ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দুর্বল হয়ে আঘাত হানলেও এর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলের জনপদ। বিধ্বস্ত হয়েছে ১১ জেলার লক্ষাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা, উঠতি ফসল। গাছ ভেঙে, খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গাছ ও দেয়াল চাপা পড়ে ১১ জেলায় অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে- খুলনায় ২, বাগেরহাটে ২, পটুয়াখালীতে ৩, পিরোজপুরে ১ জন, মাদারীপুরে ১ জন, ভোলায় ১ জন, সাতক্ষীরায় ১, শরীয়তপুরে ১, বরিশালে ১, গোপালগঞ্জে ২, বরগুনায় ২ জন রয়েছে। এছাড়া ঝড়ে কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অর্ধশতাধিক মাছ ধরার ট্রলার ও জেলে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অন্ধকারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
কিছুটা গতি কমে রোববার ভোরে উপকূলে আঘাত হানে বুলবুল। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা ঝড়ের প্রথম ঝাপটা লাগে সুন্দরবনে। এতে ক্ষতির পরিমাণ কম হয় বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। ঝড়ের রেশ কেটে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়িঘরে ফিরে যান। এরপর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো। বিস্তারিত মানবজমিনের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
ভোলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে আরও ৯ জনের মরদেহ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাহাদুরপুর মেঘনা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১১ নভেম্বর) সকাল ও সন্ধ্যার পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া জেলেরা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট এলাকার বাসিন্দা।
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামাল দালাল (৩৫), আব্বাস মুন্সি (৪৫), হাসান মোল্লা (৩৮), রফিক বিশ্বাস (৫৫), নুরুন্নবী বেপারী (৩০), মফিজ মাতুব্বর (৩৫), নজরুল ইসলাম (৩৫), কবির হোসেন (৪০), মো. বিল্লালের (৩২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়াদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কমল জানান, রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোলার ইলিশা নদীতে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারটি ভেসে মেহেন্দিগঞ্জের বাহাদুরপুর সংলগ্ন মাছকাটা ও মেঘনা নদীর মোহনায় চলে আসে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রলারসহ ৯ জেলের মরদেহ উদ্ধার করে।
বরিশালের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে একটি ভাসমান লাশ উদ্ধারের পর একই পয়েন্টে দিনভর তল্লাশি চালিয়ে সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া ট্রলারসহ আরও আটটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরআগে, গত রবিবার দুপুর ২টার দিকে ট্রলার ডুবির পর ১০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় মোরশেদ (৩২) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করে ভোলা পুলিশ। এ নিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় মোট ১০ জনের লাশ উদ্ধার হলো।
এরআগে, রবিবার দুপুরে ঝড়ের কবলে পড়ে ২৪ জেলেসহ তোফায়েল মাঝির একটি ট্রলার ভোলার ইলিশা এলাকায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় আরও চার জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
বাগেরহাটে ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত ২
বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমির ফসল। পানিতে ভেসে গেছে চিংড়িসহ ৭ হাজার ২৩৪টি মৎস্য খামার। মাছচাষিদের ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। ভেঙে পড়েছে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। শুক্রবার রাত থেকে জেলার অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জেলাব্যাপী লাখ-লাখ গাছপালা ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। সুন্দরবনের দুবলারচরে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শুঁটকি পল্লীতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র করমজল ও হারবাড়ীয়ায় দুটি স্থাপনাসহ সামান্য কিছু গাছপালা ভেঙে পড়া ছাড়া বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাগেরহাটে ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে মহিলা ও শিশুসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, ফকিরহাট উপজেলার মাসুম শেখের স্ত্রী হীরা বেগম (৩৫), রামপাল উপজেলার বাবুল শেখের মেয়ে সামিয়া খাতুন (১৫)। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, বিধ্বস্ত বাড়িঘর ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ভিত্তিতে জেলার ৭৫টি ইউয়িনের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নকে দুর্যোগকবলিত ইউনিয়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাগেরহাট জেলার ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মানুষ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে নিহত দু’জনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।
শ্যামনগরে ১৬ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত: বিদ্যুৎবিহীন তিনদিন
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর আঘাতে সুন্দরবন ও সীমান্ত ঘেঁষা উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় গাবুরা, পদ্মপুকুর, মুন্সীগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, রমজাননগর ও কৈখালী ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় অধিকাংশ মৎস্য ঘের টানা বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ গাছ আছড়ে পড়েছে মাটিতে। এর মধ্যে কিছু বড় বড় গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ গোটা উপজেলায়। এ ছাড়াও মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় দীর্ঘক্ষণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে ও সরজমিন খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হোসাইন সাগর জানান, উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৩২৮টি মৎস্য ঘেরের মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫টি মৎস্য ঘের টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন মিয়া জানান, ১২টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। তার মধ্যে অতি বৃষ্টির কারণে ২০ শতাংশ আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম, পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন, আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু, মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আবুল কাশেম মোড়ল ও কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবদুর রহিম জানান, ইউনিয়নের অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ-গাছালি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তবে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়ায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সার্বিক বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, চার ঘণ্টাব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ে ১২টি ইউনিয়নে ১৬ হাজারেরও বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। তাছাড়া আধাপাকা ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ-গাছালি ভেঙে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মৎস্য ঘের ও আমন ফসল তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আমতলীতে দু-সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার দুটির গ্রামগঞ্জে সহস্রাধিক গাছপালা ও দুই হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এবং শতাধিক মাছের ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রেজাউল করিম জানান, উপজেলার ২৬ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষেতের ৩০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। রবিশস্যের ২৫০ হেক্টর শস্যর ৭০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে আরপাঙ্গাশিয়া ইউপির পশর বুনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ১/৪ অংশ ভেঙে লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। চাওড়ার কৃষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন দু’দিনের মধ্যে পানি অপসারিত না হলে আমন ধান ঘরে তোলা আর যাবে না। এতে তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রামগতি-কমলনগরে অর্ধশত কাঁচাঘর বিধ্বস্ত, ৩৭৫ ভেড়ার মৃত্যু
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার অর্ধ-শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় জোয়ারের পানিতে ডুবে ৩৭৫ ভেড়া মারা গেছে এবং ছোট-বড় অনেক গাছ উপড়ে পড়ে এবং ঘর বিধ্বস্ত হয়ে ১২ জন জন আহত হয়েছে। আহতের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিতে দু’উপজেলার চরাঞ্চলের আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে চলতি মৌসুমের আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের তেলির চর, চেয়ারম্যান বাজার ও কামাল বাজারে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। প্রায় ১০ মিনিটের ঝড়ে অর্ধশত কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়। উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্লার মেঘনা নদীর জোয়ারের পানিতে ডুবে ৩৭৫টি ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে খামারিরা দাবি করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়া খামারি রামগতি পৌরসভার বাসিন্দা আবুল কাশেম, জসিম, হাসান, আবুল কালাম, নিজাম, দিদার, জামাল, মঞ্জু ও নুরনবী দাবি করছেন জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে তাদের ৩৭৫টি ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে। এতে তাদের প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা।
গোপালগঞ্জে গাছ চাপায় নিহত ২
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ আঘাতে গোটা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে সদর উপজেলার গোলাবাড়িয়া গ্রামের মতি বেগম (৫০) ও কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের ছেকেন হাওলাদার (৭০)সহ ২ জন মারা গেছে। জেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, গত রোববার সকাল ৭টায় ঝড়ে গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিপন্ন মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি, বিদ্যুতের খুঁটি, গৃহপালিত পশু পাখি ও মুরগিসহ ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রামশিলের ভূমিহীন কুমুদিনির সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। সে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। থানা এলাকার বিশাল একটি গাছ পড়ে ব্যবসায়ী রুবেলের বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। ডুমুরিয়ার একটি মুরগির ফার্মের প্রায় ২ হাজার মুরগি মারা গেছে।
শরীয়তপুরে ১ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ২
শরীয়তপুর প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকেই শরীয়তপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছিল। শনিবার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। রোববার দুপুর দুইটা থেকে প্রবল বেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। প্রবল ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গাছের নিচে চাপা পড়ে জেলার নড়িয়া উপজেলার দেওজুরি গ্রামের আলী বক্স শেখ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি গাছচাপায় নিহত হয়েছে। নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন নড়িয়া থানা পুলিশ।
অন্যদিকে জেলার ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুরা ইউনিয়নের বড় সিধলকুরা গ্রামের আলেয়া বেগম (৪৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সিধলকুরা ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম খোকন। জাজিরা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ঝড়ের আঘাতে ১ হাজারেরও অধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ১৪শ’ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। তবে জাজিরার কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে প্রায় এক হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ হাজার ঘর, হাজার হাজার ফলজ ও বনজ গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং জোয়ারের পানি ঢুকে শীতকালীন ফসল, আমন, পানের বরজ, মৎস্য খামার এবং কাঁচা ও পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ৩ জন আহত হয়েছেন। গত ২ দিন যাবৎ বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সমস্যায় রয়েছে পুরো জেলা। এ ক্ষতি জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিষখালী নদীর তীরবর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত শুকনো খাবার ছাড়া কিছুই বিতরণ করা হয়নি।
পটুয়াখালীতে ২৮১০ ঘর বিধ্বস্ত
পটুয়াখালী প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র তাণ্ডবে রোববার রাতভর প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় পটুয়াখালী জেলায় দুইজনের মৃত্যু ও ২,৮১০টি ঘরবাড়ি, ২ লাখ ১ হাজার ৩০০টি গাছ বিধ্বস্ত এবং বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ২৮.৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বুলবুলের তাণ্ডবে জেলার সর্বত্র ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল বন্ধ।
পটুয়াখালী জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে জেলায় ২,৮১০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৩৯৮টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২৪১২টি। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ২৮.৫০ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। ১২ জন জেলেসহ একটি মাছধরা ট্রলার নিখোঁজ এবং দুই লক্ষাধিক গাছ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনডিসি মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান।
কলাপাড়ায় নিহত ২
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে মারা যায় সুফিয়া নামের এক বৃদ্ধা নারী এবং মাছ ধরা ট্রলার থেকে সমুদ্রে পড়ে মারা যায় বেল্লাল হোসেন নামের এক জেলে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র তাণ্ডবে ৩৬২টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত, ৫১৭৩ হেক্টর আমন ক্ষেত ও ১৫৬ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বুলবুল’র আঘাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বনবিভাগের সৃজিত প্রায় দেড় লাখ গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে শুক্রবার আবহাওয়ার বিরূপ খবরে বঙ্গোপসাগর থেকে কুয়াকাটার ঝাউবাগান সংলগ্ন এলাকায় এফবি মা কুলসুম নামের মাছ ধরা ট্রলার থেকে পড়ে পঞ্চগড়ের বেল্লাল হোসেন (৪০) নামের এক জেলে নিখোঁজ হয়। শনিবার বিকালে স্থানীয়দের সংবাদে মহিপুর থানা পুলিশ সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার করে জেলে বেল্লালের মরদেহ। এ ছাড়া রোববার সকালে পূর্ব ধানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে সুফিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারী বার্ধক্যজনিত কারণে নিহত হয় বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান।
ইন্দুরকানীতে ৮ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত, আহত ১০
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: ইন্দুরকানীতে বুলবুলের আঘাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ৮ শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি এবং শিশু সহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন সহ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার থেকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। রোববার বুলবুলের প্রভাবে এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ পড়ে ও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সহ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঝড়ে উপজেলার দিঘিরপাড় জামেয়াই ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার একটি টিনশেড ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।
পিরোজপুরে দেড়লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পিরোজপুর প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে পিরোজপুরে দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি আড়াই হাজার কাঁচাঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিজমি, মাছের ঘের, নার্সারি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় ২২৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ৯০ হাজার ৬১৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ইলিশা এলাকার মেঘনা নদীতে ২৪ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ জন জেলে জীবিত উদ্ধার ও ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন জেলে।
স্টাফ রিপোর্টার, ব?রিশাল থেকে জানান, রোববার বিকাল ৩টার দিকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র আঘাতে ঘরচাপা পড়ে আশালতা মজুমদার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা মারা যান। উজিরপু?র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার মৃত্যুর বিষয়টি নি?শ্চিত করে জানান, বৃদ্ধা আশালতা উ?জিরপু?র পৌর এলাকার এক নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মাদারসী এলাকার বাসিন্দা।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, বুলবুলের প্রভাবে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী মারা গেছেন। রোববার বেলা ৩টার দিকে বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে ঘরের ভিতর আলমারির নিচে চাপা পড়ে তিনি মারা যান।