ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্টঃ বাংলাদশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, সরকার নেতৃত্বশূন্য করে দেশকে করদরাজ্য বানানোর জন্যই বিরাজনীতিকরণ, হত্যা ও জিঘাংসার পথ বেছে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই সাবেক আমীরে জামায়াত ও বরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি
জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে শহীদ করা হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকেও হত্যার আয়োজন চুড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পরিহার ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দন্ডাদেশ বাতিল করে সকলকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপীল খারিজ করে প্রাণদন্ড বহাল রাখার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলনা দেলাওয়ার হোসাইন ও এন ইউ মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, মজলিশে শুরা সদস্য এইচ এম আতিকুর রহমান ও এ্যাডভোকেট ইব্রাহীম খলিল, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, ঢাকা মহানগরী উত্তরের শিবির সভাপতি আজিজুল ইসলাম সজীব ও পশ্চিমের সভাপতি যোবাইর হোসেন রাজন প্রমূখ।
ড. এম আর করিম বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করে। দলীয় লোক দিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হয়। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন যে, তিনি ৭ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন। অপর একজন সাক্ষী বলেছেন তিনি ৩ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন । তাদের এ বক্তব্যই প্রমাণ করে তারা সম্পূর্ণ সাক্ষ্য দিয়েছেন । আরেকজন সাক্ষী নিজেকে আজহারের ক্লাসমেট দাবী করে আদালতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন । আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী আজহারল ইসলাম ১৯৬৮ সালে কারমাইকেল কলেজ ত্যাগ করেন। আর কথিত সাক্ষী ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। অতএব আজহারুল ইসলামকে ঐ সাক্ষী তার ক্লাসমেট হওয়ার যে দাবী করেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। তাই এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চত হয়নি।
তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সরকারের চরম জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে গ্রেফতার করার পর রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। একজন জাতীয় নেতা হওয়ার পরও তাকে ডান্ডাবেরী পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।তার একমাত্র পুত্র সন্তানকেও গ্রেফতার করে তার উপরও নির্যাতন চালানো হয়। তিনি ২০১২ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করার পর সরকার আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে তার বাড়ী অবরুদ্ধ করে রাখে। একজন শীর্ষনেতার বাড়ীতে সিসিটিভি বসিয়ে তাকে পর্য্বেক্ষণের নামে হয়রানী নজির বিহিন ঘটনা । তিনি দীর্ঘ ৮ বছর যাবত কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছেন। দুর্ভাগ্যজনক যে, তিনি আজ সর্বোচ্চ আদালত থেকেও ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলেন। আপীল বিভাগের চারজন বিচারপতির মধ্যে তিনজন বিচারপতি একমত হলেও একজন বিচারপতি এ রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে আদর্শবাদী দল জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার জন্যই দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। তারা নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যা চালিয়ে দেশকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। সরকারের গুম ও অপহরণের ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অপরাাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান ও সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এবং সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে অপহরণ করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গুম করে রাখা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠার তান্ডবের ধারাবাহিকায় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার সহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং তা এখনও অব্যাহত আছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্যাসিনো কেলেঙ্করী, ভোলার ঘটনা সহ নিজেদের সকল অপকর্মকে আড়াল করতেই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও যোগসাজসী মামলায় জামায়াতের শীর্ষ নেতা আজহারুল ইসলামের অন্যায় ও অনায্য রায় প্রদান করা হয়েছে। তিনি তাই এই ন্যায়ভ্রষ্ট রায় জনগণ কখনোই মানবে না এবং ফ্যাসীবাদী ও জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা এবং গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের লড়াইয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছে: ড.মাসুদ
রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেটে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, সরকার নেতৃত্বশূন্য করে দেশকে করদরাজ্য বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছে। কিন্তু সচেতন জনতা সরকারের এ ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না বরং জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি অবিলম্বে দন্ডাদেশ বাতিল করে এ টি এম আজহারুল ইসলামসহ শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সরকারকে চরমমূল্য দিতে হবে।
এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি একথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, কামাল হোসাইন, শামছুর রহমান, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, দেলওয়ার হোসাইন, আব্দুল জাব্বার, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, হাফিজুর রহমান ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য আমিনুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, মতিউর রহমান, মোহাম্মদ আল-আমীন, আব্দুর রহমান সাজু, বনি ইয়ামিন, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি হাফিজুর রহমান, ঢাকা কলেজ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মারুফ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারী আহমদ হোসাইন রাসেল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে চরম দলন ও পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ টি এম আজহারুল ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তার পক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে দেশের কোন থানায় মামলা তো দূরের কথা বরং কোন থানায় সাধারণ ডাইরীও করা হয়নি। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে একজন জাতীয় নেতাকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছে। কিন্তু সচেতন জনগণ সরকারের এহেন দেশ ও জাতিসত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্র কখনোই মেনে নেবে না বরং সরকারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি অবিলম্বে প্রতিহিংসা ও হত্যার রাজনীতি পরিহার করে মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি সরকারের প্রতি আহবান জানান।