ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ।সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার ব্রম্মরাজপুর, ধুলিহার ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের দুই সহাস্রাধিক পরিবার গত জুলাই মাস থেকে জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়ির নলকূপ ও ল্যাট্রিন পানি দ্বারা প্লাবিত। তাদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারন করেছে।
এলাকা জলাবদ্ধ থাকায় ধান ও মাছ চাষ এবং পশুপালন ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এসব গ্রামের তিন হাজারেরও বেশি পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। পানি জমে থাকার কারণে এবার বিলগুলিতে বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষকরা এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করতে পারেন নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রিয় পানি কমিটি। তারা বলেছেন এবার সাতক্ষীরায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২০০০ মিমির কম ১৫০২ মিমি হলেও গ্রামগুলি পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে নিকটস্থ বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর পানিতে। পলি জমে নদীবক্ষ উঁচু হয়ে পড়ায় এই দু’টি নদী পানি ধারন ক্ষমতা হারিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিন আগের টানা বুষ্টির পানি। ফলে এলাকা জুড়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতক্ষীরা পৌরসভা, ব্রম্মরাজপুর ও ধুলিহর ইউনিয়নের এসব গ্রামে নিরাপদ খাবার পানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সরকারি ও বে-সরকারী ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি পাম্প বসিয়েও একই এলাকার ২৬ টি বিলের পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ দূষন শুরু হয়েছে। এই পানি ব্যবহারের ফলে গ্রামবাসীর দেহে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ এলাকায় কাজ না থাকায় পুরুষ মজুরি ২০০ টাকা ও মহিলা মজুরি মাত্র ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পানিবাহিত নানা রোগ ছাড়াও এ এলাকায় সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান জলাবদ্ধ এই ২২ গ্রামের পানি জরুরি ভিত্তিতে অপসারনের বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে এলাকার কৃষি ও আর্থ সামাজিক খাত লন্ডভন্ড হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। গত প্রায় ২৫ বছর যাবত সাতক্ষীরাসহ পাশর্^বর্তী জেলার ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আছে। এর সাথে যুক্ত হলো আরও ২২ টি গ্রাম। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে গদাই বিল, রাজারবাগান প্রামানিকপাড়া, কুলিনপাড়া, বদ্দিপুরকলোনী তালতলা, কলোনীপাড়া, বসতিপাড়া, শাল্যে, বেড়াডাঙ্গি, মাছখোলা পূর্বমাছখোলা পশ্চিম, চেলেরডাঙ্গা, ওমরাপাড়া, মল্লিকপাড়া, জেয়ালা, গোবিন্দপুর, ধুলিহর সানাপাড়া, বাঁধনডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, দহাখোলা, দামারপোতা, বড়দল ও বালুইগাছা। জলাবদ্ধতার কারনে প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে জনদূর্ভোগের পাশাপাশি নিরবে এই এলাকা থেকে অস্থায়ী মাইগ্রেশনের প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জলাবদ্ধ কবলিত এসব এলাকায় বসবাসকারি পরিবার গুলোর মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের সাথে জলাবদ্ধতাজনিত জনদূর্ভোগ মোকাবেলায় সার্বধিক গুরুত্ব দিয়ে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জোয়ার্দার, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি, মীর জিল্লুর রহমান, নাজমা আক্তার, দিলীপ কুমার সানা প্রমূখ।
Check Also
তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ
মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …