২৭ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব অভিযান চলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা। মাছে এমন ভেজাল হতে দেখে তিনি নিজেও বিব্রত। দুঃখ করে বলেন, কোনো উদ্যোগেই ভেজাল নির্মূল হচ্ছে না। একটিতে কমলে অন্যটিতে বাড়ে। মাছেও ভেজাল হতে পারে, এমন ধারণা কম ছিল।
মৎস্য অফিস ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভৈরব নৈশ মৎস্য আড়তের পরিচিতি ও সুনাম সারা দেশেই রয়েছে। মূলত কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে আহৃত মাছের বড় পাইকারি বাজার হলো এই আড়ত। রাজধানীতে ভৈরব আড়তের মাছের বেশ কদর। এই কারণে তুলনামূলকভাবে এই আড়তের মাছের দাম বেশি। সুনামকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এখন মাছে ভেজাল মেশাচ্ছেন। এর মধ্যে চিংড়ি অন্যতম। প্রতারণার কৌশল হিসেবে চিংড়ির মাথায় সিরিঞ্জ দিয়ে জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে মাছের ওজন বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। চিংড়ি আনা হচ্ছে সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল থেকে।
একই সূত্র জানায়, ভৈরব আড়তে এখন হাওরের চিংড়ি কম পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা ও খুলনা থেকে আমদানি করা চিংড়ির প্রায় সবই জেলযুক্ত। ভাতের মাড় ও আরো কয়েক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের জেল তৈরি করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ওই জেল মাথায় পুশ করা হয়। সম্প্রতি ভৈরবেও এই জেল পাওয়া যাচ্ছে এবং কিছু ব্যবসায়ী মেঘনা নদী থেকে আহৃত চিংড়িতে জেল পুশ করছেন। সম্প্রতি বোয়াল মাছেও ভেজাল করা হচ্ছে। সিরিঞ্জ দিয়ে পেটে পানি ঢুকিয়ে ওজন বাড়ানো হচ্ছে। পাঁচ কেজি ওজনের একটি বোয়ালে এক কেজি পানি পুশ করা যায়।
এতে ক্রেতারা তিনভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রথমত ওজন প্রতারণা, দ্বিতীয়ত দাম বেশি ও সর্বশেষ মাছের গুণগত মান নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রথম অভিযান পরিচালনা করা হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জব্দ করা হয় জেল পুশ করা ৯ কেজি চিংড়ি। এই অপরাধে তাঁকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযান চালানো হয় ১২ নভেম্বর। ওই দিন একই অভিযোগে আড়ত থেকে ১১০ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সুধন বর্মণ নামের এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সুধন আড়তের অন্তর ফিশ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। বাড়ি পৌর শহরের জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুরে।
সর্বশেষ অভিযানটি চলে গতকাল বৃহস্পতিবার। এ সময় হালিম মিয়া ও মুরাদ মিয়া নামে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যবসায়ী হালিম জানান, তিনি এই চিংড়ি মুরাদের কাছ থেকে কিনেছেন। তিনি জানতেন না চিংড়িতে জেল পুশ করা।
অভিযোগ বিষয়ে মুরাদের বক্তব্য হলো, তিনি চিংড়ি এনেছেন খুলনা থেকে। যা করা হয়েছে কেন্দ্রস্থল থেকে।
মঙ্গলবারের অভিযানে অভিযুক্ত হওয়া ব্যবসায়ী সুধন বর্মণও জানালেন, ভৈরব থেকে তিনি জেল পুশ করেননি। এই মাছ কিনে আনেন মো. আসলাম নামে খুলনার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।
বুধবার মুঠোফোনে কথা হয় খুলনার প্রতিষ্ঠিত মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আসলামের সঙ্গে। তিনি ভৈরবের ব্যবসায়ীদের কাছে চিংড়ি বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন। তাঁর বিক্রি করা মাছে জেল পুশ করেছেন কি না, এমন প্রশ্ন করামাত্র সন্ধ্যার পর কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুজন লতিফুর রহমান জানালেন, ‘জেলযুক্ত মাছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এই কারণেই চেষ্টা করছি ঘন ঘন অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের বাধার মধ্যে ফেলতে। আশা করি, আর যা–ই হোক, ভৈরবে ভেজাল মাছ বিক্রি করে বিক্রেতারা খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারবেন না।’