জামায়াতের নতুন আমির নিয়ে নানা প্রশ্ন: জামায়াতের বক্তব্য

স্বাধীনভাবে পূর্ণ আমানতদারির সাথে রুকনগণ আমীরে জামায়াত নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন -মাওলানা এটিএম মা’ছুম

গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে রিপোর্টার সেলিম জাহিদের “নতুন আমীর নিয়ে জামায়াতে নানা প্রশ্ন” শীর্ষক প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং জামায়াতকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই এ অসত্য রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক ইসলামী দল। জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত হয় সংগঠনের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে। গঠনতন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোট চাওয়া কিংবা প্রার্থী হিসেবে কাউকে উপস্থাপনেরও কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান আমীর মকবুল আহমাদ ‘এখনও আমীর আছেন’। বার্ধক্যজনিত কারণে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তিনি সংগঠনের নিকট আবেদন পেশ করেন ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্তৃক প্যানেল নির্ধারণের সময় তাকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে তার এই অনুরোধ গ্রহণ করেন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যদের নিকট তার আবেদন পৌঁছানো হয়। মকবুল আহমাদকে কৌশলে বাদ দেয়া হয়েছে এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা কর্তৃক নির্বাচিত ৩ জনের প্যনেলে ডা. শফিকুর রহমান ৬ ভোট বেশি পেয়ে এক নম্বরে থাকেন মর্মে প্রথম আলোর রিপোর্টে দেয়া এ তথ্য সঠিক নয়। পুরুষ এবং মহিলা রুকনদের ভোট এক ধরনের ব্যালটে গ্রহণ করা হয়েছে এবং পুরুষ ও মহিলা ভোট আলাদা করে গণনা করা হয়নি। তাই কে নারী ভোট বেশি পেল তা নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কারোর জানার কোনোই সুযোগ নেই। এ সব তথ্যাদি প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সম্পূর্ণ মনগড়া এবং মিথ্যা। এখানে স্বাধীনভাবে পূর্ণ আমানতদারির সাথে রুকনগণ আমীরে জামায়াত নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন, এত দ্রুততার সাথে কেন ফলাফল ঘোষণা করা হলো মর্মে যা বলা হয়েছে তা অযৌক্তিক। আমীরে জামায়াতের নির্বাচনের তফসিল ছিল ‘১৭ অক্টোবর থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।’ ভোট গ্রহণ শেষে প্রিজাইটিং অফিসার এবং তার সাহায্যকারী আরও ২/৩ জনকে স্থানীয়ভাবে ভোট গণনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা ভোট গণনার রিপোর্ট লিখিতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট পাঠিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করেন এবং ১২ নবেম্বর সেই ফলাফল ঘোষণা করেন। সূতরাং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে কোনো তাড়াহুড়া করা হয়নি। এখানে তাড়াহুড়ার প্রশ্নই আসে না। আমীরে জামায়াত নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠনতন্ত্র মোতাবেক যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অতীতের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ আমানতদারির সাথেই আমীরে জামায়াত নির্বাচনের ভোট গ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আমীরে জামায়াত শপথ গ্রহণ করবেন এবং দায়িত্ব ভার বুঝে নেবেন। তাই অযথা বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা কারো কাম্য নয়।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবাদটি যথাস্থানে ছেপে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করবেন।

প্রথম আলোর সেই রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো-

নতুন আমির নিয়ে জামায়াতে নানা প্রশ্ন

জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির শফিকুর রহমানকে নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা কানাঘুষা চলছে। শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আমি​র পদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কৌশলে প্রভাব বিস্তার করার কথা উঠেছে।

১০ নভেম্বর জামায়াতের আমির পদের নির্বাচন শেষ হয়। পরদিন রাতে জামায়াত গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, শফিকুর রহমান আমির নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এখনো তাঁর শপথ গ্রহণ হয়নি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বলছে, এবার আমির পদে প্রার্থী নির্বাচনের প্রথম ধাপে তিন সদস্যের ‘আমির প্যানেল’ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। বর্তমান আমির মকবুল আহমাদকে প্যানেল থেকে কৌশলে বাদ দেওয়া হয়। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে নির্বাচনের আগে থেকেই দলের ভেতরে একধরনের প্রচার চালানো হয়। যদিও মকবুল আহমাদ অসুস্থ বা দলের নেতৃত্ব দিতে অক্ষম, এমন কথা তিনি দলকে কখনো জানাননি। মকবুল আহমাদ ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব আছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে শফিকুর রহমানকে আমির ঘোষণা করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্যরা গোপন ভোটে তিন সদস্যের ‘আমির প্যানেল’ নির্বাচন করেন। এবার এই প্যানেলে ছিলেন, দলের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এবং দুই নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ার। তাঁদের মধ্যে সবার জ্যেষ্ঠ হলেন মুজিবুর রহমান। শফিকুর রহমান ৬ ভোট বেশি পেয়ে প্যানেলে ১ নম্বরে আসেন।

অতীতে জামায়াতের আমির নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, প্যানেলে যিনি ১ নম্বরে থাকেন, শেষ পর্যন্ত তিনিই আমির হন। দলে আলোচনা আছে, মজলিশে শুরার নারী সদস্যদের ভোটে শফিকুর রহমান আমির নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন। আগে মজলিশে শুরার নারী সদস্যরা কেবল আমির নির্বাচনে ভোট দিতেন, কিন্তু তিন সদস্যের আমির প্যানেল নির্বাচনে তাঁদের ভোটাধিকার ছিল না। এবার শফিকুর রহমানের আগ্রহে নারী সদস্যদের এই ভোটাধিকার দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জামায়াতের মহিলা বিভাগ তত্ত্বাবধান করেন দলের আমির। তিনি ‘অসুস্থ’ বলে এ দায়িত্ব পালন করতেন শফিকুর রহমান। যদিও তিনি ‘অসুস্থ’ নাকি তাঁকে ‘অসুস্থ’ বলে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন আছে।

এ ছাড়া আমির নির্বাচনের আগ থেকেই শফিকুর রহমান ও মুজিবুর রহমানকে ঘিরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে পৃথক তৎপরতা ছিল। শুরু থেকে একটা প্রচার ছিল যে শফিকুর রহমান আমির হচ্ছেন। তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলে নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কথা তোলার মতো কিছুই নেই। এ রকম কিছু বলে থাকলে সেটা হয়তো কারও চিন্তা। আমরা এমন কিছু শুনিনি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবারই প্রথম নির্বাচন শেষ হওয়ার পরদিনই নতুন আমিরের নাম ঘোষণা করা হয়। অতীতে নির্বাচন শেষ হওয়ার এক-দুই সপ্তাহ পর ফল ঘোষণা করা হতো। সারা দেশে দলের প্রায় ৪৫ হাজার শপথধারী সদস্য বা রুকন আছেন। তাঁরা গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোট দেন। শেষ দিন কত ভোট পড়েছিল, কখন ব্যালট ঢাকায় পৌঁছাল, কখন গণনা শেষ হলো, এত দ্রুততার সঙ্গে কেনই-বা ফল ঘোষণার প্রয়োজন হলো? এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের একটা অংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনসহ নানাভাবে চেষ্টা করেও নতুন আমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আমির প্যানেলে থাকা মিয়া গোলাম পরওয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নতুন আমিরের এখনো শপথ হয়নি। তাই এই মুহূর্তে আমি সাংগঠনিক কোনো বিষয়ে কথা বলব না। আমি গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্তও না। শপথের পর নতুন আমির কথা বলবেন।’

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।