খুলনা অফিস : গত ১০ বছরে তিন বার কাঁচা পাট রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশের বৃহত্তম কাঁচা পাট বিক্রি কেন্দ্র খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে কাঁচা পাট রফতানিতে ধস নেমেছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে কাঁচা পাট রফতানিকারকরা বিদেশের বাজার হারিয়েছে। ২০টি দেশের স্থলে এখন আটটি দেশে রফতানি হচ্ছে। বিগত দিনের রফতানি বন্ধের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণী হয়েছে।
পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর পর রোদে শুকিয়ে যে পাট পাওয়া যায় তাকে ‘ধানকাট’ বলা হয়। তোশা জাতের পাটের খারাপ অংশকে ‘বিটিআর’ বলে আর সাদা জাতের পাটের খারাপ অংশ থেকে ‘বিডাব্লিউআর’ বলা হয়। রফতানিকারকদের ভাষ্য, রফতানি নিষেধাজ্ঞার জাঁতাকলে পড়ে ব্যবসায়ীরা যে লোকসান দিয়েছে-সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর সরকার কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ করে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তোশা জাতের পাটের খারাপ অংশটি রফতানি বন্ধ করে বাকি ‘বিডাব্লিউআর’ জাতের পাট রফতানির সুযোগ দেয়। ২০১১ সালের ৯ মার্চ সব ধরনের পাট রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৫ সালের ১ নবেম্বর আবারও পাট রফতানি বন্ধ হয়। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি ‘বিটিআর’ ও ‘বিডাব্লিউআর’ জাতের পাট রফতানির নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল দৌলতপুরের বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
ওই সভায় উল্লেখ করা হয়, যুগ যুগ ধরে কাঁচা পাট ব্যবসা স্থিতিশীল ছিলো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাঁচা পাট রফতানি নিষিদ্ধ করে। ২০১০ সালে জাটজাত পণ্য দিয়ে মোড়কজাত করা বাধ্যতামূলক আইন করা হয়। তখন পাটকলগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক মাস কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাটকলের চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে লাখ লাখ বেল পাট রফতনিকারকদের গুদামে মজুদ থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২৯ মে সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। এই সূত্র মতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জ ও দৌলতপুর থেকে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৯ বেল কাঁচা পাট রফতানি করে দেশ ৮৫৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮ বেল কাঁচা পাট রফতানি করে ১৩৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। গত তিন মাসে ভারতে ৮৫ হাজার বেল, পাকিস্তানে ১১ হাজার বেল, চীনে ১৬ হাজার ও নেপালে ১১ হাজার পাট রফতানি হয়েছে। বিগত দিনে যেসব দেশ পাট আমদানি করতো দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সে পরিমাণ সরবরাহ না পাওয়ায় তারা এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
বিজেএ’র সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী এসোসিয়েশনের ৫৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বলেন, বারবার কাঁচা পাট রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণেই দেশের কাঁচা পাট ব্যবসায় ধস নামে। ৮০ শতাংশ পাট রফতানিকারক ব্যাংকের খেলাপী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে কাঁচা পাট উৎপাদন হচ্ছে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ বেল। জুট স্পিনিং মিলগুলোতে প্রয়োজন হয় বার্ষিক ৫০ লাখ বেল। উদ্বৃত্ত পাট রফতানিকারকদের গোডাউনে পড়ে থাকে। অথচ একটি চক্র বার বার সরকারকে ভুল বুঝিয়ে পাট রফতানি বন্ধের কারণে রফতানিকারকরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলবো। আশা করি, আগামী দিনগুলোতে কাঁচা পাট রফতানি বাণিজ্য চাঙ্গা হবে।
Check Also
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন প্রবাজপুর শাহী মসজিদ: সংস্কার না হওয়ায় ধ্বংসের আশঙ্কা, ৫০বিঘা জমি বে-দখলে, পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে …