ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: আগামীকাল সেই দু:সহ স্মৃতি বিজড়িত ভয়াল ১৫ নভেম্বর। উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দু:স্বপ্নরে দিন। ২০০৭ সালের এই দিনে সুপার সাইক্লোন আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। লন্ডভন্ড করে দেয় প্রকৃতি ও মানবতাকে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ সবকটি উপজেলাকে। দু:সহ স্মৃতি আর বেদনায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জড়িয়ে আছে এই দিনটি। সিডরের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এর স্মৃতি চিহ্ন আজও উপকূলের মানুষ সিডরের ভয়াবহতা বয়ে বেড়াচ্ছে। সিডরের অগ্নি মুর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনো আঁতকে উঠে নিজের অজান্তে।
গত কয়েক বছরে সিডর বিধস্থ বাগেরহাটবাসী ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও দেশীবিদেশী অগনিত এনজিও তাদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার নাম করে দাতা সংস্থার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ ও পুর্নবাসনের নামে সরকারি বেসরকারি সংস্থা সঠিকভাবে কাজ না করে লোপাট ও আত্মসাত করেছে বরদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ।
ভয়াল ওই সিডরে বলেশ্বরের উন্মত্ততায় ধ্বংশ স্তুপে পরিণত হয় শরণখোলাসহ ওই এলাকার জনপথ। চারিদিক মানুষ আর পশুপাখির লাশে একাকার হয়ে যায়। পরবর্তীতে সৌদি সরকার, মুসলিম এইড এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিও যে গৃহ নির্মাণ করেছে তার বাসযোগ্য নয়। উপকূলবাসী চায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ।
সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য সহযোগিতা এসেছে বলেশ্বরের পাড়ের মানুষগুলোর জন্য তা নিতান্তই কম নয়। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি গৃহ। সরকারি হিসেবে সিডরে বাগেরহাট জেলায় নিহত হয়েছে ৯০৮জন, আহত ১১ হাজার ৪২৮ জন। সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্থ হয় ৬৩ হাজার ৬০০ বাড়িঘর। আংশিকভাবে বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় পাকা ৫ কি.মি. এবং কাচা প্রায় ৫০ কি.মি.। ১৬.৫ কিমি বাঁধ, ২০৬টি স্কুল ও মাদ্রাসা, ৫টি কলেজ, ৪হাজার ৭৬৯টি নৌকা ও ট্রলার ধ্বংস হয়। মারা পড়ে ১৭ হাজার ৪২৩টি গবাদি পশু। বিনষ্ট হয় ১২ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল ও ৮ হাজার ৮৮৯ হেক্টর চিংড়ি ঘের।
বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী মহারাজ হাওলাদার বলেন, ‘পোলা মাইয়্যাসহ ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নি:স্ব জীবন কাটছে কোন মতে। সরকার ও এনজিও থেকে সহযোগিতা পেয়ে বছরের ৬ মাস খেয়ে পড়ে থাকতে হয়। কিন্তু মোগো কেউ কাজের ব্যবস্থা করে দেয় না। মোর ভাইবাগাররা কাজ করতে ঢাকা ও চিটাগাং চলে গেছে। মোগো যদি এহন নিত্য কাজ দেয় তাহলে খেটে পড়ে জীবন বাছবে’।
কথা হয় একই গ্রামের জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে ও ভাই সিডরে হারাইছি। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি-জায়গাজমি সব গেছে। এহন ভূমিহীন হয়ে রাস্তার পাশে থাকতে হয়। যদি কামের সুযোগ হইতো তাহলে জমি কিনে থাহার ঘর বানাইতাম। মোগো এহন সাহায্যে লাগবে না, কাজ করার জায়গা কইর্যা দিবে সরকার’।
দক্ষিণ সাউথখালী সেকেন্দার বলেন, অপর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ এ এলাকার মানুষের জন্য অন্যতম সমস্যা। যদি টেকসই বেড়িবাঁধ ও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, তাহলে সিডরের মত প্রাকৃতিক দুযোর্গে হতাহতের পরিমাণ অনেক কম হবে।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, শরণখোলাবাসীকে রক্ষার জন্য আবাসন ব্যবস্থা, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পেশাজীবিদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মাণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, সিডরে তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে এবং সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। স্বজন হারানো এ জনপদের মানুষের প্রাণের দাবি বসবাসের জন্য একটু ঘর ও টেকসই বেড়িবাঁধ। জনসংখ্যা অনুপাতে হয়নি সাইক্লোন শেল্টার। দুর্যোগের পর বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে নির্মিত শেল্টারগুলোর কাজের মান নি¤œ হওয়ায় ইতোমধ্যে তার অধিকাংশ ভবন ব্যবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারগুলোরও। এখনও শতশত পরিবার খুপড়ি ঘরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
Check Also
আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরের সামনে …