অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দিতে হবে : মির্জা ফখরুল

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্টঃ  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নতুন নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখন যেটা সবচেয়ে আমাদের বড় প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটা এই সরকারকে সরাতে হবে এবং এই সরকারকে সরাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এর কোন বিকল্প নেই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

দেশের সংকটকাল পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকে বলতে চায় এটা বিএনপি’র সংকট। আসলে এই সংকটটা জাতির সংকট। পুরো বাংলাদেশের সংকট। আমরা ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করি, আমাদের সামনে একটাই স্বপ্ন ছিল যে একটা গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজে বাস করব। আমাদের সামনের স্বপ্ন ছিল একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, কল্যাণময় বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করব। আজকে প্রায় ৫০ বছর হতে চললো আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি না। আমরা অত্যন্ত বেদনা, কষ্ট, দুঃখের সঙ্গে ,যন্ত্রণার সঙ্গে আমরা দেখছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ভেঙে খানখান করে দেয়া হয়েছে। আমরা সবাই ভুক্তভোগী। বিশেষ করে আমরা যারা ভিন্নমত পোষণ করি।

ফখরুল বলেন, এই দেশে যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন জিয়াউর রহমান তিনি বাকস্বাধীনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য, সেই বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি , সেই ঐক্যকে অটুট রেখে মানুষকে একতাবদ্ধ করে আজকে আমাদেরকে সামনের দিকে এগোতে হবে এবং অবশ্যই এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা সবাই আজকে ওই লক্ষ্যে কাজ করি। এটা শুধু বিএনপি’র সমস্যা নয় বা গণফোরামের সমস্যা নয় বা জাসদের সমস্যা নয়। এই সমস্যা সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের। আজকে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অটুট রাখার জন্য আজকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণরায়ের মাধ্যমে এদেরকে পরাজিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, সেই জন্য আমরা বার বার করে বলেছি। অবিলম্বে যে নির্বাচন হয়নি সে নির্বাচনের ফলাফলকে বাতিল করতে হবে। এবং একটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার তৈরি করতে হবে। সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই সরকার যারা জোর করে রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে, জোর করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেই সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য এবং তাদের লক্ষ্য ১৯৭৫ সালে যে বাকশাল করেছিল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছিল। সেই লক্ষ্যে তারা আবার এগিয়ে চলছে এবং অনেক দূর এগিয়ে গেছে, যার কৌশলটা ভিন্ন। গণতন্ত্রের মুখোশ দিয়ে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে ভিন্নমতকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আজকে শুধুমাত্র বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট নয় বা ২০ দল নয় যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে যারা মুক্ত সমাজে বাস করতে চায় ,যারা একটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক সমাজে বাস করতে চায়, তারা সবাই আজকে একেবারে হতবাক হয়ে গেছে । তাদের সমস্ত স্বাধীনতা হরণ করে নেয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কথা বারবার বলে আমরা মনে করি কোন লাভ হচ্ছে না। এখন যেটা সবচেয়ে আমাদের বড় প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটা এই সরকারকে সরাতে হবে এবং এই সরকারকে সরাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেখুন যে নেত্রী যার জীবনের প্রায় সারাটা জীবন তিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন এবং এখনো তিনি হাজার ১৯ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। বিনা কারণে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় তার স্বাস্থ্য এত খারাপ, তার অসুখ এত বেড়েছে সেটাকে গোপন করছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, যে তার শরীর এত খারাপ হয়েছে যে তিনি এখন নিজে উঠে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি চেয়ারে ঠিকমত বসতে পারেন না। তার নিজের খাবার খেতে পারেন না। আর তারা বলছে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়নি, স্থিতিশীল রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে জেলের ভিতর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা তাদের সামনে সেই প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে দেয়া।

ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের সংগ্রামে আজকে ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে, তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশেও গণতন্ত্রের জন্য এত মূল্য দিতে হয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।