কারসাজি করে পিয়াজের দাম বাড়ানোর অভিযোগে ১০ আমদানিকারককে শুল্ক গোয়েন্দাদের জেরা

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ কারসাজি করে পিয়াজের দাম বাড়ানোর অভিযোগে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ৪১ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে গতকাল থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে শীর্ষ ১০ আমদানিকারককে জেরা করা হয়েছে। আজ বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে আমদানিকারকদের আমদানি, মজুত ও মূল্যের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। এদিকে উঠা-নামাসহ টানা দুই মাস ধরে লাগামহীন পিয়াজের দাম। দাম স্থিতিশীল করতে আমদানি শুল্ক মওকুফ, ঋণের সুদ কমানো, জরুরিভিত্তিতে বিমানে আমদানি করাসহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। সর্বশেষ আকাশপথে পিয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য চার্জ মওকুফ করার ঘোষণা দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
কিন্তু সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে আবারো বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যেটির দাম। গতকাল খুচরা বাজারে আবারো ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। পিয়াজের দাম আবারো বাড়ায় গতকাল পিয়াজ আমদানি ও মূল্যবৃদ্ধির অনুসন্ধানে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর শুনানি গ্রহণ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মোট ৪১ পিয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শুনানি গ্রহণ করা হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ১০ আমদানিকারক গত আগস্ট থেকে ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৯ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৪ হাজার ৩১ টন পিয়াজ আমদানি করেছেন। সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জের টিএম এন্টারপ্রাইজ। এ আমদানিকারক ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা মূল্যে ৯ হাজার ২০ টন পিয়াজ আমদানি করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, চাঁপাই নবাবগঞ্জের একতা শাসা ভান্ডার ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা খরচ করে ৩ হাজার ৩৯৪ টন, এম/এস সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা খরচ করে ৩ হাজার ৪৪৮ টন, নূর এন্টারপ্রাইজ ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৪৩৮ টন, এম/এস আরএম অ্যাগ্রো ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৭০০ টন, টিএম এন্টারপ্রাইজ ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ হাজার ২০ টন এবং বিএইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৭৪৬.৫০ টন, রাজশাহীর এম/এস ফুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স ১৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৮৫ টন, সাতক্ষীরার এম/এস দীপা এন্টারপ্রাইজ প্রোপার্টিজ (প্রো. সুকুমার দাস) ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার ৬৯৩ টন, নওগাঁর জগদীশ চন্দ্র রায় ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৫৭৪.৫০ টন এবং বগুড়ার এম/এস সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৯৩২ টন পিয়াজ আমদানি করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে পিয়াজের মূল্য লাগামহীন হয়ে গেছে। তাই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কি কারণ সেটি বের করার জন্য সারা দেশের শীর্ষ আমদানিকারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত দুই মাসে তারা কি পরিমাণ পিয়াজ কি দামে, কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করেছেন। আমদানি খরচ কত পড়েছে। আমদানি খরচের সঙ্গে যাবতীয় সকল খরচ বাদ দিয়ে বাজারে এসব পিয়াজের দাম কত হতে পারে। এছাড়া আমদানি করা সকল পিয়াজ তারা বিক্রি করেছেন কিনা। নাকি তারা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মজুত করে পিয়াজের সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আমদানিকারকদের কাছে ঠিক কি পরিমাণ পিয়াজ মজুত আছে তা আজকের মধ্যে জানা যাবে। সাড়ে তিন মাসে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৬.৪৭ টন পিয়াজ আমদানি করা সত্ত্বেও কেন পিয়াজের বাজার এত চড়া তা খতিয়ে দেখবে শুল্ক গোয়েন্দারা। এছাড়া কারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লাগামহীন বাজার করে রেখেছে তাদেরকেও চিহ্নিত করা হবে।
এদিকে, শুল্ক গোয়েন্দাদের তলবে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার কথা ছিল ১৪ আমদানিকারককে। এদের মধ্যে ৪ জন অনুপস্থিত ছিলেন।
যারা হাজির হয়েছেন তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি করার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিলো। এছাড়া পিয়াজ মজুত আছে কিনা এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানিয়েছেন, যে দামে আমদানি করা হয়েছে তার থেকে ২ টাকা লাভ ধরে ১ দিনের ভেতরে সমস্ত পিয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মজুতের কোনো সুযোগ নাই।
আবারও পিয়াজের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে: রাজধানীর পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার ঘুরে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, পিয়াজের সরবরাহ খুব কম। সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বাজার বা কৃষকের ঘরে নেই পুরনো দেশি পিয়াজ। দেশি নতুন পিয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, খুচরা বাজারভেদে পিয়াজের কেজি সর্বশেষ ২৭০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে। পিয়াজ সংকট কাটাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়। তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি শুরু হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কার্গো বিমানে পিয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। দ্রুত সময়ে সরকারি উদ্যোগ নেয়ায় কমতে থাকে দাম। ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পিয়াজের দর। কিন্তু আবারও অস্থিতিশীল’ হয়ে উঠছে পিয়াজের বাজার।
এদিকে যে ৪১ আমদানীকারককে তলব করা হয়েছে, এদের মধ্যে সাতক্ষীরা বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মধ্যে নূর এন্টারপ্রাইজ এর শাহীন (ভোমরা, সাতক্ষীরা), ফারহা এন্টারপ্রাইজের (সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর) ফিরোজ, মুক্তি এন্টারপ্রাইজের (গাংনিয়া, সাতক্ষীরা সদর) জাফর আলীর নাম জানা গেছে।

Check Also

সাতক্ষীরায় ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এসময় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।