আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: শনিবার দিনভর সাতক্ষীরা বাসী কাটিয়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯২ হাজার মনিুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কথা জানিয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি জেলাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে জোর করে মানুষদের আনার চেষ্টা করছে। তবে সকাল থেকে শ্যামনগরের আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে লোক জন আশ্রয় নিতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আশ্রয় কেন্দ্র গুলো মানুষের ভরে যায়। খাবার ও টয়লেটের চরম সংকট ও অব্যবস্থপনা দেখা যায়।
দিনভর বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস.এস মোস্তফা কামাল বলেন, ৯২ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দুটি বিভাগের আওতায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বুলবুলের জলোচ্ছাসের আঘাত যদি ৭ ফুট উচ্চতায় হয় সেক্ষেত্রে এসব বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক জুলফিকার অলী জানান, সন্ধা ৬টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৩৫ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এখনও পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে।
সাতক্ষীরা জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস.এস মোস্তফা কামাল জানান, দুর্যোগ কবলিতদের সহায়তায় ৩১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ২৭ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধপত্র মজুদ রাখা হয়েছে। একই সাথে দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দূর্যোগ কালীন এবং দূর্যোগ পরবর্তী তিন স্তরের প্রশিক্ষিত ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ ৮৫ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া শিশুদের জন্য ১ লাখ টাকা ও গবাদি পশুর জন্য আরো ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালে থাকা নৌযানগুলিকে উপকূলবর্তী নিরাপদ স্থলে আনা হয়েছে।
উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, ইউনিয়নের তিনটি স্থানে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। হরিশখালী, ডুমুরিয়া ও কালিবাড়ি এলাকায় নদী তীরবর্তী বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া নদীতে ঢেউয়ের মাত্রাও বেড়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ বাইরে বের হতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, সন্ধা পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসতি। আইলার সময় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এ এলাকা। চলাচল উপযোগী কোনো রাস্তাও নেই। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী।
অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল বলেন, আমার ইউনিয়নে চারটি স্থানে বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ছয়টি স্থানে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। চাকলা, সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, হরিশখালী ও হিজলিয়া এসব এলাকার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীর পানি ও ঢেউ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কতক্ষণ বাঁধ টিকে থাকবে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যচ্ছে না।
তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনকে একাধিকবার বলেও কোনো লাভ হয়নি। আমার ইউনিয়নের ৩৬ হাজার মানুষের জানমাল হুমকির মুখে পড়েছে।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ৯/১১/১৯