ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: ৭৯ বছরের পুরনো আইনের ভিত্তিতে তৈরি মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে আজ আজ ১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে সারাদেশে কার্যকর হচ্ছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮।
নতুন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালকের কারণে মৃত্যু হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটালে সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি।
অবশ্য এ আইনের আলোকে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ, বিআরটিএ ও পুলিশ আইন প্রয়োগ শুরু করছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, প্রয়োগের দিকে যেতে আরো কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, সড়ক পরিবহন খাতের দীর্ঘদিনের চলা রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজউদ্দিন আহমেদ জানান, আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আইন প্রয়োগের আগে দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাব।
আইনে রয়েছে নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তার কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এ ছাড়া কন্ডাকটর লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাকটর নিয়োগ করা যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।
এছাড়া নতুন আইনে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ছাড়া কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট দেওয়া থাকবে। অপরাধ করলে তা কাটা যাবে। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লঙ্ঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এ বিধান আগে ছিল না।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আইনটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে পহেলা নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করতে বাধা নেই।
আজ শুক্রবার থেকে আইনটি কার্যকর করা হবে বলে গত ২২ অক্টোবর ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে আইনটি মন্ত্রণালয়ে কার্যকরের অপেক্ষায় ঝুলে ছিল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের একদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার, সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আইনের বেশ কিছু ধারার সমালোচনা করে শাজাহান খান বলেন, এখনো বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান হবে কীভাবে?
শাজাহান খান আরো বলেন, চালক বা শ্রমিককে সাজা বা ফাঁসি দিলে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে এমন অলীক কল্পনা যারা করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সব দেশে আইন আছে। কেউ কাউকে হত্যা করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড—এ কঠিন আইন থাকার পরও কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে? তাদের মনে রাখতে হবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হত্যাকাণ্ড নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এই দুর্ঘটনার জন্য চালক এককভাবে দায়ী নয়। এসময় তিনি কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। তার দাবিগুলো হলো—সড়ক দুর্ঘটনার মামলাকে জামিনযোগ্য করতে হবে। তদন্ত ব্যতীত দুর্ঘটনার মামলা ৩০২ ধারায় দায়ের করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার মামলা নিরপেক্ষতার স্বার্থে পুলিশ ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তদন্ত করতে হবে। প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাশ হয়। কিন্তু পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আইনটি সংশোধনের জন্য তত্পরতা শুরু করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আইন কার্যকরের ঘোষণা দেয়।