বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দির বানানোর পক্ষেই রায় দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:  ভারতের অযোধ্যাতে কট্টর হিন্দুদের গুড়িয়ে দেয়া বাবরি মসজিদের স্থানে কথিত রাম মন্দির বানানোর পক্ষেই রায় দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট।দেশটির প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতির ভিত্তিতে শনিবার এই রায় দেন।খবর বিবিসি বাংলা’র।

বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে বিতর্কিত জমি পাচ্ছেন হিন্দুরাই। সেখানে তৈরি হবে রাম মন্দির।তবে অযোধ্যাতেই অন্যত্র একটি মসজিদ গড়ার জন্যও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর এই রায় ঘোষণার পরেই টুইটারে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিজেপি প্রধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

অন্যদিকে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন (এআইএমআইএম) প্রেসিডেন্ট আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তার দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাস্তব সত্যির জয় হয়নি।

ওয়াইসি বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট মুসলিমদের যে খয়রাতির পাঁচ একর জমি দিতে চেয়েছেন, তা চাই না। ওয়াইসির দাবি, এমনি মানুষের কাছে চাইলেই মুসলিমরা পাঁচ একর পেয়ে যাবে। সরকারের খয়রাতির প্রয়োজন নেই।

হায়দরাবাদের এই সাংসদের বক্তব্য, আমরা আমাদের আইনি অধিকারের জন্য লড়ছি। ভারতের মুসলমানদের এতটা খারাপ দিনও আসেনি যে খয়রাতির জমি নিতে হবে। মুসলিম বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আমাদের এই পাঁচ একরের প্রস্তাব খারিজ করা উচিত।

অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তা বরাদ্দ করা হয়েছে ‘রামলালা বিরাজমান’ বা হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহকে। যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই, কারণ এটিই ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে একটানা ৪০ দিন শুনানি হওয়ার পরে রায় লেখার জন্য মাসখানেক সময় নেয়া হয়।

প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোডবে, ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির।

অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে, সেখানে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বারো হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অযোধ্যায় কারফিউ জারি রয়েছে গত প্রায় দুসপ্তাহ ধরে।

এদিন রায় ঘোষণার আগে গতকাল প্রধান বিচারপতি গগৈ গতকাল শুক্রবারই রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন।

উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও রাজস্থান-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আজ স্কুল-কলেজ সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সরকারি অফিসেও ছুটি।

১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল।

কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।

বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারে বারে দাঙ্গা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল।

কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।

জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে – দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি শুরু করে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।