ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ: সাতক্ষীরা: সন্ত্রাসী সৈয়দ সাদিকুর রহমান ও তার দেহরক্ষী বাহিনীর কারণে শহরের সরকারি মহিলা কলেজ ও নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতো না। কখন তার বাহিনী কার হাত ধরে টানে কিংবা উত্ত্যক্ত করে এমনকি তুলে নিয়ে যায় এমন আতংকেই থাকতো তারা। এ কারণে তারা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করতো। কোনো কোনো ছাত্রী বোরকা ব্যবহার করে নিজেদের আড়াল করে স্কুল কলেজে চলাফেরা করে। এমনকি তাদের নিরাপত্তার জন্য অভিভাবকরা তাদের সাথে যাতায়াত শুরু করেন।
সৈয়দ সাদিকুরের দুই দেহরক্ষী আস্ত্রধারী ক্যাডার সাইফুল ইসলাম ও মামুনুল ইসলাম দীপ গত ২৯ নভেম্বর রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পর এসব কথা বেরিয়ে আসছে। এরই মধ্যে নিহতদের গডফাদার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান বিকাশ এজেন্টের ২৬ লাখ টাকার ২২ লাখ নিয়েই পালিয়ে গেছে। বাকি টাকা তার অনুসারীদের মধ্যে কমবেশি করে বিতরন করেছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে সাদিকুর বাহিনী আরও একাধিক এজেন্ট ব্যাংকে হামলার ছক কষছিল। এই হামলায় পাওয়া টাকা ও আগের টাকা নিয়ে তার অনুসারীদের মধ্যে বন্টনের পরিকল্পনার কথাও সে জানিয়েছিল তাদের। তার আগেই দুই ক্যাডার ধরা পড়ে যাওয়ায় সেসব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে সৈয়দ সাদিকুর ও তার বাহিনী কোনো ঘটনা ঘটানোর সময় তাদের ব্যবহৃত ফোনগুলি ব্যবহার করতো না। নতুন কোনো ফোন ও সিম কিনে কেবলমাত্র তা নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার শেষে সিম ফেলে দিয়ে মোবাইলও ভেঙেচুরে ফেলতো। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে গত ৩ আগস্ট শহরের অদুরে মাছখোলায় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আইউব আলির নিঃসন্তান বিধবা স্ত্রী হোসনে আরার জমি চুক্তি ভিত্তিক দখল করে অন্যের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে সাদিকুর বাহিনীর হামলার সময় তার দেহরক্ষী সাইফুলের কাছে থাকা অস্ত্রের গুলিতে আহত হয় পৌর আওয়ামী লীগ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ফারাবি। বিষয়টি সেম সাইড বলে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি।
সাদিকুর জেলার বিভিন্ন স্থানে তার বাহিনী সদস্যদের পাহারায় বসাতো। কে ফেন্সিডিল আনছে কে কখন সোনা পাচার করছে এ তথ্য দ্রুত চলে আসতো তার কাছে। খবর আসতেই সাদিকুর হামলা করে তা ছিনতাইয়ের ছক কষতো। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হতো। সাতক্ষীরায় চোরাচালানের জন্য নিয়ে আসা স্বর্ণের একটি বড় চালান সম্প্রতি সৈয়দ সাদিকুর ও তার বাহিনী অস্ত্র দেখিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে। এমন কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ অবহিত হয়ে তদন্ত্র শুরু করেছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়ে সে কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে। ঢাকায় রয়েছে তার অঢেল সম্পদ। ঢাকার কোথায় কোন বিলাসবহুল বাড়িতে সে থাকে তারও খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ। তার কাছে সব সময় থাকে অস্ত্র। কেউ কোনো প্রতিবাদী ভাষা দিলেই তাকে পিটিয়ে সাইজ করতো সাদিকুর ও তার বাহিনী। এমনকি তাকে গুলি করতেও পিছ পা হতো। সাম্প্রতিককালে শহরে এমন একাধিক গুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
মুনজিতপুরে সৈয়দ সাদিকুরের বাড়িতে ছিল শহরের কিছু তরুণীর অবাধ যাতায়াত, এমনকি রাত্রিযাপনও। দিবাভাগে তারা সাদিকুর ও তার বাহিনীকে নিয়ে আনন্দ ফূর্তিতে মেতে থাকতো। তার বাড়িতেই গড়ে ওঠে বালাখানা। পরিবারের পক্ষ থেকে সাদিকুরের এই কাজে বাধা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। সাদিকুর পুরোপুরি একজন মাদকাসক্ত যুবক। তার কথাবার্তা ও চলন ফেরনে সব সময় তা প্রকাশ পেয়েছে। দিবাভাগে তাকে খুব কমই দেখা যায়। রাত হতেই দেখা যায় তার ও তার ক্যাডারদের ভয়ংকর দাপট। তার বাহিনীকেও সে মাদকসেবী করে তুলেছে। একই মজমায় বসে গুরু শিষ্যের মাদক সেবনের কাহিনী শোনা যায় সাদিকুরের অনুসারীদের মুখ থেকেও।
সাদিকুরের বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়ে অনেক মেয়ে সাতক্ষীরা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সাদিকুর ও তার দেহরক্ষী সাইফুল এমন কতো মেয়ের সর্বনাশ করেছে তার হিসাব নেই বলে জানিয়েছে তারই ঘনিষ্ঠ কর্মীরা। সোহাগ নামের যে স্কুল দপ্তরী খুন হয়েছিল তাও ছিল নারী ঘটিত বিষয় কেন্দ্রিক। এ বিষয়টি জানিয়েছে সাদিকুরের ঘনিষ্ঠজনেরা।
৪০ লাখ টাকা ব্যয় করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি সাবেক কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে দুই বছর আগে কিনে নিয়েছিল সৈয়দ সাদিকুর। আর এই টাকা তুলতে সে জেলাব্যাপী উপজেলা কমিটি তৈরি করে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব কমিটি গঠনের দুই তিনমাস পর নতুন কমিটির কাছ থেকে ফের টাকা নিয়ে আরেক কমিটি দিয়েছে সাদিকুর। এমনকি কমিটি বহাল রাখার কথা বলেও সে আদায় করেছে টাকা। সম্প্রতি জেলার নতুন কমিটি গঠনে সৈয়দ সাদিকুর স্বপদে বহাল থাকবেন এমন কথা বলেও সাদিকুর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির কাছ থেকেও টাকা আদায় করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সৈয়দ সাদিকুরের এসব কীর্তি কেলেংকারী নিয়ে এখন শহরের মোড়ে মোড়ে আলোচনা হচ্ছে। এসবের সত্য মিথ্যা নিয়ে যাচাই বাছাইও চলছে। জেলা ছাত্রলীগের মতো এমন একটি সংগঠনে সৈয়দ সাদিকুরের মতো একজন চাঁদাবাজ ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মাদকাসক্ত অপদার্থ যুবক সেক্রেটারির পদ কিভাবে লাভ করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এমনকি এতোসব কীর্তি কেলেংকারীর পরও সে কিভাবে ওই পদে বহাল রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের।
সৈয়দ সাদিকুর এখন পলাতক। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
Check Also
আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …