ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক, ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টোক সড়কে বানার নদীর উপর সেতু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেনের ফ্লাইওভার, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ১৩টি সেতু, পটিয়া বাইপাস সড়ক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৬ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে ভোমরা স্থল বন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮৩.৫১ কোটি টাকা। ৭.৩ মিটার প্রস্থের ২৩.৮৫ কিলোমিটার মহাসড়কটিতে ৩টি ব্রিজ, ৫০ টি কালভার্টও নির্মাণ করা হয়।
২০১০ সালের ২৩ জুলাই শ্যামনগর মহাসীন ডিগ্রী কলেজ মাঠে এক জনসভায় সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক তালা-কলারোয়ার এমপি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি এমএ জব্বারের প্রচেষ্ঠায় ১১৬ কোটি টাকার ব্যয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি- একনেক। যদিও পরবর্তীতে একটি প্রভাবশালী চক্র একজন ব্যক্তির স্বার্থে ভোমরা স্থল বন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পাল্টে ফেলে। ভোমরা স্থল বন্দর থেকে আলীপুর চেকপোস্ট এবং আলিপুর চেকপোস্ট হতে বিসিক শিল্প নগরীর পরিবর্তে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে বিসিক শিল্পনগরী করিয়ে নিতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের ডিজাইন পাল্টে ফেলার ঘটনা নিয়ে সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামও গড়ে তোলে।
এদিকে আজ প্রধানমন্ত্রী আরো যে সব প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন তারমধ্যে ৩৩৮.৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেনের ফ্লাইওভার প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বরাবর ১২৩৯ মিটার দৈর্ঘের একটি ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়ক বরাবর ৬১১ মিটার ৪ লেনের দুই ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়ক বরাবর ২.১৩ কিলোমিটার এবং ঢাকা বাইপাস সড়ক বরাবর ১.০৮৪ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ করা হয়।
ময়মনসিংহ- গফরগাঁও-টোক সড়কে বানার নদীর উপর ২৮২.৫৫৮ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ৩২৯০.৮০ লাখ টাকা (৩২ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা )। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের ইন্দ্রপুল থেকে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ প্রকল্প (পটিয়া বাইপাস সড়ক) বাস্তবায়নে খরচ হয় ৮৭.৭০ কোটি টাকা। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর পরিবর্তে ১৩ স্থায়ী কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হয়। এসব সেতুরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে প্রধানমন্ত্রী এসব এলাকার উপকারভোগীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন কাজ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। বক্তব্য নিরাপদ সড়ক প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি চালক, পথচারী থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ মোটেও সচেতন নয়। চালক থেকে শুরু করে সবার সচেতন হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্কুল থেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবন প্রান্ত থেকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় পাশে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। উদ্বোধন হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ নিয়ে ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরা প্রান্ত থেকে কথা বলেন, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও একজন মসজিদের ইমাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ, সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, পুলিশ সুপার মোহম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম. উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীসহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, পেশাজীবীসহ বিভিন্নস্থরের মানুষ।