আবু সাইদ বিশ্বাস: ইসলাম বলে— প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকৃতির সৃষ্টি নয়, বরং জল-স্থল, চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে যা ঘটে তা মহান আল্লাহর ‘কুন-ফায়াকুন’ এর ইশারায়। দুর্যোগ-দুর্ঘটনাও তাঁর ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষের কৃতকর্ম। সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে গেলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে বেশি। হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজেও উম্মতের ওপর দুর্যোগের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন।
তিনি দু‘আ করেছেন, যেন তার উম্মতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে একসাথে ধ্বংস না করা হয়। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করতেন এবং অন্যদেরও তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাতেন।
হাল জামানায় অতি বৃষ্টি, ঝড়-তুফানের সময় অনেকে আজান দিয়ে থাকেন। আবার অনেককে ‘হাইয়্যালাস সালাহ আর হাইয়্যালাল ফালাহ’ বাক্য দুটি ছাড়া আজান দেয়ার নির্দেশ দিতে শোনা যায়। অনেক এলাকায় তো মসজিদের ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিনকে বাধ্য করা হয়। তাদের ধারণা মতে, আজান শুনে আল্লাহ নাকি তার বান্দার প্রতি করুণা করে থাকেন। অথচ মারাত্মক ভুলের মধ্যে রয়েছি আমরা। আমাদের উচিত সুদিনে আল্লাহর শোকর আদায় করা, দুর্দিনে সবর করা এবং তাঁর দেয়া আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করা। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, এই শোকর, সবর ও আশ্রয় প্রার্থনার ক্ষেত্রে একজন মুমিনকে প্রথমত ওই আমলগুলোই করা উচিত, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন।
সহীহ হাদীসে এসেছে, একবার মদীনায় এক সপ্তাহ একাধারে প্রবল বৃষ্টিপাত হলো। অবিরাম বৃষ্টির সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহাবীগণ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে দু‘আ করেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি, ওয়াজ জারাবি ওয়াল আশ জারি’।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়ার ফলে মুহূর্তে মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। (সহীহুল বুখারী, হা-১০১৪)
এমনিভাবে ঝড়-তুফানের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু‘আ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররা মা ফিহা’।
আর বাতাস কমে বৃষ্টি নেমে এলে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল দেখা যেত। তখন তিনি আল্লাহর ‘হামদ’ করতেন, বলতেন, এটি ‘রহমত’। আরো বলতেন, আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিয়া’। (ফাতহুল বারি ২/৬০৪, ৬০৮)
অতএব হাদীসে বর্ণিত এসব দু‘আ ছাড়াও অন্যান্য দু‘আ-ইস্তিগফার বা ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে আল্লাহর কাছে এসব বালা-মুসিবত থেকে পানাহ চাওয়া উচিত। কিন্তু আজান তো ইসলামের অন্যতম শিআর। যার জায়গা ও ক্ষেত্রগুলো শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। তাই আসুন, আমরা নিজেদের কৃতকর্মের উপর লজ্জিত, অনুতপ্ত হয়ে রাব্বে কারিমের কাছে তাওবা করে সব অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের দু‘আ করি।