ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ , শ্যামনগর: বঙ্গপোসাগরে অবস্থানরত ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগর উপজেলার সর্বত্র বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকালের দিকে হালকা বৃষ্টি থাকলেও সময় যতই গড়িয়েছে বৃষ্টির পরিমানও বেড়েছে। বিকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি ঝরলেও সন্ধ্যার পর থেকে মাঝেমধ্যে হালকা ও মাঝারি আকারে বাতাস বইতে শুরু করে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাব মোকাবেলায় উপজেলা এবং পুলিশ প্রশাসনসহ সিপিপি’র পক্ষ থেকে মাইকিং করে সকলকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের আহবান জানানোর পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বেলা দশটায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ প্রস্তুতি সভার পর থেকে উপকূলীয় এলাকায় একটি করে লাল পতাকা উত্তোলন করে সকলকে চার নম্বর সতর্কতা সংকের বিষয়টি অবহিত করা হয়।
তবে প্রতিবারের মতো এবারও ঘুর্নিঝড় আগমনের খবরে দক্ষিণ-পশ্চিম এ উপকূলীয় জনপদের হাজারও পরিবার তীব্র আতংকে থাকার কথা জানিয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার নেই এবং উপকুল রক্ষা বাঁধ জীর্নশীর্ন অবস্থায় রয়েছে সেসব এলাকার মানুষ চরম উদ্বেগে রয়েছে বলে জানায়।
উল্লেখ্য শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার গাবুরা, হরিশখালী, নাপিতখালী, জেলেখালী, বুড়িগোয়ালীনির দুর্গাবটি পোড়াকাটলা, ভামিয়া ও দুর্গাবাটি এলাকার বাঁধ মারাত্বক ঝুঁকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া কৈখালীর বিভিন্ন অংশ এবং কাশিমাড়ী ও দাতিনাখালীসহ পদ্মপুকুরের কয়েকটি অংশের বাঁধের দুরাবস্থাও চরমে। এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আগমনে এসব এলাকার হাজার হাজার পরিবারে ভয়াবহ দুশ্চিন্তা ভর করেছে।
বিভিন্ন সুত্র থেকে আরও জানা গেছে সকালের পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় এলাকায় চার নম্বর সতর্কতা সংকেত এর কথা জানিয়ে উপকুলবাসীকে নিরাপদ স্থানসহ নিকটস্থ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাড়িঘর ছাড়েনি। বরং তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছিলেন বলে জানিয়েছে সিপিপি (সাইক্লোন প্রিপেয়ারনেস প্রোগাম) শ্যামনগর উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ মাকসুদুর রহমান মুকুলসহ স্থানীয়রা।
তবে সন্ধ্যার পরপরই চার নম্বরের পরিবর্তে সাত নং বিপদ সংকেত এর ঘোষনা আসার পর থেকে উপকূলীয় এলাকায় দুটি করে লাল পতাকা উত্তোলন করে দেয়া হয় এবং মানুষ জন সাইক্লোন শেল্টারসহ নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেন।
এদিকে লোকালয় থেকে অকেটা বিচ্ছিন্ন সুন্দবনের মধ্যে অবস্থিত গোলাখালী ও কালিঞ্চিসহ কয়েকটি এলাকায় কোন সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় সেখানকার বসবাসরত জনগোষ্ঠী প্রতিবারের ন্যায় এবারের এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে থাকার কথা জানিয়েছে।
গোলাখালী গ্রামের গৃহবধু আখিরন বেগম ও বাবুরামসহ অন্যরা জানিয়েছে দুপুরের দিকে তারা দুর্যোগের বিষয়ে জানতে পারলেও ঐ এলাকায় কোন স্াইক্লোন শেল্টার না থাকায় তারা ভাগ্যের উপর ভরসা করে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
প্রায় একই ধরনের তথ্য নিশ্চিত করে রমজাননগরের ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন জানান, তার এলাকায় কোন সাইক্লোন শেল্টার না থাকার কারনে স্থানীয়রা জি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।
তবে চুনকুড়ি গ্রামের আব্দুস সামাদ ও গাবুরা চকবারা গ্রামের আব্দুস সালাম এবং গাবুরার প্রাক্তন ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেনসহ অনেকেই নিশ্চিত করেন যে বিকালে বৃষ্টির সাথে সাথে বাতাস শুরু হওয়াতে ঐসব এলাকার স্বল্প সংখ্যক মানুষ নিকটস্থ সাইক্লোন শেল্টারসমুহে আশ্রয় নেয়।
যদিও নীলডুমুর খেয়াঘাটে অবস্থানরত আব্দুস সালাম জানান আরও অনেকের মত তার ইঞ্জিন চালিত নৌকা নদীতে থাকার কারনে নৌকা রক্ষার জন্য ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও নদীর পাড়ে রাত পার করবেন।
সিপিপি মুন্সিগঞ্জ ইউনিটের ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস সামাদ ও কদমতলা গ্রামের এশার আলী এবং দাতিনাখালী গ্রামের রিয়াজসহ অনেকে জানান সন্ধ্যার পর থেকে নদীতে জোয়ারের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় উপকুলবাসীর মধ্যে আতংক ভর করে। যদিও রাত আটটা পর্যন্ত কেউ বাড়িঘর ছেড়ে যায়নি উল্লেখ করে তারা জানান শনিবার সকাল থেকে হয়তবা উপকুলবাসী নরিাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করতে পারে।
তবে গোলাখালী এবং কালিঞ্চি গ্রামের মত যেসব এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার কিংবা কোন উঁচু নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র নেই সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে ‘বুলবুল’ এর আগম তীব্র আতংকজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেন গোলাখালীর জামির আলী ও বিদ্যুৎ মন্ডলসহ স্থানীয়রা।
হরিনগর মথুরাপুর গ্রামের চন্দন মন্ডল এবং কদমতলা গ্রামের ফজের আলী মোল্যাসহ অনেকে জানান সারাদিন হালকা বৃষ্টি থাকায় তারা কেউ জিনিসপত্র রেখে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে শনিবার সকালে পরে হয়তা অনেকে বাড়িঘর চাড়তে পারে।
এদিকে ঘুর্নিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলার অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন সকল ইউপি চেয়ারম্যান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি সভা করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় প্রত্যেকের করনীয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সকল জনসাধারনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে আ¤্রয় নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করার পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ এর বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসময় অন্যন্যের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিাসর মো. কামরুজ্জামানসহ সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং সিপিপি নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।