সামিউল মনির, শ্যামনগর: কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগর হয়ে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক এ মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে হাজারও অবৈধ স্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। কোন কোন স্থানে মুল সড়ক অবশিষ্ট রেখে মাত্র ৫ থেকে ৭ ফুটের ফুটপাত পর্যন্ত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা পাকা শত শত স্থাপনা। অনেক ক্ষেত্রে সওজ কতৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকা সরকারি এসব জায়গার মালিক সেজে রীতিমত কাগজপত্র তৈরী করে তা বেঁচা-বিক্রিও হচ্ছে। এমনকি সড়কের পাশে ছোট বড় টোল ঘর তৈয়ার করেও তা ভাড়া দেয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে দিচ্ছে অনেকে।
কেউবা আরও একটু আগ বাড়িয়ে সরকারি এসব সম্পত্তি ঘিরে পাকা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে রীতিমত তা পৈত্রিক সম্পদ বানিয়ে ছেড়েছে।
এমতাবস্থায় একদিকে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশের পথ যেমন রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তেমনি, সরকারের পক্ষে গৃহীত ‘ক্লিন সাতক্ষীরা, গ্রীন সাতক্ষীরা’ বাস্তবায়নের পথে সড়কের দু’পাশের এমন দুরাবস্থা মারাত্বক অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগর হয়ে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
উল্লেখ্য: কালিগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ ও ভেটখালী পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ষাটের দশকে সরকারিভাবে একই সমান্তরালে ২০০ ফুট করে জায়গা সরকারের অনুকুলে অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কতৃপক্ষের তীক্ষè নজরদারি না থাকার কারণে কালিগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশজুড়ে এখন কেবলই হাজার হাজার স্থাপনা। বিশেষ করে শ্যামনগর সদরসহ জনবসতিপূর্ণ এলাকাসুমহে এমন দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তোভোগী মহলের অভিযোগ মূল সড়ক মাত্র ১৮ ফুট। ফলে সড়কের দু’পাশে আরও অন্তত ১২২ ফুট জায়গা অবশিষ্ট থাকার কথা। কিন্তু প্রভাবশালী, দখলদার আর আধিপত্যবাদীদের দৌরাত্বে মুল সড়কের বাইরে মাত্র ৫ থেকে ৭ ফুট থেকে স্থান বিশেষ ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে। অধিগ্রহণকৃত ২০০ ফুট জায়গার বাকি অংশ মূলত প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দিব্যি বেচা কেনা আর ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
মোতালেব হোসেন ও শেখ ইমাম হোসেন নামের হায়বাদপুর গ্রামের দুই ব্যক্তি জানান, দুইশত ফুট জায়গা সরকারের অধিগ্রহনে ছিল। কিন্তু মূল সড়কের ১৮ ফুটের বাইরের সমুদয় জায়গা এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা কাঁচা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে রেখেছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও তারা জানান।
উত্তর বাদঘাটা গ্রামের সামছুর রহমান, গোপীনাথ ও আব্দুল আজিজ এবং আয়েশা আক্তারসহ স্থানীয়রা জানান, মূল সড়ক মাত্র ১৮ ফুটের। কিন্তু মূল সড়কের বাইরের অংশজুড়ে সম্প্রতি ছোট বড় কয়েক শত কাঁচা পাকা দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তাদের এলাকায়। যে কারণে ঐ সড়ক ধরে বাস ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল করার সময় ছোট যানবাহনগুলো ফুটপাথে জায়গা না পেয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গত ১৫ দিনে একই অংশে ৪ থেকে ৫ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও এসব গ্রামবাসীর দাবি। অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ছোট বড় যানবাহন তাদের বাড়ি ঘরেও প্রবেশ করেন বলে দাবি এসব গ্রামবাসীর।
তবে সড়কের পাশের এসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নেয়ায় শুধু যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সুন্দরবনকে একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাড়াতে পারে বলেও স্থানীয়দের অভিমত।
মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ মিস্ত্রিসহ বাদঘাটা গ্রামের কয়েকজন জানান, আইলা পরবর্তী সময়ে শ্যামনগর পরিদর্শনে এসে শ্যামনগরকে পৌরসভায় উন্নীত করার পাশাপাশি সুন্দরবনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে পৌরসভার কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গেলেও পর্যটন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পথে। এমতাবস্থায় সুন্দরবনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র এ সড়ক পথের দু’পাশে এমন অবৈধ দখলদারিত্ব মল সম্ভবনাকে মারাত্বকভাবে বিঘিœত করতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিধু¯্রুবা মন্ডল জানান, প্রধানমন্ত্রী বেনাপোল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। যতদুর জানি বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিবেচনায় অনেকদুর এগিয়েছে। এখনি যদি সড়কের দু’পাশের এসব অবৈধ দখলদারদের থেকে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা না যায় তবে হয়ত সুন্দরবন পর্যন্ত প্রশস্থ সড়ক গড়ে তোলার পাশাপাশি রেল লাইন স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সমস্যা হবে।
এদিকে আব্দুর মতিন, রাজগুল হোসেনসহ অনেকে জানিয়েছেন সওজ এর মোট অধিগ্রহনকৃত জায়গার পরিমান দুই শত ফুট। কিন্তু আঠার ফুটের মুল সড়ক বাদ দিয়ে কয়েক ফুটের ফুটপাত ছাড়া সমুদয় জমি স্থানীয় ভুমি মালিকসহ অনেকক্ষেত্রে প্রভাবশালী এবং রাজিৈনতক ব্যক্তিরা দখল করে পাকা সীমানা প্রাচীর এবং ঘর তৈরী করে ভাড়া দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসা সত্ত্বেও অদ্যাবধি সওজ কতৃপক্ষ সেসব সম্পত্তি উদ্ধাওে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। তাদের দাবি মাননীয় জেলা প্রশাসক ইতিমধ্যে সাতক্ষীরাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিনত করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তিনি যদি সড়কের দু’পাশের সমুদয় সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নসহ সৌন্দর্য্যবর্ধক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে সওজ কতৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন তবে হয়ত ক্লিন সাতক্ষীরা গ্রীন সাতক্ষীরা বাস্তবায়নের কার্যক্রম পরিপূর্ণতা পাবে।
এবিষয়ে সওজ এর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, আপাতত সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত সওজ এর অধিগ্রহণকৃত দুই শত ফুট জায়গার পুরোভাগ অবৈধ দখলমুক্ত করতে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে শ্যামনগর হয়ে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত সরকারি এসব সম্পত্তি থেকে যাবতীয় স্থাপনা অপসারণ করা হবে।