ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের বুড়ামারার খাল দখল করে মাছ চাষ করায় পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ থাকার কারণে তিন ইউনিয়নের ১৩টি বিলের প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষকরা। এনিয়ে কোন অভিযোগ দিলে অভিযোগকারীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোসহ নানা হুমকী-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন গত ৭ অক্টোবরের মধ্যে জেলার সব খাল-বিলের অবৈধ নেট-পাটা উচ্ছেদের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও বুড়ামারার খাল বা বিলে এখনও বহাল তবিয়তে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করে যাচ্ছেন। নেট-পাটা অপসরণ বিষয়ে স্থানীয় তহশিলদার মিজানুর রহমান বলেন, ওরা সরকারি খাল দখর করে নিলে আমার কি করার আছে।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহার, ব্রক্ষ্মরাজপুর ও ফিংড়ি এই তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম ও ১৩টি বিলের পানি নিস্কাশনের একমাত্র পথ ফিংড়ি ইউনিয়নের বুড়ামারার খাল। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর যাবত এই খালের মাঝে অসংখ্য নেট-পাটা ও বাঁধ দিয়ে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ থাকার কারণে বুড়ামারা বিলসহ আশপাশের ১৩টি বিলের প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে কোন ধরনের ফসল ফলাতে পারছে না এলাকার কৃষকেরা। এছাড়া ফিংড়ি, গাভা, হাবাসপুর, কুলতিয়া, সুলতানপুর, সর্বকাশেরপুর, জোড়দিয়া, ব্যাংদহ, বালিথা, এল্লারচর, শিমুল বাড়িয়া, জি-ফুলবাড়িয়া, চাঁদপুর, ধলিহর, ব্রক্ষ্মরাজপুরসহ ওই এলাকার ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ বর্ষা মৌসুমে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করে।
সরেজমিন ফিংড়ি ইউনিয়নের বুড়ামারার খাল ও বিল ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য নেট-পাটা, বাঁধ-এর কারণে এলাকারর পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। ফলে ওই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিলের মধ্যে অথৈ পানি। গ্রাম গুলো এখনো পানি ছুঁই ছুঁই। দখলদাররা এতোটাই প্রভাবশালী যে, কোন মানুষ দখলদারদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে সাহস পাচ্ছে না। তারা বলছে, ওদের নাম বললে আপনারা চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের বাড়িতে হামলা করবে, আমাদের নামে হয়রানিমূলক মামলা হবে, রাস্তাঘাটে আমাদের ধরে অপমান করবে, মারপিট করবে। আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারবো না।
এলাকাবাসী জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি, ধুলিহর ও ব্রক্ষ্মরাজপুর ইউনিয়নের বুড়ামারা বিল, কচুর বিল, ডেঘুর বিল, বেনিখালী বিল, চেনার বিল, জোড়দিয়া বিল, বেউলা বিলসহ আশপাশের ১৩টি বিলের পানি নিস্কাশনের বর্তমানে একমাত্র চ্যানেল আমদখালী স্লুইজগেট। এই গেট দিয়ে আশপাশের ১৩টি বিলের পানি বেতনা নদীতে নিস্কাশন হয়ে থাকে। এক সময় ফিংড়ি স্লুইজগেট দিয়ে মরিচ্চপ নদীতে পানি নিস্কাশন হতো। কিন্তু মরিচ্চপ নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ফিংড়ি স্লুুইজগেট দিয়ে আর পানি নিস্কাশন হয় না। যে কারণে এখন একমাত্র ভরসা আমদখালি স্লুইজগেট। কিন্তু নেট-পাটার কারণে ওই গেট পর্যন্ত পানি পৌছায় না।
তারা আরো বলেন, এক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্লু-গোল্ড প্রকল্পের আওতায় আমদখালি খাল খনন করেছে। খাল খননের ফলে দীর্ঘ ১৬ বছর পর কিছু এলাকায় এবার ধান চাষ হলেও জলাবদ্ধতার করণে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে কোন ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি। এসব জমি পতিত পড়ে আছে। তারা বলেন, বুড়ামারার খালে অসংখ্য নেট-পাটা ও বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা সেখানে মাছ চাষ করছে। ফলে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ফিংড়ি ইউনিয়নের গবরদাড়ি গ্রামের রিপন হোসেন (৪০) ও সর্বকাশেম পুর গ্রামের মোজাম্মেল হক মোড়ল (৫৫) জানান, গত প্রায় ১৬ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে আমাদের গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। বাড়ি-ঘরে, উঠানে পানি ওঠে। বিলে কোন ধরনের ফসল ফলাতে পারছি না। চারিদিকে পানি আর পানি। স্থানীয় কয়েক জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা খালে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে পানি আমদখালি স্লুইজগেট পর্যন্ত যাচ্ছে না। সারাবছর ধরে বিলে পানি জমে থাকছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন আমাদের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। সরকারি খালে যে একটু মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবো সে উপায়ও নেই। দখলকারিদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা বাড়িতে গিয়ে হামলা, মামলা, হয়রানি করছে। ওদের ভয়ে এলাকার কোন মানুষ প্রতিবাদও করতে সাহস পায়না।
এ ব্যাপারে ফিংড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুর রহমান বলেন, সরকারি লোকজন কিছুদিন আগে এলাকায় গিয়ে নেট-পাটা অপসরণ করেছে শুনেছি। কিন্তু তার পরেও কিছু কিছু এলাকায় নেট-পাটা থাকতে পারে। তিনি বলেন, বিল থেকে নদী উচুঁ হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। নেট-পাটা পানি নিস্কাশনের তেমন একটা বাঁধা নয়।
ফিংড়ি ইউনিয়নের তহশিলদার মিজানুর রহমান বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৮/১০ জন লোক নিয়ে বুড়ামারার খালের নেট-পাটা অপসারণ করে দেয়া হয়েছে। এর পর কি হয়েছে তার আর খবর রাখি না। আমি চলে আসার পর তারা আবার খাল দখল করে নিলে আমার কি করার আছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস,এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অবৈধ দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনবল সংকটের কারণে সব এলাকায় এখনো পৌছানো সম্ভব হয়নি। বুড়ামারার খালে তহশিলদারের অভিযানের পর আবারও কিভাবে নেট-পাটা বসানো হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …