ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশের পর থেকে যে সব বিদেশি সাংবাদিক আসাম নিয়ে খবর সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তাদের আসামে ঢুকতে বাধা দিতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে ওই তালিকা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য।
গুয়াহাটির প্রবীণ সাংবাদিক রাজীব ভট্টাচার্যের দায়ের করা তথ্য অধিকার আইনের আওতায় এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, আসাম সফরের ভিসার জন্য আবেদন করা সাত বিদেশি সাংবাদিকের আবেদন এখন সরকারের একটি ‘সংশ্লিষ্ট’ বিভাগ পরীক্ষা করে দেখছে। সাংবাদিকদের জাতীয়তা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বিষয়ে তথ্য ‘পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে তিনি এনডিটিভি’কে বলেন, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে আমি খুব একটা অবাক হইনি যে, বিদেশি মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কয়েক মাস এবং আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। তবে ফলাফল অন্যান্য উপাদানের ওপরও নির্ভর করতে পারে।
রাজীব আরও বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, নির্বাচনে জয়লাভই একমাত্র পরিকল্পনা। কোনও কিছুর মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। সব কিছুই নির্দিষ্ট একটা উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। এর ফলেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জম্মু-কাশ্মির বা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোসহ সুরক্ষিত অঞ্চলগুলোতে যেতে আগ্রহী বিদেশি সাংবাদিকদের একটি বিশেষ অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে।
পরে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এটি সব বিদেশি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ওই সংবাদকর্মীর ভারতের ভেতরে কিংবা বাইরে যেখানেই অবস্থান করেন না কেন; তা বিবেচ্য নয়।
ভারতে অবশ্য বিদেশি (সুরক্ষিত অঞ্চল) আদেশ ১৯৫৮ বা বিদেশি (সীমাবদ্ধ অঞ্চল) আদেশ ১৯৬৩-এর আওতাভুক্ত রাজ্যগুলোতে ভ্রমণে অভারতীয়দের প্রোটেক্টেড এরিয়া পারমিট (পিএপি) বা রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া পারমিট (আরএপি) নিতে হয়। তবে আসাম এর আওতায় পড়ে না।
এদিকে সারাদেশের পাশাপাশি আসামে নতুন করে এনআরসি করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দিল্লি। গত সপ্তাহেই ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই আসামে এনআরসি করা হয়েছে। দেশজুড়েই এটি করা হবে। আসামে আবারও করা হবে। কোনও ধর্মের কারও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ নয়। এমন সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন যার কদিন আগেই আসামের নাগরিকপঞ্জিকে সেখানকার ‘মুসলিমদের দেশছাড়া করার হাতিয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইস্যু ব্রিফ: ইন্ডিয়া’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এমন মনোভাবের কথা জানায় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা তদারককারী এই মার্কিন কমিশন।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) প্রথম খসড়া প্রকাশ করা হয়। সেখানে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের ঠাঁই হয়। অথচ আবেদন করেছিল তিন কোটি ২৯ লাখ মানুষ।
এরপর চলতি বছরের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি) যেখান থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও দিল্লি দাবি, এই নাগরিকপঞ্জিকে একটি ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়া।
ইউএসসিআইআরএফ জানিয়েছে, আসামের এনআরসি নিয়ে ইতোমধ্যেই একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের উদ্বেগ সেখানকার বাঙালি মুসলমানদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে, নাগরিকত্বের জন্য একটি ধর্মীয় অপরিহার্যতা প্রতিষ্ঠা করতে এবং মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত করার উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দিল্লি।