সাতক্ষীরা আগরদাঁড়ী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকি দিয়ে পদত্যাগে স্বাক্ষর করানোর অভিযোগে সভাপতি গোলাম মোরশেদের বিরুদ্ধে মামলা

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  নিজস্ব প্রতিনিধি: সদরের আগরদাঁড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ঘরে আটকে রেখে  হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। একই সাথে মাদ্রাসার যাবতীয় কাগজপত্র আত্মসাৎ ও মাদ্রাসার বিভিন্ন দলিলপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হযেছে মামলায়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কাশেমী সম্প্রতি আমলী আদালত-১, সাতক্ষীরা সদরে মাদ্রাসার সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোরশেদসহ চার জনকে আসামী করে এই মামলা করেছেন। (মামলা নং- সিআর ৬৭৫/১৯) মামলার অপর আসামী হচ্ছে গভর্নিং বডির সদস্য ইন্দিরা গ্রামের হাবিবুর রহমান হবি, আগরদাঁড়ী গ্রামের আব্দুস সোবহানের পুত্র আকতার ফারুখ, মোসলদ্দীনের পুত্র মফিজুল ইসলাম ও মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।
মামলা ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুস সালাম কাশেমী। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তিনি ছুটিতে ছিলেন। ইতোমধ্যে গত ৯ অক্টোবর বেলা ১১টায় মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম মোরশেদ, গভর্নিং বডির সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, আক্তার ফারুখ, মফিজুল ইসলাম ও উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান অতর্কিতভাবে অস্ত্র-শস্ত্রসহ অধ্যক্ষের অফিস রুমে প্রবেশ করে এবং রুমের দরজা ও জানালা বন্ধ করে দেয়। তারা হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এসময় তারা মাদ্রাসার আলমারীর চাবি কেড়ে নেয় এবং আলমারি থেকে মাদ্রাসার সকল কাগজপত্র, ক্যাশ খাতা, ভাউচার ডিমান্ড, জমির দলিল, রেকর্ডপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র বের করে সদস্য হাবিবুর রহমান তার ব্যাগে ভর্তি করে। গভর্ণিং বডির সদস্যরা মাদ্রাসার বিভিন্ন দলিলপত্র ও তথ্য লোপাট করে তার দায়ভার অধ্যক্ষের ঘাড়ে চাপাতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে পারে বলে এই আশঙ্কায় অধ্যক্ষ সকল আসামিদের সাথে পদত্যাগপত্র ও সকল কাগজপত্র ফেরৎ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। এসময় আসামিরা অধ্যক্ষের কাছে চাঁদা দাবি করেন। অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম জমি বন্ধক রেখে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে এবং স্ত্রী-কন্যার গহনা বন্ধক রেখে টাকা যোগাড় করেন। অধ্যক্ষ ওই টাকা সদস্য আক্তার ফারুক ও হাবিবুর রহমান নগদ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, সভাপতি গোলাম মোরশেদ নগদ ৪ লক্ষ টাকা এবং ১ লক্ষ টাকার একটি চেক লিখে নেয়। ইতোমধ্যে গত ১৩ অক্টোবর সকাল ৯টার পর সদস্য আক্তার ফারুক তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে মাদ্রাসার উপস্থিত হলে অধ্যক্ষকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। এসময় অপর বিবাদী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবিও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে অধ্যক্ষের কাছে আরও টাকা দাবি করে হুমকি দেয়।
প্রাপ্ত অন্য একটি তথ্যে জানা গেছে, ইতোপূর্বে মাদ্রাসাতে সহকারি গ্রহস্থাগারিক নিয়োগে মাদ্রাসার সভাপতি গোলাম মোরশেদ ১৪ লক্ষ টাকা এবং অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদের নিয়োগে ১২ লক্ষ টাকা নগদে গ্রহণ করেছেন। এ সমস্ত অপকর্ম ঢাকতে সভাপতি ও তার সঙ্গপাঙ্গরা অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম কাশেমীকে অপসারণের পথ বেছে নিয়েছে এবং নতুন একজন অধ্যক্ষ নিয়োগে বড় ধরনের অর্থ বাণিজ্যের পরিকল্পনা করেছেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম গত ৩ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর লিখিতভাবে এসব অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম মানসিকভাবে দারুণ অসুস্থ। তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে মাদ্রাসার কমিটির রোসানলে পড়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্যরা মাদ্রাসার বিভিন্ন তথ্য নষ্ট করতে পারে এবং নতুন নতুন ভূয়া ভাউচার তৈরী করে অধ্যক্ষকে বিতর্কিত করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদনও করেছেন।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সালামের কথিত ওই পদত্যাগ বিষয়ে শনিবার সকালে আগরদাঁড়ী এলাকায় গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসি জানান, মাদ্রাসার সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোর্শেদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি ও নব্য আওয়ামী লীগার আখতার ফারুক এলাকার বহু নিরীহ ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। অনেক ঘটনার স্বাক্ষী রয়েছেন আব্দুস সালাম কাশেমী। তিনি বিপদমুক্ত থাকতে গভর্ণিং বডির বহু অপকর্ম মুখ বুঝে ছিলেন। যে কারণে মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ সম্পর্কে তিনি মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। আগরদাড়ী মাদ্রাসা মোড়ের দোকানে বসা একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্ট পরিচালিত হয় সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে। তাছাড়া প্রতি মাসে রয়েছে আভ্যন্তরীন অডিট কমিটি। এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মতো। মাদ্রাসার ক্ষমতাধর সদস্যরা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার কারণে কেউ খোলাসা করে কথা বলতে পারছে না। তারা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।patradoot.net

Check Also

আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরের সামনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।