ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আতঙ্কে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কয়েক লক্ষ মানুষ

আবু সাইদ বিশ্বাস::ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। পরবর্তি নিদের্ম না দেয়া র্পযন্ত সাতক্ষীরা জেলাকে ৭  নম্বর সতর্কসংকেত দেকিয়ে যেতে বলা হয়েছে।চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে।

সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় মাতমো গত অক্টোবরের শেষে ভিয়েতনাম হয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই ঘূর্ণিবায়ুর অবশিষ্টাংশই ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে এসে আবার নিম্নচাপের রূপ নেয়।

বারবার দিক বদলে নিম্নচাপটি আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে বুধবার রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। তখন এর নাম দেয়া হয় ‘বুলবুল’।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ক্রমেই শক্তি সঞ্চার করে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শুরুর দিকে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার। শুক্রবার দুপুর থেকে এটির শক্তি ক্রমেই বাড়তে থাকে। ‘বুলবুল’ ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ে উন্নীত হয়েছে। এটি এখন আঘাত হানলে ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইবে। যে বাতাসে ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।

তবে রোববার ফের শক্তি কমে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রূপ পেতে পারে বুলবুল। তারপর ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারিয়ে ১১ নভেম্বর ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে

ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের অতঙ্কে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কয়েক লক্ষ ছিন্নমূল মানুষ। নড়বড়ে বাঁধের কারণে শ্যামনগরের বিস্তৃণী অঞ্চল প্লাবনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইলা ও সিডরের মত বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পাওে এমন আশঙ্কায়

ঘুর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেরায় সাতক্ষীরায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের থা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মোসবতফা কামাপল।
গতকাল শুক্রুবার সন্ধায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী প্রস্তুতিূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, উপকূলীয় উপজেলা গুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্ব স্ব এলাকায় মাইকিং করে জনগনকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদীখালে থাকা নৌযানগুলিকে উপকূলে নিরাপদ স্থানে থাকার আহবান জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে ২৭০ টি আশ্রয় শিবির প্রস্তু রাখা হয়েছে। ১২৫২ টি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ফাঁকা করে রাখা হয়েছে। শ্যামনগর ,আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলকার জনগনকে শনিবার বেলা ১১ টার মধ্যে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ কবলিতদের সহায়তায় ১১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ টাকা, ৮’শ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২৭ হাজার পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, পানীয় জল, ওষুধপত্র মজুদ রাখা হয়েছে। ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও রেডক্রিসেন্ট বাহিনী, ৮৫ টি মেডিকেল টিম, নৌ ও স্থলযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

একইভাবে পুলিশ, বনবিভাগ,কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও বিজিবির পক্ষ থেকেও উপকূলীয় এলাকায় বুলবুল মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

অপরদিকে, সুন্দরবনের দুবলার চরে রাসমেলায় অংশগ্রহনেচ্ছু পূর্ন্যার্থীরা সম্ভাব্য দুর্যোগের কারনে যাত্রা বন্ধ করেছেন। এর আগে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এর আগে দুপুরে উপকূলীয় সব উপজেলায় নির্বাহী অফিসারগন সভা করেছেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে সাতক্ষীরায় শুক্রবার ভোর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। জেলায় ৭ নম্বর সতর্কবার্তা জারি রা হয়েছে।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।