ক্রাইমর্বাতা ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: জাতীয় সংসদের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যারা বেআইনি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন ও পদ ব্যবহার করে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তারা কেউ রক্ষা পাচ্ছেন না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নানা অপকর্মের দায়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। অপকর্মের দায়ে অভিযুক্তদের তালিকাও দিনদিন বড় হচ্ছে। নানা অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত সরকার দলীয় এমপিদের তালিকা বাড়বে।
সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া সরকার দলীয় যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। রাজনীতির নামে পদ-পদবী ব্যবহার করে অর্থসম্পদ বানানোর অসম প্রতিযোগিতা করার সুযোগ কেউ পাবে না। বিশেষ করে সরকার দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বিশেষ নজরদারী রাখা হচ্ছে। যারা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সেসব এমপিদের আয়-ব্যয়ের সার্বিক তথ্য নেয়া হচ্ছে। এমপি হওয়ার আগে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল আর এমপি হওয়ার পরে তাদের অর্থসম্পদের অবস্থা কী এমন খোঁজও নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সরকার দলীয় এমপি ও সাবেক এমপি দলের কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের সার্বিক খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা নিয়েই সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এ দিক নির্দেশনা নিয়ে মাঠে কাজ করছে। তবে এমপিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করাসহ বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার দলীয় যেসব এমপির নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তারা হলেন সরকারদলীয় এমপি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নারায়নগঞ্জের নজরুল ইসলাম বাবু। তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি ও আসন্ন সম্মেলনসহ সব সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিরত রাখা হয়েছে। নানা কারণে বর্তমানে সমালোচিত-আলোচিত হচ্ছেন ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও শুদ্ধি অভিযানের আওতায় পড়তে পারেন।
এছাড়া বরগুনা, ঢাকা, লালমনিরহাট, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, সিলেট, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পাবনা, বরিশাল, বরগুনা, রাজশাহী, নাটোর, ময়মনসিংহসহ আরো কয়েকটি জেলার একাধিক এমপির ব্যাপারে নানান অভিযোগ রয়েছে। তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, এইসব সাবেক ও বর্তমান এমপিদের তথ্য আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা রয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদের নামও আছে ওইসব তালিকায়। ব্যবসার নামে যারা ব্যাংকের লোন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন এবং বিদেশে টাকা পাচার করেছেন এসবই এখন শুদ্ধি অভিযানের আওতায়।
শুধু নিজ দলের এমপি-মন্ত্রী নন, অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন এমন দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিভিন্ন গ্রুপিং করে সংগঠনকে বিভাজন করেছেন সেসব নেতাদের তালিকাও রয়েছে। সেই তালিকা ধরেই অভিযান চলবে বলে জানা গেছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের মন্ত্রীসভায় জাতীয় পার্টির যেসব এমপি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তাদের দলের শীর্ষ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সার্বিক আয়-ব্যয়ের অবস্থার তদারকি করা হচ্ছে। শুদ্ধি অভিযান শুধুই আওয়ামী লীগের সরকারের এমপি নেতাদের বিরুদ্ধেই হবে না এর বিস্তার সবখানেই ঘটবে। জাতীয় পার্টি ও শরীক ১৪ দল এর বাইরে নয়।patradoot