ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার দেবহাটায় সখিপুর আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় মুল পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র জালিয়াতি করে ৯ ভুয়া পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের ঘটনায় জড়িত জালিয়াতি চক্রের তিন হোতাকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা ও সখিপুর আলিম মাদরাসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার শামছুন্নাহার বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-৪। প্রবেশপত্র জালিয়াতি করে বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভুয়া পরীক্ষার্থী সাজিয়ে পিইসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর ঘটনায় জড়িতের অভিযোগে মামলাটিতে ওই কেন্দ্র থেকে আটক হওয়া হল পরিদর্শক পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সুপার নুরুল ইসলাম সহ জালিয়াত এ চক্রটির অপর দুই হোতা নাংলা ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার আবুল বাশার ও একই মাদ্রাসার সহকারী মোকছেদ আলীকে আসামী করা হয়েছে। মামলা দায়ের পরবর্তী শুক্রবার আটক জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা হল পরিদর্শক নুরুল ইসলামকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
তবে এখনো পলাতক রয়েছেন অপর দুই আসামী ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার বহু জালিয়াতির নায়ক আবুল বাশার ও একই মাদ্রাসার সহকারী মোকছেদ আলী। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সুপার নুরুল ইসলাম, নাংলা ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার আবুল বাশার ও সহকারী শিক্ষক মোকছেদ আলীর নিয়ন্ত্রণে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিলো চক্রটি। চক্রটির মুলহোতা হিসেবে রয়েছে ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার ও মামলার পলাতক আসামী আবুল বাশার। সে কেবল ওই মাদ্রাসার সুপার নয়। তথ্যগোপন করে বাশার চাকুরী করতেন যুব উন্নয়নের ন্যাশনাল সার্ভিসেও। সেখানে প্রায় ২০ জন ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীর হয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া প্রত্যয়ন দেয়ার ঘটনায় কিছুদিন আগেই বাশার সহ ওই ২০ কর্মীকে চাকরীচ্যুত করা হয় ন্যাশনাল সার্ভিস থেকে। বর্তমানেও মাদরাসার সুপারের পাশাপাশি বাশার চাকরী করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
তাছাড়া উপজেলাব্যাপী আলোচিত চিহ্নিত জামায়াত নেতা বাশার গাজীরহাট বাজারে জালিয়াতির আরেক রমরমা ব্যবসা খুলে বসেছেন ‘কাজী অফিস’ নামে। কাজী অফিসটিতে জন্ম নিবন্ধন সহ বিভিন্ন কাগজপত্র জালিয়াতি করে বাল্যবিবাহ থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রি বিহীন ভুয়া বিয়েও অহরহ দিয়ে থাকে সে। ইতোপূর্বেও কুলিয়া এলাহী বকস মাদরাসায় ভুয়া পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করানোর ঘটনায় প্রশাসনের অভিযানকালে পরীক্ষার হল ছেড়ে সুকৌশলে দৌড়ে পালিয়ে যায় আবুল বাশার। প্রতারণার নানা ব্যবসার পাশাপাশি নাংলা ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার চিহ্নিত এ প্রতারক আবুল বাশারের নেতৃত্বে একই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মোকছেদ আলী ও পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সুপার আটক নুরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মিলে চালিয়ে আসছিলো পিইসি সহ অন্যান্য পরীক্ষায় জালিয়াতির রমরমা কারবার। তাদের পরিচালনাধীন নাংলা ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসা ও পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা সহ উপজেলাতে থাকা নামসর্বস্ব মাদরাসা গুলোর পিইসি ও অন্যান্য পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ানোর মৌখিক টেন্ডার নিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র জালিয়াতি করে ভুয়া পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসাতো এ চক্রটি।
সুদীর্ঘ অপকর্মের পর বৃহস্পতিবার পিইসি পরীক্ষা চলাকালে সখিপুর আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন ও দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা ৯ ভুয়া পরীক্ষার্থীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। সাথে সাথে আটক করা হয় সেখানকার দায়িত্বরত হল পরিদর্শক ও জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা পারুলিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার সুপার নুরুল ইসলামকে। অভিযানের ঠিক আগ মুহূর্তেও পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই অবস্থান করছিলেন জালিয়াত চক্রটির মুলহোতা নাংলা ঘোনাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুপার আবুল বাশার ও সহকারী শিক্ষক মোকছেদ আলী। কিন্তু ইউএনও এবং ওসিসহ পুলিশকে আসতে দেখে কৌশলে দৌড়ে পালিয়ে যায় তারা। পলাতক জালিয়াত চক্রের মুলহোতা আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার পরবর্তী রিমান্ডে নেয়া হলে পূর্বের বহু পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে অংশ নেয়া ভুয়া পরীক্ষার্থীদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও পরীক্ষায় জালিয়াতির এ সিন্ডিকেটটি ধ্বংস হবে বলে অভিমত একাধিক শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাবিদের।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামীদের মধ্যে একজন আটক এবং অপর দুজন পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।