্ছে। পাট কাঠি নিয়ে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু রেছে। পাটকাঠি থেকে চারকোল উৎপাদন ও রপ্তানির দাবী এখানার পাট চাষীদরে। এতে সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হবে লক্ষাধীক মানুষের কর্মসংস্থান। উপার্জিত হবে  বিপুল পরিমাণের রাজস্ব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। বিঘার হিসাবে তা দাড়ায় প্রায় ৯৪ হাজার বিঘা।
সদরের বাবুলিয়া গ্রামের আজিজ সরদারের ছেলে আজহারুল। চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে। তার হিসাব মতে ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে একশ আটি পাট কাঠি উৎপাদন হয়েছে তার। প্রতি আটি পাট কাঠি মাঠ থেকে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা প্রতি। এতে তার বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকার পাট কাঠি বিক্রি হয়েছে। একই অবস্থা জেলার বেশির ভাগ জায়গাতে। সেই হিসাবে জেলাতে এবছর ৯৪ হাজার বিঘা জমিতে প্রায় ৩৮ লক্ষ্য টাকার পাট কাটি বিক্রি হয়েছে। জেলাতে চারকোল কারখানা থাকলে পাট কাঠির দাম বেশি পেত বলে দাবী পাট চাষীদের।
বর্তমানে দেশে অন্তত ৩০টি চারকোল কারখানা রয়েছে। ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান পাটকাঠি থেকে কয়লা উৎপাদন করছে। জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও গাজীপুর জেলায় এসব কারখানা অবস্থিত। নতুন করে সাতক্ষীরা জেলাতে চারকোল তৈরির মিল স্থাপনের দাবী উঠেছে।
সূত্রে মতে দেশে ২০১২ সালে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। সে বছরই চীনে চারকোল রপ্তানি শুরু হয়। চারকোল ম্যানুফ্যাক্সারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মির্জা জিল্লুর রহমান জানান, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয় । এর মধ্যে যদি ৫০ ভাগ পাটকাঠি চারকল উৎপাদনে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন চারকল উৎপাদন সম্ভব হবে। যা বিদেশে রপ্তানী করে ২ হাজার ৫’শ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যে খানে সাতক্ষীরা জেলার পাট কাঠির রয়েছে অপার সম্বভনা।
বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে কয়লা উৎপাদিত হচ্ছে। এটি ফেসওয়াশ, ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কানাডা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশে এ কয়লার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে সূত্র জানায়। ২০১৬ অর্থবছরে এখাত থেকে ১৫০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় হয়েছে।
পাট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল পাটখড়ি থেকে তৈরি চারকোলের নানা সম্ভাবনার বিষয়ে।
চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ ও প্রসাধণপণ্য, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়। চারকোল বা কয়লা ছাড়াও পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা যায়। ইউরোপে ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, সাতক্ষীরায় খুব ভাল মানের পাট উৎপাদন হয়। জেলাতে চারকোল তৈরির মিল স্থাপনের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা উদ্যোগ নিলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। সরকারের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমান সরকার পাট পণ্যের উপর অথিক গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ বিশ্ব বাজারের দিন দিন পাটের চাহিদা বাড়ছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।