ইবরাহীম খলিল : সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রেমেই বাড়ছে ঝড়ের তীব্রতা। ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। একইসাথে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট পানির উচ্চতা। তছনছ করে দিয়েছে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলারচরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী এলাকার আলোরকোল মেহেরআলীর চর মাঝেরকেল্লা অফিসকিল্লা ও শেলারচরে ২২ বছর আগে নির্মিত হওয়া জরাজীর্ণ ৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ হাজারেরও বেশি জেলেরা আশ্রয় নিতে পেরেছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান সংকুলন না হওয়ায় শুঁটকি পল্লীসহ ঝড়ের কারণে সাগর থেকে আসা আরো কয়েক হাজার জেলে নৌযানে করে ছোট-ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ায় নৌযানে করে সুন্দরবনের খালে আশ্রয় নেয়া জেলেদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রবল শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সেন্টমার্টিন ও খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১০টি যুদ্ধজাহাজ ও নৌ কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রয়েছে। একই কথা বলা হয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকুল অঞ্চলে আঘাত হানা ঝড় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে জলোচ্ছাসের পরিমাণ ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বর্তমানে বাতাসের গতি ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১৭ লক্ষ মানুষকে বাড়িঘর থেকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত করার শঙ্কায় থাকা জেলাগুলো হলো ভোলা বরগুনা পটুয়াখালী বরিশাল পিরোজপুর ঝালকাঠি বাগেরহাট খুলনা ও সাতক্ষীরা। এসব এলাকার সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে পূর্ণ জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করবে। একারণে এবার অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। এজন্য ঘূর্ণিঝড় আঘাত করলে অনেক প্রাণ হাণি হতে পারে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি। তারা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অফিস থেকে ব্রিফিংয়ে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সুন্দরবন দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। এসময় উপকূলীয় এলাকাগুলোর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এজন্য গতকাল দুপুর থেকেই উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। উপকূলীয় নয়টি জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও আশপাশের পাঁচটি জেলায় ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে বইতে থাকে দমকা হাওয়া।
দুবলার চর দিয়ে আঘাত শুরু : গতকাল সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে শুরু করে। এর আগে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ১০/১৫মিনিট ব্যাপী ঝড়োবাতাস বয়ে যায়। দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের হিসাব রক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলার চরের জেলে পল্লীগুলো তছনছ করে দেয়। সিডরের মতই বুলবুলের গতি প্রকৃতি ছিল। শনিবার ভোর থেকে অফিসকিল্লা মাঝেরচর আলোরকোল মরণেরচর প্রভৃতি এলাকার অস্থায়ী জেলে ঘরে অবস্থানরত জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। এ কাজে র্যাব কোস্টগার্ড বনবিভাগ ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা এবং জেলেদের তরুণ সদস্যরা কাজ করে। এলাকার পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার এবং শত শত ট্রলার ও জেলে নৌকায় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়। জেলেরা আশ্রয় নেয় আলোরকোল মেহেরআলীর খাল ভেদাখালীর খালে। জেলে পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের জোর করে নিরাপদে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সঙ্গে দেয়া হয় শুকনা খাবার চাল ভাজা চিড়া ও খাবার পানি।
২৪ ঘন্টা থাকবে বুলবুলের প্রভাব :
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৯ ও কক্সবাজার ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৮০ কি. মি. দূরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অফিস বলছে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। আর পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কি.মি. দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যায় বাগেরহাটে আঘাত হানতে পারে। এসময় বাতাসের গতিবেগ কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার থাকতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে। সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করা শুরু করলে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা উপকূল অতিক্রম করে যাবে।
‘এরপর এটি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বরিশাল ঢাকা কুমিল্লা অঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়ের বেগ অনেক থাকবে। বিকেল ৪টা বা ৫টা থেকে ধরলে আগামী ২৪ ঘণ্টা পুরো বাংলাদেশে এর প্রভাব থাকবে। রংপুর বিভাগে প্রভাব একটু কম থাকলেও সারাদেশেই এর প্রভাব থাকতে পারে।’
কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন ঘূর্ণিঝড়টি অতি প্রবল হয়ে প্রবেশ করবে। এ ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সুন্দরবন একটা বাধা বলতে পারেন। এটা হয়তো অনেকটাই রক্ষা করবে। যেহেতু এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় তারপরও ওইরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন ঘূর্ণিঝড় এখনও অতি প্রবল অবস্থায় রয়েছে। উপকূলের কাছাকাছি এসে হয়তো সামান্য তীব্রতা কমতে পারে। তবে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আবহাওয়াবিদ জানান জোয়ার শুরু হবে বিকেল ৩টা দিকে। রাত ৯টা ৬ মিনিটে জোয়ারের বা জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ২ দশমিক ৮৫ মিটার হতে পারে পশুর নদীতে। পশুর নদী ছাড়াও খুলনা ও বরিশালে যেসব নদীতে জোয়ার থাকবে সেখানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রুহুল কুদ্দুস বলেন বাংলাদেশে প্রবেশের পর ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাসার্ধ কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার আর ব্যাস ২০০ কিলোমিটার থাকতে পারে।
বরগুনায় ১৫ জেলে নিখোঁজ : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকা বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলারসহ বরগুনার ১৫ জেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে নারিকেল বাড়িয়ায় বঙ্গোপসাগরে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর কোন এক সময় ট্রলারটি নিখোঁজ হয় বলে জানা যায়। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন পাথরঘাটা মৎস বন্দরে এসে সগির হোসেন নামে ওই ট্রলারের এক মাঝি তাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সগিরের বরাত দিয়ে তিনি জানান বরগুনা সদরের নলী গ্রামের নজরুল ইসলামের মালিকধীন ‘তরিকুল’ নামের ট্রলারটি নিয়ে ১৬ জন জেলে গত বৃস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান।
সাতক্ষীরায় সেনা মোতায়েন : ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় বলে। গতকাল শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় ও দুর্যোগ পরবর্তী সব প্রকার সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব পদাতিক ডিভিশন। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন সম্পন্ন হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার মধ্যরাতে বাগেরহাটে আঘাত হানতে পারে। এ সময় কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার বা তার বেশি থাকতে পারে।
মন্ত্রীর ব্রিফিং : গতকাল দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমান সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জানান উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন ও তাদের গবাদিপশু যেন নিরাপদে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সংশ্লিষ্ট ১৩টি উপকূলীয় জেলা ও এর অন্তর্ভুক্ত উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা-উপজেলায় এ বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রচারনা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে উপকূলীয় ৭টি জেলা খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট বরগুনা পটুয়খালী ভোলা এবং পিরোজপুরে ২ হাজার করে মোট ১৪ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং নগদ ১০ লাখ করে মোট ৭০ লাখ টাকা ২ শত মেট্রিকটন করে ১৪শত মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর ফেনী চাঁদপুর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাসমূহে ৫ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা ১ শত মেঃ টন করে মোট ৬ শত মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও খুলনা সাতক্ষীরা পিরোজপুর বরগুনা বরিশাল ঝালকাঠি পটুয়াখালী ভোলা ও বাগেরহাটসহ ৯টি জেলার প্রতিটিতে এক লাখ টাকা করে গোখাদ্য বাবদ এবং এক লাখ টাকা করে শিশু খাদ্য বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আরো বরাদ্দ দেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭টি জোনের ৪১টি উপজেলার ৩৫০টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬৮৪টি ইউনিটে সর্বমোট ৫৫ হাজার ৫১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্ক বার্তা প্রচার শুরু করা হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দূর্গম এলাকা থেকে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকা ট্রলারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বেড়িবাঁধ ফসল গবাদিপশু মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি ক্ষয়ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল থেকে নিজের ও পরিবারের জীবন / সম্পদ রক্ষার জন্য শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গতকাল শনিবার বিকাল ৩টার পর থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছিল ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল ও আবহাওয়া অধিদফতরের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর জেটি জাহাজশূন্য করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং। শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটির জাহাজগুলো একে একে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সকালে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানোর সব যন্ত্রপাতি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খালি কনটেইনারের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জেটির আশপাশ এলাকা থেকে কনটেইনার সরিয়ে বন্দর ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্দর চ্যানেল নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা থেকে রোববার ভোর ছয়টা পর্যন্ত বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার ই জামান জানান আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে। এরপর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) শনিবার বিকেল চারটা থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে।
এদিকে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে সন্দ্বীপ বাঁশখালী আনোয়ারা কর্ণফুলী সীতাকু- মিরসরাই উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২৮টি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান রিজার্ভ ও ভলান্টিয়ারসহ ১০টি রেসকিউ গাড়ি উপকূলে পাঠানো হয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরানোর চেষ্টা করছে।
খুলনার উপকুল অঞ্চলজুড়ে সর্বত্রই উদ্বেগ : খুলনা অফিস জানায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’র প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বেড়ে যায় বৃষ্টি। একই সঙ্গে বইতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। বাতাসের কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়। বেড়ে যায় পানির উচ্চতা। চারদিকে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হয় খুলনার উপকূলের বাসিন্দাদের। চলে মাইকিং। তবে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক এলাকাবাসী শনিবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায়নি। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে চেষ্টা করতে থাকে স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় প্রশাসন। মহাবিপদ সংকেত জারির পরও আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি উপকূলের স্থানীয় লোকজন। তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হয়। বিশেষ করে খুলনার কয়রা দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে দিন কাটিয়েছেন আতঙ্কে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন খুলনা সদা জাগ্রত ভূমিকায় রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় খুলনায় ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নয়টি উপজেলায় মোট ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার জন্য দাকোপ কয়রা পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় দুপুর থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝয় মোকাবিলায় সাইক্লোন পিপাডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) এর কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খুলনা জেলা ও সিটি ইউনিটির আয়োজনে দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
সভায় জেলা প্রশাসক হেলাল বলেন মংলা বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বালা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ রাত আটটায় খুলনা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা জেলার কয়রা পাইকগাছা দাকোপ বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলার কিছু এলাকা ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সব সাইক্লোন শেন্টার প্রস্তুত রয়েছে এবং সাধারণ জনগণ এ শেন্টারে আসতে শুরু করেছে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা এম তরিকুল ইসলাম জানান প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলয়ের কারনে দক্ষিন-পশ্চিামাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশ পথ বলে পরিচিত শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী ও মাঝিকান্দি নৌ-রুটের পদ্মায় লঞ্চ সি-বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এ নৌ-রুটের ১৭টি ফেরীর মধ্যে চলাচল করছে রোরো ফেরী- শাহপরান কেটাইপ ফেরী-কপেতী কুমিল্লা ক্যামিলিয়া ফরিদপুর ড্রাম ফেরী- রামশ্রী যমুনা রানীক্ষেতসহ মোট ৮টি ফেরী। আর এত করে শিমুলিয়া ও কাঠালবাড়ী ঘাটে পারাপারে অপেক্ষায় রয়েছে পন্যবাহী ট্রাক কভ্যারভ্যানসহ হাজারো যানবাহন। বিআইডব্লিউটিএর সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের শিমুলিয়া নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক শাহদাৎ হোসেন ও মাওয়া নৌ-পুলিশ ফারীর টু আইসি এসআই মো:জহিরুল ইসলাম জানান গেলো শুক্রবার সন্ধ্যা রাত থেকেই যাত্রীদের নিরাপত্বর সার্থে এ নৌ-রুটে লঞ্চ সি-বোট চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বরগুনা : বরগুনার আমতলীতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমতলী-তালতলীতে ভারী বর্ষণ হয় গতকাল সারাদিন ধরে। উপকূলীয় চরাঞ্চলের মানুষ আশ্রয়ন কেন্দ্রে যেতে শুরু করে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক। মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে উপজেলা প্রশাসন ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়ন কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বরগুনা জেলা শহরের সাথে ফেরী যোগাযোগ ও আমতলী পায়রা নদী বন্দর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল ছিল বন্ধ।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের শুকনো খাবার সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা শুকনো খাবার সরবরাহ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন শনিবার দুপুরে বিভিন্ন আশ্রায় কেন্দ্র পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
বরিশাল সংবাদ দাতা জানান ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি উদ্ধার ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় বরিশাল ঝালকাঠি পটুয়াখালী বরগুনা সাতক্ষীরায় ৫টি চট্টগ্রামে ৩টি ও সেন্টমার্টিনে ২টি যুদ্ধজাহাজসহ নৌ কন্টিনজেন্ট ও মেডিকেল টিম মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খুলনা অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণতৎপরতা পরিচালনায় বানৌজা কর্ণফুলী তিস্তা পদ্মা এলসিভিপি ০১২ ও এলসিভিপি ০১৩ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪টি নৌ কন্টিনজেন্ট যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
Check Also
ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন
আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …