ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, সরকার ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। রাষ্ট্রের মালিক ও রাজনীতির শক্তি জনগণ। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেই শক্তিকে অস্বীকার করেছে এই সরকার। যতই পুলিশি শক্তি দেখাক না কেন, আসলে এটা ঝুলন্ত সরকার।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আইনজীবীদের এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সরকার প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল মন্তব্য করে মইনুল হোসেন বলেন, এই সরকার পুলিশি শক্তি আর পুলিশি মামলার ওপর নির্ভরশীল। জামিন না দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ ব্যবস্থা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। মামলা দিয়ে জামিন বাধাগ্রস্ত করা সরকারের রাজনৈতিক শক্তি, কিন্তু এটা রাজনীতি নয়। রাজনীতি বিদ্যা-বুদ্ধির ব্যাপার; পুলিশি শক্তির ব্যাপার নয়।
বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশব্যাপী ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেলের মাধ্যমে নির্যাতন করা হয়। এটা কতটা মর্মান্তিক, কতটা নিষ্ঠুর—তারা নিজেদের সহপাঠীকে পিটিয়ে মেরেছে। শুধু এক জায়গায় নয়, সারাদেশে এ রকম নির্যাতন হচ্ছে। দেশ একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগ করে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘ক্যাসিনো নিয়ে শত কোটি টাকার খেলা হয়েছে। সম্রাটের ‘সম্রাট’ হওয়া প্রকাশ পেয়েছে। আজকে সরকারের ভেতরের চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে আমরা জানতে পারবো, সরকার দলীয় নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।’
স্লোগানের রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি হচ্ছে একটি কৌশল। এটা স্লোগানের বিষয় নয়, রাস্তায় নেমে আন্দোলনের বিষয় নয়। আন্দোলন করে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করলাম, কিন্তু স্বাধীন দেশ আমরা স্বাধীন নই। বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে রাজনীতি করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছি, শান্তিপূর্ণ একটা রাজনৈতিক সমাধান আসুক।
বিচার বিভাগ স্বাধীন নেই মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আন্দোলন করা লাগতো না। অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগের জন্য জামিন পাওয়া তার অধিকার। সত্যি কথা বলতে স্বাধীন বিচার বিভাগ হলে এই বিষয়ে এত আন্দোলন, বক্তব্য, বিবৃতির দরকার পড়তো না। পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফকেও অসুস্থতার জন্য জামিন দেয়া হয়েছিল। জামিন দেয়া তো মুক্তি নয়। মুক্তির দাবি আপনারা করেন। কিন্তু একজন বয়স্ক নারীকে চিকিৎসার জন্য জামিনে মুক্তি দেয়া যাবে না, এটা অত্যন্ত অমানবিক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।