ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ফেসবুকে একটি বিভ্রান্তিকর পোস্টের সূত্র ধরে রোববার ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি। পুরো জেলায় থমথমে পরিস্থতি বিরাজ করছে। অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে।
বোরহানউদ্দিনে রোববার সমাবেশটি ডাকা হয়েছিল ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে। ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের সাংসদ আলী আজম মুকুল জানান, এমন নামে কোনো সংগঠনের কথা আগে শোনা যায়নি। তার সঙ্গে কথা হয় বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুমে। তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির খোঁজ নিচ্ছিলেন।
দ্বীপ জেলা ভোলা এমনিতেই শান্ত। কিন্তু বোরহানউদ্দিনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। রোববার সন্ধ্যা বেলাতেই আলেমদের নতুন আরেকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্যপরিষদ’ নামে এ সংগঠনটি ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পূর্ব ঘোষণা অনযায়ী সকাল ১১টায় ভোলা সদরের সরকারি স্কুল মাঠে তাদের একটি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক মিছিল ও সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মিছিল সমাবেশ করতে দেওয়া হবে।
ভোলা সদর থেকে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পথ চলার সময় কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি। রাস্তায় লোকজনের চলাচল নেই। সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য চার প্লাটুন বিজিবি, এক প্লাটুন কোস্ট গার্ড, বেশ কিছু র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছ। তবে বোরহানউদ্দিনের চেয়ে জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বেশি। বুধবার সকাল অব্দি ভোলা সদর থেকে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত তেমন দোকানপাট খোলা হয়নি। বিশেষ করে ভোলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেকে বেশি। সেসব পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বলেন, ‘দফায় দফায় আলেমদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলে আশা করছি।’ যে চারজন রোববার মারা গেছেন তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ভোলাবাসীর অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে। এখানে সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষা করে চলতে হবে।
বুধবার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বোরহানউদ্দিনে সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায়ের এক যুবকের বিচারের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে এক কিশোরসহ চারজন নিহত হন। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। সকাল ১১টার দিকে উপজেলা সদরের বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে উত্তেজিত জনতা বোরহানউদ্দিন বাজারে ভাওয়ালবাড়ির একটি মন্দির ও সাতটি ঘর ভাঙচুর করে।
বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুক থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে দু’দিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ বলছে, বিপ্লব নামের ওই যুবকের হ্যাক হওয়া আইডি থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বক্তব্য ছড়ানোর ঘটনা থেকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নজির রয়েছে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামুতে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধমন্দির ও ৩০টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়।